বিবাহিত এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে প্রাক্তন এক ছাত্রীকে নিয়ে পালানাের অভিযােগ উঠল। ঘটনাটি ঘটেছে মুর্শিদাবাদের কান্দি থানার জেমাে নরেন্দ্র নারায়ণ উচচ বিদ্যালয়ে। অভিযােগ, এই বিদ্যালয়ের দর্শনের শিক্ষক ইয়াকুব হােসেন তারই এক প্রাক্তন ছাত্রী এবং বিএড প্রথম বর্ষের পড়ুয়াকে নিয়ে পালিয়ে গিয়েছেন।
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে সােমবার বিদ্যালয়ে ব্যাপক বিক্ষোভ দেখান স্থানীয় মানুষ এবং অভিভাবকরা। উনিশ মাসের কন্যা সন্তানকে নিয়ে বিক্ষোভে সামিল হন শিক্ষকের স্ত্রী, শ্বশুর এবং ছাত্রীটির বাবা। বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে উত্তজনা ছড়ায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশকে ডাকা হয়। শেষে বিদ্যালয়ের সরকারি প্রধান শিক্ষকের কাছে নিজেদের দাবি জানালে এবং তিনি প্রয়ােজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
বিক্ষোভে সামিল হয়েছিলেন পলাতক শিক্ষকের শ্বশুর আব্দুর রহমান খাদিম। তিনি বলেন, ২০১২ সালে এই বিদ্যালয়ে শিক্ষকতার চাকরি পেয়েছিল জামাই। এছাড়াও বাড়িতে প্রাইভেট পড়াতাে। ২০১৬ সালের নভেম্বর মাসে মেয়ের সঙ্গে তার বিয়ে দিই। তাদের উনিশ মাসের একটি কন্যা সন্তান আছে। হঠাৎই চার পাঁচ মাস আগে মেয়ে জানতে পারে, জামাইরে কাছে দর্শন পড়তে আসা এক ছাত্রীর সঙ্গে তার অবৈধ সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। বিবাহ বহির্ভূত এই সম্পর্কের কথা মেয়ে জেনে ফেলায় তাকে কান্দি থেকে নিজের বাড়ি বীরভূমের ইলামবাজার ঘুড়িশা গ্রামে নিয়ে যায়। যেখানে মেয়ের উপরে শারীরিক ও মানসিক অত্যাচার করতাে। শেষে ডিসেম্বর মাসে সেখান থেকে ওকে বের করে দেয়।
এবছরের ২৩ মে সে ওই ছাত্রীটিকে নিয়ে পালিয়ে গিয়েছে। গ্রীষ্মের ছুটির পর আজ বিদ্যালয় খােলে। আমরা এসে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের কাছে ওর বিরুদ্ধে অভিযােগ করেছি। একই অভিযােগ করা হয়েছে কান্দি থানায়। আমরা চাই ও চাকরিতে যাতে যােগ দিতে না পারে।
শিশু কন্যাকে কোলে নিয়ে শিক্ষকের স্ত্রী জানান, বিয়ের পরে জানতে পারি, ওর সঙ্গে একাধিক মেয়ের সম্পর্ক রয়েছে। শেষ সম্পর্কটা গড়ে তােলে ওই ছাত্রীর সঙ্গে, যাকে নিয়ে ও পালিয়েছে। ছাত্রীটি একাদশ শ্রেণিতে ওর কাছে প্রাইভেট পড়তে আসতাে। তখনই ওদের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। চার মাস আগে বিষয়টি জানতে পারি। তারপরেই অত্যাচার বাড়তে থাকে। আমাকে পরিষ্কার জানিয়ে দেয়, ও আর আমার সঙ্গে সংসার করতে ইচ্ছুক নয়। ওই মেয়েটিকে নিয়েই থাকবে। তারপর মেয়েটিকে নিয়ে পালিয়ে যায়। এরকম একজন মানুষ শিক্ষক হওয়ার উপযুক্ত নয়। সমাজে থাকারও তার কোন অধিকার নেই। ওর শাস্তি চাই।
ছাত্রীটির বাবা জানায়, ২৩ তারিখ সকালে বাথরুম যাওয়ার নাম করে মেয়ে বাড়ি থেকে চলে যায়। ওই শিক্ষকের সঙ্গে চলে গিয়েছে সেটা জানতে পারি পরের দিন। ওই শিক্ষকের স্ত্রী এবং আমার মেয়ে একই সঙ্গে বিএড প্রথম বর্ষের ছাত্রী। শিক্ষকের স্ত্রীই আমাকে ফোন করে জানায় তার স্বামী বাড়িতে নেই। আমিও জানাই আমার মেয়েও নেই। তারপরেই বিষয়টি জানতে পারি। নিজের স্ত্রী ও সন্তান থাকার পরেও একজন শিক্ষক তারই ছাত্রীর সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করে এভাবে চলে যেতে পারে, তা সত্যিই লজ্জাজনক। শিক্ষকতা করার উপযুক্ত নন উনি। পুলিশ এবং প্রশাসন তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিক, এটাই আমাদের দাবি।
বিদ্যালয়ের সহকারি প্রধান শিক্ষক আবুল আক্তার বলেন, আজ বিদ্যালয় খােলার পরে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে কিছু মানুষ বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। তাদের দাবি, যাতে ওই শিক্ষক এই বিদ্যালয়ে আর কোনদিন যােগ দিতে না পারেন। সেই সঙ্গে তারা আরও দাবি করেছেন এখান থেকে ট্রান্সফর নিয়ে অন্য বিদ্যালয়ে যাতে না পারে, তারজন্য প্রয়ােজনীয় এনওসি আমি যেন না দিই। আমি তাদের বলেছি, বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানাে হয়েছে, তারা যা ব্যবস্থা নেবে, আমরা তা মেনে নেবাে এবং এ ব্যাপারে আমরা তাদের সর্বত্রভাবে সহযােগিতা করবাে। এছাড়াও ইতিমধ্যে ছুটির মধ্যেই আমরা স্টাফ কাউন্সিলের বৈঠকক করেছি। সেখানে ঘটনাটিকে নিন্দনীয় বলে উল্লেখ করে ধিক্কার জানিয়েছি। সেটাও আজ বিক্ষোভকারীদের জানানাে হয়েছে।