• facebook
  • twitter
Saturday, 23 November, 2024

রাজ্যের নাম বাংলা খারিজ মোদি সরকারের

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকার চাইলেও পশ্চিমবঙ্গের নাম পরিবর্তন করে 'বাংলা' করার প্রস্তাব এখনও সায় দেয়নি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (File Photo: IANS)

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকার চাইলেও পশ্চিমবঙ্গের নাম পরিবর্তন করে ‘বাংলা’ করার প্রস্তাব এখনও সায় দেয়নি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক। এ ব্যাপারে বিশেষ অগ্রগতি যে হয়নি তা বুধবার রাজ্যসভায় তা জানিয়ে দিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিত্যানন্দ রাই।

এক লিখিত প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রাজ্যের নাম পরিবর্তনের জন্য সংবিধান সংশােধন বিল পাশ করাতে হয়। তা এখনও হয়নি। যদিও তাঁর এই মন্তব্যকে কেন্দ্র করেই এ দিন সকালে রাজ্য রাজনীতিতে এক প্রস্থ ঝড় ওঠে।

এক শ্রেণির সংবাদমাধ্যমে বলা হয়, পশ্চিমবঙ্গের নাম পরিবর্তন করার প্রস্তাব খারিজ করে দিয়েছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক তথা মােদি সরকার। তা নিয়ে বুদ্ধিজীবীদের একাংশ প্রতিক্রিয়া দিতে শুরু করেন।

আবার তাঁদের মধ্যেও বিভাজন দেখা যায়। কেউ রাজ্যের নাম পরিবর্তন করে ‘বাংলা’ করার পক্ষে সওয়াল করেন, কেউ বলেন আইন অমান্য আন্দোলনের মতােই একটা মুভমেন্ট শুরু করা হেক। বলা হােক , আমরা এখন থেকে রাজ্যের নাম ‘বাংলা’ই বলব। কেউ আবার বলেন, রাজ্যের নাম হওয়া উচিত বঙ্গ।

অথচ বাস্তবটা একেবারে ছিল অন্যরকম। নাম পরিবর্তনের প্রস্তাব যে কেন্দ্র খারিজ করেছে তা একবারও বলেননি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী। তবে তাঁর কথা থেকে বােঝা গিয়েছে, এ ব্যাপারে কেন্দ্র দীর্ঘসুত্রিতা করছে। তার পিছনে রাজনৈতিক কারণ থাকাও অসম্ভব নয়।

কারণ, রাজ্য বিজেপি নেতারাই বাংলার নাম পরিবর্তনের বিরুদ্ধে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের কাছে ওই প্রশ্নটি করেছিলেন রাজ্যসভার সাংসদ ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর প্রশ্ন ছিল- ‘এটা কি ঠিক যে পশ্চিমবঙ্গ সরকার পশ্চিমবঙ্গের নাম পরিবর্তন করে ‘বাংলা’ করার যে প্রস্তাব দিয়েছে তাতে কেন্দ্রীয় সরকার অনুমােদন দিয়েছে? যদি তাই হয়, তা হলে তা সবিস্তারে জানান। যদি না হয়, তা হলেই বা তার কারণ কী?’

ওই প্রশ্নের লিখিত জবাবে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিত্যানন্দ রাই জানিয়েছেন, ‘না স্যার’। অর্থাৎ নাম পরিবর্তনের প্রস্তাবে কেন্দ্রীয় সরকার এখনও অনুমােদন দেয়নি। সাংসদের দ্বিতীয় প্রশ্নের জবাবে তিনি লিখেছেন, ‘প্রশ্নই ওঠে না’। মানে, কেন্দ্রীয় সরকার যখন অনুমােন দেয়নি তখন সবিস্তারে জানানাের প্রশ্নই ওঠে না।

এর পরেই কার্যকারণ ব্যাখ্যা করে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী জবাবে লিখেছেন, ‘কোনও রাজ্যের নাম পরিবর্তন করতে গেলে সবদিক বিবেচনা করে সংবিধান সংশােধন করতে হয়। পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই রাজ্যের নাম পরিবর্তনের ব্যাপারে উদ্যোগী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

প্রথমে এ ব্যাপারে ন্ধিানসভায় একটি লি পাশ করা হয়। তাতে বলা হয়, রাজ্যের নাম পরিবর্তন করে ‘বাংলা’ করা হােক, ইংরেজিতে বলা হবে ‘বেঙ্গল’। কিন্তু তখন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক জানায়, নাম একটাই হবে। বাংলা হােক বা ইংরেজি।

