নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা : ভাঙড়ের আইএসএফ বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকির সঙ্গে একান্তে আলোচনা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের। সোমবার বিধানসভা কক্ষেই দু’পক্ষের মধ্যে দীর্ঘক্ষণ আলোচনা হয়। কিন্তু কেন? কি বিষয়ে মমতা ও নওশাদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন তা এখনও স্পষ্ট নয়। তবে ইতিমধ্যেই রাজ্য রাজনীতিতে তুমুল জল্পনা শুরু হয়েছে এই বিষয়কে কেন্দ্র করে।
উল্লেখ্য, মুখ্যমন্ত্রী এদিন ডেকে পাঠান নওশাদকে। মমতার সঙ্গে নওশাদের কথা বলার পরই তাঁকে ছেঁকে ধরেন সাংবাদিকরা। তাঁরা জানতে চান, আলোচনার প্রতিপাদ্য কী ছিল? নওশাদ উত্তরে বলেন, ফুরফরা শরিফের ব্যাপারে ব্যক্তিগত কিছু কথা ছিল। এর চেয়ে বেশি কিছুই জানাননি নওশাদ। এবার প্রশ্ন হল, নওশাদের সাথে ফুরফরা শরিফের সম্পর্কটা কি? নওশাদ ফুরফুরা শরিফের পীরজাদা আব্বাস সিদ্দিকির ভাই। কিন্তু অতীতে ফুরফুরার বিষয়ে তাঁকে কখনও নাক গলাতে দেখা যায়নি। নওশাদ তাঁর নির্বাচন কেন্দ্র ভাঙড় নিয়েই ব্যস্ত থাকেন।
তাছাড়া ফুরফুরা শরিফের উন্নয়নের ব্যাপারে তৃণমূলের সঙ্গে অনেক বেশি যোগাযোগ রাখেন আর এক পীরজাদা। তিনি হলেন, ত্বহা সিদ্দিকি। যদিও ফুরফরা শরিফের উন্নয়নে সর্বদাই পাশে দাঁড়িয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়। ফুরফরা শরিফের যে কোনও প্রয়োজনে তিনি ছুটে গিয়েছেন। এবার এই বিষয়ে ব্যক্তিগত কিছু আলোচনা করতেই নওশাদকে ডেকে পাঠিয়েছিলেন মমতা, এমনটাই জানিয়েছেন ভাঙ্গরের বিধায়ক।
প্রসঙ্গত আইএসএফ বাংলার বুকে তুলনামূলক ছোট রাজনৈতিক দল। নওশাদ সিদ্দিকিকে অনেক আগেই তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হলে নওশাদ তাতে রাজি হননি। বরং বাম, কংগ্রেসের সঙ্গেই হাত মিলিয়ে লড়েছিলেন। কিন্তু রাজনৈতিকভাবে আইএসএফের আদর্শ তৃণমূল বিরোধিতা করলেও, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ অথবা আর্জি অমান্য করা নৈতিকতার বিরোধী। সোমবার বিধানসভায় বাংলা বিরোধী প্রস্তাব আনে তৃণমূল। সেই প্রস্তাবের উপরই আলোচনা হয়। আলোচনায় যোগ দিয়েছিলেন মমতাও।
এদিন বিধানসভায় দেখা যায়, নওশাদের কানের কাছে মুখ এনে রাজ্যের পুরমন্ত্রী তথা কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম কিছু বলছেন। পরে জানা যায়, ফিরহাদ তাঁকে বলেছিলেন, “তোমাকে মুখ্যমন্ত্রী ডাকছেন।” এক্ষেত্রে কোনও রাজনৈতিক রং নয়, বরং আদর্শগতভাবে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ পালনে বাধ্য সকলেই। তাই ফিরহাদের কথা শেষ হতেই নওশাদ তাঁর আসন ছেড়ে উঠে পড়েন। তারপর বিধানসভা কক্ষের মধ্যেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করে বেশ কিছুক্ষণ ধরে কথা বলেন। উভয়ের মধ্যে আলোচনার নানা ব্যাখ্যা থাকলেও এখনই বলা সম্ভব নয় বাস্তবেই তাঁরা কি নিয়ে কথা বলেছিলেন। নওশাদ তৃণমূলের সঙ্গে কোনও অক্ষ রচনা করছেন কিনা, তা নিয়েও সন্দেহ করছে রাজনৈতিক মহল।
নওশাদের কথা মতো, ফুরফরা শরিফের বিষয়টি অনেকে গুরুত্ব দিতেই নারাজ। উল্লেখ্য, এদিন বিধানসভায় বাংলা ভাগ বিরোধী প্রস্তাব নিয়ে বলতে উঠে বিজেপি এবং তৃণমূল উভয় পক্ষকেই আক্রমণ করেছিলেন নওশাদ। তারপরই মুখ্যমন্ত্রীর ডাকে সাড়া দিয়ে তিনি মমতার সঙ্গে একান্তে আলোচনা করেন। রাজনৈতিক সৌজন্যতা বিনিময় নাকি দরকারি কোনো বিষয়ে আলোচনা নাকি তৃণমূলের সঙ্গে নওশাদের কোনও অক্ষ রচনা, তা নিয়ে বর্তমানে একাধিক মত ঘোরাফেরা করছে বঙ্গীয় রাজনৈতিক মহলে।