এরাজ্যের বীরভূম জেলা সীমানার বিস্তীর্ণ এলাকার ওপাশে রয়েছে ঝাড়খণ্ড রাজ্য সীমানা। তার উত্তরে রয়েছে বিহার, দক্ষিণে ওড়িশা, পশ্চিমে ছত্তিশগড় ও পূর্বে পশ্চিমবঙ্গ। যে সীমানার বিস্তীর্ণ অঞ্চল রীতিমতো পাহাড়-জঙ্গলে ঘেরা। আর এই সুযোগকে কাজে লাগিয়েই দুষ্কৃতকারীরা এরাজ্যের বীরভূমকে করিডর হিসেবে ব্যবহার করে কয়লা, গোরু থেকে শুরু করে মুর্শিদাবাদ হয়ে সীমান্ত পার করে মাদক পাচার করছে বলে বার বার অভিযোগ উঠেছে। ঘটনার জেরে বহু দুষ্কৃতি গ্রেপ্তার হলেও, অধিকাংশই অধরা থেকে যাচ্ছে। রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম সরাসরি অভিযোগ করে জানিয়েছেন, ঝাড়খণ্ড থেকে আগ্নেয়াস্ত্র-সহ দুষ্কৃতকারীরা এরাজ্যের বীরভূমে ঢুকে যাচ্ছে। মন্ত্রীর এই অভিযোগকে কেন্দ্র করে প্রশাসনিক মহলে তোলপাড় শুরু হয়ে যায়। প্রশ্ন ওঠে, এক শ্রেণির পুলিশ অফিসারের ভূমিকা নিয়েও।
তারপরই ঝাড়খণ্ড রাজ্য সীমানার বীরভূম জেলার মুরারই থানার ওসি মহম্মদ সাকিবকে গত ১৩ ডিসেম্বর সিউড়ী পুলিশ লাইনে ক্লোজ করে দেওয়া হয়। এই ঘটনার কারণ হিসেবে জানা গিয়েছিলো যে, ওই সময় মেদিনীপুর জেলা পুলিশ আটটি আলু বোঝাই লরি আটক করে এবং কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করে জানতে পারে যে, মুরারই সীমানা হয়েই ওই আলুবোঝাই লরিগুলি ঝাড়খণ্ডে পাঠাবার ব্যবস্থা করা হয়েছিলো। ওই ঘটনায় পুলিশের অভ্যন্তরীণ তদন্তে মুরারই থানার ওসি মহম্মদ সাকিকের ভূমিকা প্রশ্নের মুখে পড়ে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতেই তাঁকে সিউড়ী পুলিশ লাইনে ক্লোজ করা হয়। কিন্তু তারপরেই ঝাড়খণ্ড রাজ্য সীমানায় কেন কয়লা, গোরু থেকে শুরু করে আগ্নেয়াস্ত্র পাচার ঠেকানো যাচ্ছে না, সেই প্রশ্নও জোরালোভাবে উঠছে।
ঝাড়খণ্ড রাজ্য সীমানার গুরুত্বপূর্ণ মুরারই থানার ওসি মহম্মদ সাকিবকে সিউড়ী পুলিশ লাইনে ক্লোজ করার পরে, ওই গুরুত্বপূর্ণ থানায় দক্ষ কোনও ওসি না পাঠিয়ে জেলা ট্রাফিক ও রোড সেফটি, হেডকোয়ার্টার অফিসার তন্ময় ঘোষকে মুরারই থানার অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তাতেও সমস্যার সমাধান হয়নি। আর এই পরিস্থিতিতে এবার ‘দক্ষ কোনও পুলিশ অফিসারের’ উপরে ভরসা ও আস্থা রাখতে না পেরে ওই রাজ্য সীমান্ত এলাকায় মুরারই-ঝাড়খণ্ড রাজ্য সীমানার দু’টি রাস্তায় মোট সাতটি সিসিটিভি ক্যামেরা বসিয়ে তার মাধ্যমেই নজরদারি চালাবার ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এতদিন পর্যন্ত পুলিশ প্রশাসনের বসানো সিসিটিভি ক্যামেরায় নজরদারি চালাতেন সীমান্তে কর্মরত পুলিশ কর্মীরা। এরফলে পুলিশের কর্তারা সঠিক তথ্য পাচ্ছিলেন বলেও মারাত্মক অভিযোগ পাওয়া যায়। তাই এবারের বসানো বিশেষ প্রযুক্তির সিসিটিভি ক্যামেরায় থানায় বসেই আধিকারিকরা নজরদারি চালাতে পারছেন বলেই জানা যাচ্ছে।