সেই মােতাবেক বিধানসভায় বিল পাশ করে প্রস্তাব পাঠান। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের ওই পরামর্শের পর ফের বিধানসভায় প্রস্তাব আনা হয়। বলা হয়, রাজ্যের নাম পাল্টে ‘বাংলা’ করা হােক।

প্রস্তাবটি গত বছর বিধানসভায় পাশ হওয়ার তৎকালীন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংকে ফোন করেন মুখ্যমন্ত্র । রাজনাথও বিষয়টি দেখার আশ্বাস দেন। কেন্দ্রে মােদির দ্বিতীয় ইনিংসে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পদে মমতার রাজনৈতিক বন্ধু রাজনাথ আর নেই।

এখন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। যার সঙ্গে দিদির রাজনৈতিক সম্পর্ক খুব একটা বন্ধুত্বপূর্ণ নয়। তাছাড়া রাজ্যের নাম পশ্চিমবঙ্গই রাখার ব্যাপারে বিজেপি রাজ্য নেতৃত্বের পৃথক যুক্তি রয়েছে।

এ ব্যাপারে অতীতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকে ডেপুটেশনও দিয়েছিলেন তাঁরা। পর্যবেক্ষকদের মতে, রাজ্যের নাম পরিবর্তন করে বাঙালি আবেগকে ছুঁতে চেয়েছিলেন দিদি। তার নেপথ্যে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ছিল। বিজেপি-ও পাল্টা রাজনীতিই করছে।

বাম আমলে শুরু হয়েছিল রাজ্যের নাম বদলের উদ্যোগ। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা বেশি দূর গড়ায়নি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও ক্ষমতায় আসার পর চেয়েছিলেন পশ্চিমবঙ্গের নাম বদলাতে। কিন্তু যে কোনও কারণেই বিষয়টা ধামাচাপাই ছিল। কিন্তু দ্বিতীয় ইনিংসের গােড়াতেই হঠাৎ নাম পরিবর্তনের প্রক্রিয়াটি এগিয়ে নিয়ে যান মুখ্যমন্ত্রী।

২০১৬ সালের অক্টেৰ্ব্ব মাসে রাজ্য মন্ত্রিসভায় পশ্চিমবঙ্গ নাম বদলে ফেলার প্রস্তাব পাস করিয়ে নেন তিনি।

রাজ্য সরকারের বক্তব্য ছিল, প্রধানমন্ত্রীর ডাকা বৈঠকে বরাবরই পশ্চিমবঙ্গের ডাক পড়ে একদম শেষে। কারণ ইংরেজি বর্ণমালা অনুযায়ী রাজ্যগুলাের নাম ধরে ধরে বলার সুযােগ দেওয়া হয়।

এ রাজ্যের ইংরেজি নাম ওয়েস্ট বেঙ্গল শুরু ডব্লিউ অক্ষর দিয়ে। ফলে ডাক আসে একদম শেষে। একে দীর্ঘ অপেক্ষা তার উপর প্রথম দিকের বক্তারা বেশি সময় নিয়ে ফেলায় শেষের বক্তাদের নির্ধারিত সময় কমে যায়।

তা ছাড়া শেষ দিকে অনেকটা শিথিল হয়ে আসে সভার মনােভাব। সেই কারণেই রাজ্যের নাম বাংলা করার প্রস্তাব দেওয়া হয় কেন্দ্রকে। মুখ্যমন্ত্রী নিজে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংকে ফোনে জানান, এটা রাজ্যের আবেগের ব্যাপার। দ্রুত বিষয়টি দেখুন।

রাজনাথও বিষয়টি দেখার আশ্বাস দিয়েছিলেন বলে তৃণমূলের তরফে দাবি করা হয়।

এদিকে, বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘােষ চেয়েছিলেন রাজ্যের নাম পশ্চিমবঙ্গই থাকুক। বুধবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক জানিয়েছে, পশ্চিমবঙ্গের নাম বদলের কোনও প্রশ্নই উঠছে না।

কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্ত শােনার পর সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখােপাধ্যায় বলেন, ‘আমি খুব হতাশ হলাম। জন্মে থেকে আমাদের রাজ্যকে বাংলা বলেই জানি পরে পশ্চিমবঙ্গ করা হয়েছিল। কেন্দ্রীয় সরকার কেন খারিজ করল সেটা জানি না। তবে কাজটা ঠিক হল না’।