বিয়ে ঠিক হওয়ায় ঘরে ঢুকে তরুণীকে ধর্ষণের চেষ্টা, গ্রেপ্তার বিবাহিত যুবক

দুবরাজপুর থানা। নিজস্ব চিত্র।

জেলায় একের পর এক নারী নির্যাতনের ঘটনার জেরে একদিকে নাগরিক জীবনে যেমন উদ্বেগ বাড়ছে, তেমনি নারী নির্যাতন রুখতে নাজেহাল হচ্ছে পুলিশ প্রশাসন। জেলা বীরভূমের ঝাড়খণ্ড রাজ্য সীমানা লাগোয়া এলাকাগুলিতে নারী নির্যাতন থেকে শুরু করে সামাজিক অপরাধপ্রবণতা বেশি করে ঘটছে বলেই জানা যাচ্ছে। আর এক্ষেত্রে ঝাড়খণ্ড রাজ্য এলাকার দুবরাজপুরে একের পর এক নারী নির্যাতনের ঘটনায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে জেলা প্রশাসনও।

 

দুবরাজপুরের লক্ষ্মীনারায়ণপুর এলাকায় ১৯ বছরের এক যুবতীকে তাঁরই বাড়ির মধ্যে ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগকে কেন্দ্র করে এলাকায় চরম উত্তেজনা দেখা দেয়। জানা গিয়েছে যে, এলাকার এক বিবাহিত যুবক ওই যুবতীকে নানাভাবেই উত্ত্যক্ত করতো। এমন কী সে ওই যুবতীকে বিয়ে করবে বলেও জানায়। যা নিয়ে রীতিমতো অশান্তি দেখা দেয়। কিছুদিন আগে ওই যুবতীর অন্যত্র বিয়ের পাকা কথা হয়ে যায়। আর এটি জানতে পারার পরই এলাকার ওই বিবাহিত যুবক ওই যুবতীর বিয়ে ভাঙাবার চেষ্টা করে বলেও অভিযোগ রয়েছে। কিন্তু তাতে সে সফল না হওয়ায় ওই যুবতীকে পেতে মরিয়া হয়ে ওঠে। সে সব সময় ওই যুবতীর বাড়ির উপরে নজরদারিও চালাতো।


 

৭ নভেম্বর ওই যুবতীর মা পারিবারিক কাজে মেয়ে ও ছোট ছেলেকে বাড়িতে রেখে পাড়ায় অন্যজনের বাড়িতে যান। সেই সুযোগেই এলাকার ওই যুবক তাঁদের বাড়িতে ঢুকে ছোট ছেলেকে প্রাণে মারার ভয় দেখিয়ে ওই যুবতীকে টেনে ঘরের মধ্যে নিয়ে গিয়ে তাঁকে ধর্ষণের চেষ্টা করে বলে অভিযোগ। ওই যুবতী সেই সময় তাঁর হবু স্বামীর সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলছিলেন। ওই যুবক তাঁর সঙ্গে ধস্তাধস্তি শুরু করলে যুবতীটি তাঁকে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছিল। যুবতীটির হবু স্বামী মোবাইল চালু থাকায় তা শুনে অনুমান করেন যে, কিছু একটা অঘটন ঘটছে। তিনি দ্রুত তাঁর হবু শাশুড়ির মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে বিষয়টি জানান। তা শুনেই ওই যুবতীর মা প্রতিবেশীর বাড়ি থেকে দৌড়ে নিজের বাড়িতে এসে পৌঁছতেই এলাকার ওই যুবক দৌড়ে সেখান থেকে পালিয়ে যায়। তাঁদের চিৎকার-চেঁচামেচিতে ছুটে আসেন প্রতিবেশীরা। ততক্ষণে ওই যুবক এলাকা ছেড়ে পালিয়েছে। ওই যুবতীকে নিয়ে তাঁর পরিবারের লোকজন দুবরাজপুর থানায় গিয়ে এলাকার ওই যুবকের নামে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। এরপরই পুলিশ ওই যুবতীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করায়। কিন্তু পুলিশ ওই যুবকের সন্ধান করেও তাঁর নাগাল পাচ্ছিল না। পুলিশের অনুমান ছিলো, ওই যুবক এলাকার কোথাও ঘাপটি মেরে থাকলেও সে রাতের দিকে প্রতিবেশী ঝাড়খণ্ড রাজ্য পালাবার চেষ্টা করবে। সেইমতো পুলিশ ৮ নভেম্বর ঝাড়খণ্ড সীমানার প্রতাপপুর–লোকপুর এলাকায় নজরদারি চালিয়ে অভিযুক্ত ওই বিবাহিত যুবককে গ্রেফতার করেছে।

 

প্রসঙ্গত, গত ৪ নভেম্বর সন্ধ্যায় দুবরাজপুর এলাকার ১৭ বছরের এক কিশোরী টিউশন পড়ে বাড়ি ফেরার পথে দুই যুবক তার পথ আটকে তাঁর মুখে কাপড় বেঁধে তাঁকে নির্জন জায়গায় তুলে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণের চেষ্টা করে। ওই কিশোরী কোনক্রমে মুখের কাপড় খুলে চিৎকার শুরু করলে ওই দুই যুবক পালিয়ে যায়। এলাকার মানুষ ওই কিশোরী ছাত্রীকে যখন উদ্ধার করে তখন তাঁর পোশাক ছেঁড়া ছিলো। পুলিশ দুষ্কৃতীদের গ্রেফতার করতে না পারায় এলাকার মানুষ তাঁদের গ্রেফতারের দাবিতে ১৪ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করেন। এনিয়ে পুলিশের সঙ্গে তাঁদের ধস্তাধস্তিও হয়। পরে পুলিশ অভিযুক্ত ওই দুই যুবক যুবক ঝাড়খণ্ড পালিয়ে যাওয়ার আগেই গ্রেফতার করে। ওই নাবালিকা ছাত্রীর শারীরিক পরীক্ষাও করা হয়। এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে রাজ্য শিশু সুরক্ষা কমিশনের উপদেষ্টা অনন্যা চক্রবর্তী ও অন্যান্য সরকারি আধিকারিকরা ওই নাবালিকার বাড়িতে গিয়ে তাঁর সাথে দেখা করে তাঁকে সমস্ত রকমের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। এমন কী, ওই ছাত্রীটির স্কুলে যেতে কোনও অসুবিধা হলে তাঁকে পুলিশি নিরাপত্তা দেওয়ার কথাও বলা হয়।