আর মাত্র দেড় বছর। তারপরই রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন। ইতিমধ্যেই নির্বাচনকে মাথায় রেখে ময়দানে নেমে পড়েছে শাসক-বিরোধী শিবির। তারই মধ্যে বিপত্তি! বসিরহাট উত্তরের তৃণমূল বিধায়ক রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে পড়ল ‘সন্ধান চাই’ পোস্টার। আর তা ঘিরেই তুমুল শোরগোল গোটা এলাকায়। ‘তৃণমূল কংগ্রেস সম্মান রক্ষা কমিটি’ নামে ওই পোস্টার দেওয়া হয়েছে। এই পোস্টার তৃণমূলের কেউ দেয়নি বলে দাবি করেছেন দলের ব্লক সভাপতি। সিপিএমের বক্তব্য, এটা তৃণমূলের অন্তর্দ্বন্দ্বের ফল।
বসিরহাট উত্তর বিধানসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত মুরারিশাতেই বিভিন্ন এলাকায় বিধায়কের ছবি-সহ ‘সন্ধান চাই’ পোস্টার পড়েছে। সেই পোস্টারে লেখা, এই ব্যক্তির নাম রফিকুল ইসলাম। পেশায় বসিরহাট উত্তরের বিধায়ক। আগে বিধানসভায় যেতেন লাল পোশাকে, পরবর্তীতে সবুজ পোশাকে। বিধানসভা ভোটের পর থেকে এঁকে আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এনার দুই বিয়ে, দুই স্ত্রীর কাছেও কোনও খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। যদি কেউ এনাকে পেয়ে থাকেন দয়া করে – ০১২৩৪৫৬৭৮৯০ এই নম্বরে ফোন করবেন।
এক সময় সিপিএম করতেন রফিকুল ইসলাম। বামেদের টিকিটে বিধায়কও হয়েছিলেন তিনি। রাজ্যজুড়ে তৃণমূল ঝড় চললেও
২০১৬ সালের বসিরহাট উত্তরে কাস্তে-হাতুরি প্রতীকে জয় হাসিল করেন তিনি। পরে অবশ্য হাওয়া বুঝে তৃণমূলে যোগ দেন। ২০২১ সালে একই আসন থেকে তৃণমূল কংগ্রেসের টিকিটে জয়ী হন তিনি। অভিযোগ, ভোটে জেতার পর থেকেই কার্যত ভ্যানিস হয়ে গিয়েছেন রফিকুল। ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনে প্রচারে কয়েকদিন আসলেও তারপর থেকে এলাকায় আর দেখতে পাওয়া যায়নি তৃণমূল বিধায়ককে।
এই পোস্টার ঘিরে রাজনৈতিক চাপানউতোর শুরু হয়েছে এলাকায়। বিধায়ক রফিকুল ইসলামের বক্তব্য, ‘তৃণমূল কংগ্রেস সম্মান রক্ষা কমিটি’ বলে কোনও কমিটি অস্তিত্ব নেই। এরা কেউই তৃণমূলের নন। এখানকার মানুষ আমাকে দু’বার বিধায়ক করেছেন। তৃণমূল দলগত ভাবে তাঁর উপর ভরসা বলে দাবি করেছেন রফিকুল। তৃণমূলের হাসনাবাদ ব্লক সভাপতি এস্কেন্দার গাজি বলেন, এই পোস্টারের সঙ্গে তৃণমূলের কোনও সম্ভাবনা নেই। সিপিএমের লোকজন এসব করেছে বলে দাবি করেন তিনি। গত ৩০ অক্টোবর বিধায়কের বাড়ির পাশে তৃণমূল বিজয়া সম্মেলন হলেও সেখানে শফিকুল উপস্থিত ছিলেন না বলে জানান এস্কেন্দার গাজি।
হাসনাবাদ পঞ্চায়েত সমিতির প্রাক্তন সভাপতি তথা সিপিএমের প্রাক্তন জেলা কমিটির সদস্য সুবিদ আলি গাজী এই ঘটনাকে ‘তৃণমূলের অন্তর্দ্বন্দ্ব’ বলে উল্লেখ করেছেন। তাঁর কথায়, আর কয়েক মাস পরেই বসিরহাট লোকসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচন। রফিকুল ইসলাম যাতে বসিরহাট উপনির্বাচনের প্রার্থী না হতে পারেন, তার জন্য এটা করেছে তৃণমূল।
তৃণমূল বিধায়কের নামে নিখোঁজ পোস্টার পড়ার ঘটনা অবশ্য একেবারেই নতুন নয়। চলতি বছর মার্চ মাসে উত্তরপাড়ার তৃণমূল বিধায়ক কাঞ্চন মল্লিকের নামে নিখোঁজ পোস্টার পড়ে হিন্দমোটর অঞ্চলে। অভিযোগ ওঠে, অভিনেতা কাঞ্চন উত্তরপাড়ার বিধায়ক হওয়ার পর তাঁকে বিধানসভা এলাকায় খুব একটা দেখা যায় না। কাঞ্চন অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করে দাবি করেন, বিধায়কের নির্দিষ্ট জায়গা, নির্দিষ্ট অফিস থাকে, সেখানে আমি বসি এবং পরিষেবা দিই।