আন্তর্জাতিক শহরের মান ধরে রাখতে তৎপরতা শুরু
খায়রুল আনাম: আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন বোলপুর শহর শান্তিনিকেতনের প্রবেশ পথ হিসেবে চিহ্নিত। বোলপুরের পথ মাড়িয়েই শান্তিনিকেতনে আসা যাওয়া করেছেন মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর থেকে শুরু করে মহর্ষি পুত্র রবীন্দ্রনাথ, মহাত্মা গান্ধী, সীমান্ত গান্ধী খান আব্দুল গফফর খান, নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু, ইন্দিরা গান্ধী থেকে শুরু করে বিশ্বের বহু বরেণ্য মানুষ। শান্তিনিকেতনের সাথে সাথে গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্বপ্নের বিশ্বভারতীকে সমৃদ্ধির আলোয় পৌঁছে দিতে এই পথেই এসেছেন লিওনাদ এলমহার্স্ট, ডরোথী থেকে শুরু করে দীনবন্ধু এন্ড্রুুজ প্রমুখ। ক্রান্তিদর্শী রবীন্দ্রনাথও মনে করতেন, তাঁর স্বপ্নের বিশ্বভারতী বেঁচে থাকলে শ্রীনিকেতনে আধার করেই বেঁচে থাকবে। আর সেই ভাবনার দিকে দৃষ্টি দিয়েই প্রয়াত সোমনাথ চট্টোপাধ্যায় বোলপুরের সাংসদ থাকাকালীন সময়ে গুরুদেব রবীন্দ্রনাথের শ্রীনিকেতনের ভাবনাকে প্রাধান্য দিয়ে প্রথম গঠন করেন শ্রীনিকেতন-শান্তিনিকেতন উন্নয়ন পর্ষদ। যা সবার কাছে এসএসডিএ নামেই পরিচিত। সোমনাথ চট্টোপাধ্যায় এই উন্নয়ন পর্ষদের প্রথম চেয়ারম্যান হিসেবে এই উন্নয়ন পর্ষদের অন্তর্ভুক্ত এলাকাকে একটা সার্বিক উন্নয়নের রূপরেখায় নিয়ে আসার যে কাজ শুরু করেছিলেন, সেই ধারা কিছুটা সফল আবার কিছুটা ব্যর্থতার মধ্যেও ডুবে গিয়েছে।
বর্তমান সময়ে শ্রীনিকেতন-শান্তিনিকেতন উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান তথা বোলপুরের বিধায়ক ও রাজ্যের মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ এই উন্নয়ন পর্ষদকে গঠনমূলক কর্মসূচির মধ্যে দিয়ে একটা ভিন্নতর মাত্রায় নিয়ে যেতে চাইছেন। ইতিমধ্যেই বোলপুর পৌরসভার ওয়ার্ড বৃদ্ধির মধ্যে দিয়ে শ্রীনিকেতন-শান্তিনিকেতন তথা বিশ্বভারতীর বিধিবদ্ধ এলাকার বাইরে এই উন্নয়ন পর্যদ যে কর্মসূচি হাতে নিয়েছে তাতে বর্তমান সময়ের ফুটপাত দখলমুক্ত করার কর্মসূচিও প্রাধান্য পেয়েছে। যাতে আন্তজার্তিক এই শহরে দেশ-বিদেশের মানুষ এসে স্বাচ্ছন্দবোধ করেন সে দিকে দৃষ্টি দেওয়া হয়েছে। সেইসাথে উচ্ছেদ হওয়া ফুটপাত ব্যবসায়ীদের পুনর্বাসনের উপরেও জোর দেওয়া হয়েছে। সমগ্র বিষয় ও পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করার লক্ষ্যে শুক্রবার ১৯ জুলাই শ্রীনিকেতন-শান্তিনিকেতন উন্নয়ন পর্ষদের একটি জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হলো।
বৈঠকে উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান চন্দ্রনাথ সিংহ ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন আরবান ডেভেলপমেন্টের স্পেশাল সেক্রেটারি মিউটীনি বন্দ্যোপাধ্যায়, বোলপুরের মহকুমাশাসক অয়ন নাথ, উন্নয়ন পর্ষদের একজিকিউটিভ অফিসার তন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায়, বোলপুর পৌরসভার চেয়ারম্যান পর্ণা ঘোষ প্রমুখ। বৈঠক শেষে উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান তথা মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ বলেন, বৈঠকে তাঁরা বোলপুর পৌরসভাকে নিয়ে উন্নয়ন পর্ষদ এলাকায় ২০৩৫ সাল পর্যন্ত উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য সহমতের ভিত্তিতে কাজ করবেন। এজন্য এদিন যে কমিটি গঠন করা হয়েছে সেই কমিটি সোমবার ২২ জুলাই থেকেই বিভিন্ন বিভাগের আধিকারিক ও বোলপুর পৌরসভার কাউন্সিলারদের নিয়ে কাজ শুরু করে দেবেন। যে সমস্ত ফুটপাত ব্যবসায়ীদের উচ্ছেদ করা হয়েছে তাঁদের পুনর্বাসনের বিষয়টি জরুরি ভিত্তিতে দেখা হব। উন্নয়নের প্রশ্নে বসে না থেকে সমস্ত ধরনের কাজই করা হবে। সেইসাথে চন্দ্রনাথ সিংহ আশ্বস্ত করে বলেন যে, উন্নয়ন পর্ষদ এলাকায় জল নিকাশি ব্যবস্থায় যে সমস্যা রয়েছে তা দূর করতে আণ্ডার গ্রাউণ্ড ড্রেন ব্যবস্থা চালু করা হবে বলে তিনি যেমন মত প্রকাশ করেন তেমনি তিনি জানিয়েও দেন যে, এবিষয়ে নাগরিকদের সচেতন হয়ে যত্রতত্র আবর্জনা ফেলার অভ্যাসও ত্যাগ করতে হবে।