স্যালাইন কাণ্ড: মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে মৃত্যু সদ্যোজাতর

ফাইল চিত্র

স্যালাইন-কাণ্ডে চাঞ্চল্যকর মোড়! এবার মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে মৃত্যু হল এক সদ্যোজাতর। হাসপাতালে সূত্রে খবর, ৮ জানুয়ারি জন্মের পর থেকে শিশুটি কাঁদেনি। তাকে ভেন্টিলেশনে রাখা হয়েছিল। কিডনির রোগ, জন্ডিস-সহ একাধিক রোগে ভুগছিল। বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা নাগাদ মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের মাতৃমা বিভাগে মারা যায় রেখা সাউয়ের শিশুসন্তান। শ্চিম মেদিনীপুরের বেলদা সংলগ্ন খাকুড়দার বাসিন্দা রেখা এই হাসপাতালেই চিকিৎসাধীন। এর আগে এই মেডিক্যাল কলেজেই মৃত্যু হয়েছিল এক প্রসূতি মামনি রুইদাসের।

ওই শিশুর ঠাকুমা পুষ্প সাউ বৃহস্পতিবার সকালে বলেন, জন্মের পর এক বার দেখিয়েছিল। তার পর আর দেখিনি, কাচের ঘরে ছিল। ময়নাতদন্তের পর দেহ বাড়ি নিয়ে যাওয়া হবে। তবে শিশুর বাবা সন্তোষ সাউ এবং মা রেখা সাউ তাদের সন্তানের মুখ দেখেননি। মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে হাসপাতালের শিশুরোগ বিভাগের চিকিৎসক তারাপদ ঘোষ জানান, ৮ জানুয়ারি রাতে ভূমিষ্ঠ হয় শিশুটি। তবে জন্মের পর থেকে ও কাঁদেনি। কিডনির রোগ-সহ একাধিক জটিলতা ছিল। ভেন্টিলেশনে রাখা হয়েছিল। তাঁরা আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলেন শিশুটিকে বাঁচানোর। কিন্তু শেষরক্ষা হল না।

মেদিনীপুর মেডিক্যাল হাসপাতালে সন্তান প্রসবের পর পাঁচ প্রসূতির সম্প্রতি অবস্থা আশঙ্কাজনক হয়ে ওঠে। মারা যান মামণি রুইদাস নামের এক প্রসূতি। বাকিরা চিকিৎসাধীন। কয়েক জনকে চিকিৎসার জন্য কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। অবশ্য রেখার চিকিৎসা চলছিল মেদিনীপুরেই। হাসপাতালের এইচডিইউ বিভাগে তিন দিন চিকিৎসা চলার পরে এখন অনেকটাই সুস্থ তিনি। হাসপাতাল সূত্রে খবর, সন্তানের মৃত্যুর খবর তাঁকে জানানো হয়নি। রেখার স্বামী সন্তোষ বলেন, এ দায় কার, তা মানুষই ঠিক করুক। ঘটনার সঠিক তদন্ত হওয়া চাই।


সূত্রের খবর, বুধবার সন্তান জন্মের পরে রেখা সাউ, মামনি রুইদাস, মাম্পি, মিনারা ও নাসরিন অসুস্থ হয়ে পড়েন। অভিযোগ, প্রসূতিদের ‘রিঙ্গার্স ল্যাকটেট’ স্যালাইন এবং ‘অক্সিটোসিন’ নামে এক ধরনের ওষুধ দেওয়া হয়। তার পরেই তাঁরা অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁদের স্যালাইনের মান নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। মামনি রুইদাসের মৃত্যুর ঘটনায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষর গাফিলতির কথা ইতিমধ্যে স্বীকার করে সিআইডি তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে রাজ্য। মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ জানিয়েছেন, প্রসূতিদের চিকিৎসার সময় প্রোটোকল মানা হয়নি।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষর বক্তব্য, সদ্যোজাতর মৃত্যুর সঙ্গে বিষাক্ত স্যালাইনের কোনও যোগ রয়েছে কিনা, তা এখনই নিশ্চিত করে বলা যাবে না। রেখার স্বামী সন্তোষ বলেন, ৮ জানুয়ারী মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের মাতৃমা বিভাগে ৭ জন প্রসূতির সিজার হওয়ার কথা ছিল। সেই তালিকায় শেষ নাম ছিল রেখার। বাকিদের হাসপাতালের স্যালাইন দেওয়া হয়, কিন্তু রেখার জন্য আলাদা করে বাইরে থেকে স্যালাইন এনে দিই। তখন ডাক্তারবাবুরা বলেন, একটি মুচলেকায় সই করতে হবে। এরপরই ডাক্তাররা জানায়, মা ও শিশুর মধ্যে যে কোনও একজনকে বেছে নিতে হবে। এরপর আমি ও আমার পরিবার মিলে সিদ্ধান্ত নিই, স্ত্রীকে বেছে নেওয়ার। এরপরই মুচলেকায় সই পর্যন্ত করি। কিন্তু রেখা বাঁচলেও শেষ পর্যন্ত খোকাকে বাঁচানো গেল না।