• facebook
  • twitter
Saturday, 23 November, 2024

পুজোর উচ্ছ্বাস বাজারমুখী ভিড়ে

উনিশের পুজো নিয়ে অভিযােগ উঠছিল 'একশবিশটা'। শপিং মলের সামনে ঢাক বাজিয়ে পুজোর বার্তা দিতে দিতে শিল্পী ক্লান্ত হয়ে পড়লেও শহরবাসী নাকি ঝিমিয়েই।

দুর্গা পুজোর কেনাকাটার করতে জনস্রোত। (Photo: Kuntal Chakrabarty/IANS)

জনস্রোত! এই স্রোতে হারিয়ে গেলেও ‘আচ্ছা’। কিন্তু ধাক্কা ধাক্কি আর ভিড়ের মধ্যে সেরা জিনিসটা বেছে নিতে পারলেই তৃপ্তির কোটা পূর্ণ হয় একশভাগ।

উনিশের পুজো নিয়ে অভিযােগ উঠছিল ‘একশবিশটা’। শপিং মলের সামনে ঢাক বাজিয়ে পুজোর বার্তা দিতে দিতে শিল্পী ক্লান্ত হয়ে পড়লেও শহরবাসী নাকি ঝিমিয়েই। একমাস আগে থেকে তিলােত্তমার রাস্তাঘাটে যে উচ্ছাস দেখা যেত, তাতে ভাটার টান, শহরের অলিতে গলিতে বিজ্ঞদের আড্ডার আসরে কান পাতলে শােনা যাচ্ছিল এমনটাই। কিন্তু রবিবারে নিউমার্কেট, গড়িয়াহাট, খান্না বাজার, হাতিবাগানের জনস্রোত আবারও মনে করিয়ে দিল, দুর্গা পুজো নিয়ে কলকাতাবাসীর উৎসাহ কমানাে শুধু মুশকিল নয়, অসম্ভব।

মহালয়ার আগে কেনাকাটার জন্য শেষ ছুটির দিন। তাই বােধহয় এই সুযােগ হাতছাড়া করতে রাজি হয়নি সাধারণ মানুষ। রবিবার বিকেল ৪ টা, ভিড়ে ভাসছে নিউমার্কেট চত্বর। মেয়ের হাত ধরে নিউমার্কেটে পুজোর কেনাকাটা করতে আসা ৬৯ বছরের অনীমাদেবী জানান, মেয়ে সরকারি চাকুরে। অন্যান্যদিন কাজে ব্যস্ত থাকে, আলাদা করে কেনাকাটা করার সময় হয়ে ওঠে না। তাই রবিবার ছুটির দিনে পুজোর শপিং-এ বার হয়েছিলেন এই মা ও কন্যের যুগল। মেয়ে তনিমার কথায়, বাড়ির সামনের শপিং মল থেকে টুকিটাকি কেনাকাটা হয়েছে। রবিবারেই কেনাকাটা সেরে ফেলতে ইচ্ছুক তনিমা।

কিন্তু কোথাও গিয়ে কি তা ভাটা পড়েছে পুজোর উৎসাহে? হাতিবাগানে কেনাকাটা করতে এসেছিল কলেজপড়ুয়া সপ্তপর্না ও তার বন্ধুরা। এই প্রশ্নের উত্তরে সুরেন্দ্রনাথ কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের এই ছাত্রী জানান, আসলে উৎসাহে ভাটা পড়েনি। কিন্তু ব্যাস্ত জীবনে উৎসব, আনন্দ সব কিছু ছাপিয়ে সাফল্যের দিকেই দৌড়ে চলেছে প্রত্যেকে। কথার প্রসঙ্গ টেনে সপ্তপর্নার বন্ধু অনীক বলল, আসলে এই দৌড়ে পা না মেলালে পিছিয়ে পড়ার সম্ভবনা প্রবল। পাশাপাশি অনীকের দাবি, প্রত্যেকবছর এই সময় রাস্তাজুড়ে বিভিন্ন পুজোর প্রচারের হের্ডিং দেখতে পাওয়া যায়। অতীতের উদাহরণ টেনে তার দাবি, বাহুবলী, পৃথিবীর সবথেকে বড় দুর্গা, এই বিষয়গুলি পুজোর তিন থেকে চার মাস আগে প্রচার শুরু করা হয়েছিল। তাই পুজো পুজো বিষয়টা মনে হচ্ছিল অনেক আগে থেকেই। কিন্তু এবার পুজোয় আলাদা করে কোনও পুজো সেই মাত্রার কৌতুহল তৈরি করতে পারেনি বলেই দাবি তার।

পশ্নের উত্তর দিয়ে ভিড় ঠেলে উত্তরা মার্কেটের দিকে হাঁটা দিল তারা। পুজোর বাজারে কতটা লাভের মুখ দেখছেন ব্যবসায়ীরা। নিউএকটি স্থায়ী সালােয়ার কামিজের দোকান রয়েছে হাভান মােল্লার। তিনি জানান, ভিড় রয়েছে। কিন্তু কেনাকাটার বিষয়ে ‘কিপটেমি’ করছেন ক্রেতারা। একই সুর শােনা গেল নিউমার্কেট ও খান্না বাজারের বিক্রেতাদের কণ্ঠে। তাদের কথায়, বাইরে থেকে দেখলে যেমনটা মনে হচ্ছে প্রচুর ভিড়, লাভ হচ্ছে প্রচুর আসলে বিষয়টা পুরােপুরি তা নয়। বাজারে ভিড় থাকলেও সেভাবে কেনাকাটি করছেন না সাধারণ মানুষ, দাবি অধিকাংশ দোকানদারদের।

পুজোর উৎসাহে ভাটা পড়েছে কি না, এই নিয়ে বিতর্ক রয়েছে, থাকবেও। কিন্তু পড়ন্ত বিকেলের জনস্রোত উৎসাহ নিয়ে ওঠা বিতর্কের ক্ষতে করল প্রলেপের মতাে। ভিড়ের বার্তা, ‘পুজো আসছে। তৈরি হও বাঙালি, তৈরি হও’।