ডিভিসির ছাড়া জলে রাজ্য জুড়ে চিন্তা বাড়াচ্ছে বন্যা পরিস্থিতি, মোকাবিলায় মাঠে নামলেন মন্ত্রীরা! ভাগ করে দেওয়া হল দায়িত্ব। পূর্ব বর্ধমান জেলার ব্যাপক অংশে বন্যা দেখা দিয়েছে। বিশেষ ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন চারটি ব্লকের মানুষ। জেলা প্রশাসনের পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে রাজ্যের তরফেও দুর্গত মানুষের সাহায্যের জন্য মন্ত্রী ও আধিকারিকরা কাজে নেমে পড়েছেন। বিভিন্ন এলাকায় পরিদর্শন ছাড়াও জরুরি বৈঠক ডেকে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় বন্যা মোকাবেলা চলছে। এরই মধ্যে রাজ্যের পাঁচ মন্ত্রী বর্ধমানে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে বসেন। সেচ দপ্তরের আধিকারিকদের সঙ্গে বসা ওই বৈঠকে জেলা প্রশাসনের আধিকারিকরা ছাড়াও জনপ্রতিনিধিরা হাজির ছিলেন। বৈঠকের পর মন্ত্রীরা সব অঞ্চলের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা নেবার জন্য বলেন।
বন্যা নিয়ে সেচ দপ্তরের আধিকারিকদের নিয়ে বর্ধমানের জেলা শাসক দপ্তরে এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বিশেষ করে জামালপুর,রায়না, খণ্ডঘোষ ,গলসি ব্লকের ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরা হয়। সেখানে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের পাঁচ মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, প্রদীপ মজুমদার, মানস ভুঁইয়া, সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী এবং স্বপন দেবনাথ। বৈঠকে পূর্ব বর্ধমান জেলা শাসক, পুলিশ সুপার, ও স্থানীয় বিধায়কেরাও উপস্থিত ছিলেন। মূলত ডিভিসি থেকে ছাড়া অতিরিক্ত জল এবং তার ফলে সৃষ্ট বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়। বৈঠকের শুরু থেকেই সেচমন্ত্রী মানস ভুঁইয়া কড়া ভাষায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন ইঞ্জিনিয়ারদের উদ্যেশে। একাধিক প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়ে তিনি ইঞ্জিনিয়ারদের ত্রুটিপূর্ণ ব্যবস্থাপনা এবং বন্যার কারণ সম্পর্কে জবাবদিহির দাবি করেন। প্রায় দু’ঘণ্টার বৈঠকে একের পর এক কঠিন প্রশ্ন তুলে ধরেন, যা প্রমাণ করে তিনি পরিস্থিতি নিয়ে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। মন্ত্রী মানস ভুঁইয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দ্রুত পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘মুখ্যমন্ত্রী বাংলার মানুষের কষ্ট সহ্য করতে পারেন না। ডিভিসি থেকে প্রায় ৩.৫ লক্ষ কিউসেক জল ছাড়া হয়েছে, যা বাংলা ও বাংলার কৃষিকে ধ্বংস করার চেষ্টা’। মুখ্যমন্ত্রী এই বিষয়ে ডিভিসি কর্তৃপক্ষ, ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী এবং দিল্লি সরকারের সঙ্গে বারবার যোগাযোগ করেছেন, কিন্তু তা সত্ত্বেও কোনও সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি বলে দাবি করেন মানস ভুঁইয়া। একই সঙ্গে রায়না ব্লকের দেবখালের পাড় ভাঙ্গনের বিষয়টি নিয়ে সদুত্তর না পেয়ে এক ইঞ্জিনিয়ার কে সরাসরি ভর্ৎসনা করেন। যদিও মানস ভুঁইয়া বর্ধমানের জেলা প্রশাসন, পঞ্চায়েত সমিতি, গ্রাম পঞ্চায়েতের একত্রে কাজ করার সাফল্য নিয়ে দাবি করেছেন। এদিকে গতকাল রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, স্বপন দেবনাথ জামালপুর ছাড়াও রায়নার বেশ কয়েকটি এলাকায় যান। এলাকায় পরিদর্শন করেন রাজ্যের পঞ্চায়েত মন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার। দিনভর তাঁদের সঙ্গে ছিলেন জেলা পরিষদের সভাধিপতি শ্যামা প্রসন্ন লোহার, জেলা তৃনমূল কংগ্রেসের সভাপতি তথা বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়,জেলা যুব তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি রাসবিহারী হালদার, জেলা শাসক প্রসেনজিৎ দাস, মহকুমা শাসক বুদ্ধদেব পান। ত্রাণ শিবিরে মন্ত্রীদের সব রকমের সহযোগিতা করেন জামালপুরের বিডিও পার্থ সারথি দে, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি পূর্ণিমা মালিক,সহ সভাপতি ভূতনাথ মালিক, পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ মেহেমুদ খান সহ অন্যান্যরা। অরূপ বিশ্বাস ডিভিসি কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেন। বলেন পূর্ব বর্ধমান জেলায় ব্যাপক অংশে ফসলের ক্ষতি হয়েছে। এর জন্য শস্য বীমা করার জন্য পরামর্শ দেন। বীমার টাকা যাতে চাষীরা যাতে পান তার জন্য তিনি ব্যবস্থা করবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন। মন্ত্রীর পাশাপাশি এদিন চাষিরা যাতে ফসলের ক্ষতিপূরণ পেতে পারেন তার জন্য আবেদন রাখেন জেলা পরিষদের অধ্যক্ষ অপার্থিব ইসলাম। একই দাবিতে সোচ্চার হয়েছেন ওয়েস্ট বেঙ্গল ট্রেড এন্ড ট্রেডার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সহকারী সভাপতি বিশ্বেশ্বর চৌধুরী। তিনি বলেন রাজ্য সরকার উদ্যোগ নিয়ে চাষিদের বীমার টাকা পাইয়ে দিলে ভালো হয়।
এখনও জামালপুরের কারালাঘাট থেকে বেরুগ্রাম পর্যন্ত জলমগ্ন। বেশ কিছু এলাকায় অবশ্য শুক্রবার সকাল থেকে জল কমতে শুরু করেছে। তবে বিভিন্ন ত্রাণ শিবিরে থাকা মানুষকে সব রকমের সহযোগিতা করা হচ্ছে পঞ্চায়েত সমিতির পক্ষ থেকে। পঞ্চায়েত মন্ত্রী দাবি করেছেন বলরামপুরে রেল লাইনের ধারে ভাঙ্গন দেখা দেওয়ায় বিপদের আশংকা রয়েছে। এদিকে জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে পূর্ব বর্ধমানে ১৯৩ টি রাস্তার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বিদ্যুৎ দপ্তরের ১৮ টি ট্রান্সফরমার ও প্রায় ৫০ টি খুঁটির ক্ষতি হয়েছে। মন্ত্রী দের বৈঠকে দ্রুত সব কিছু স্বাভাবিক করার কাজ শুরু করতে বলা হয়েছে। জল নেমে গেলে রাস্তা মেরামত করে যানবাহন চলাচলের উপযোগী করার কাজও হবে বলে আশ্বাস দেওয়া হয়।