লন্ডন সফরের শেষদিনে লগ্নি নিয়ে আত্মবিশ্বাসী মুখ্যমন্ত্রী। শুক্রবার প্রাতঃভ্রমণে বেরিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করেন, লগ্নি তো আসবেই। তার আগে দুটি কাজ রয়েছে। সেই কাজ দুটি শেষ করতে চান। তার মধ্যে একটি কলকাতা-লন্ডন সরাসরি বিমান পরিষেবা চালু করতে চান। সপ্তাহে অন্তত দুইদিন এই পরিষেবার জন্য চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। আর অন্যটি হল, বাংলায় অক্সফোর্ডের ক্যাম্পাস চালু করা।
ছয়দিনের লন্ডন সফরে মুখ্যমন্ত্রী একাধিক কর্মসূচি করেছেন। সেখানে ভারতীয় দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত ও শিল্পপতিদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। তিনি বাংলার শিল্প বান্ধব চরিত্র সেখানকার শিল্পপতি ও বিনিয়োগকারীদের মধ্যে তুলে ধরেছেন। তাঁর সঙ্গে সঙ্গে বাংলার শিল্পপতিরাও রাজ্যে শিল্পের অনুকূল পরিবেশের কথা তুলে ধরেন। তাঁর ব্যক্তি বা সংস্থাগত অভিজ্ঞতার কথা বলেন। শিল্প বৈঠকে মমতা বিনিয়োগকারীদের আশ্বস্ত করে বলেন, বাংলা বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের প্রকৃত গন্তব্যস্থল।
প্রসঙ্গত এবছরে কলকাতায় আয়োজিত বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনে ব্রিটেন ছিল ‘পার্টনার কান্ট্রি’। এই সম্মেলনে মমতার সঙ্গে বিলেতের বিনিয়োগকারীদের একটি যোগসূত্র বা সখ্যতা আগে থেকেই তৈরি হয়ে যায়। সেজন্য ব্রিটেন থেকে ভারতে বিনিয়োগ আসার ব্যাপারে তিনি যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী ছিলেন। সে কথা মাথায় রেখেই তিনি বলেন, লগ্নি-ব্যবসা তো আসবেই।
কিন্তু তার আগে মুখ্যমন্ত্রী অক্সফোর্ডের ক্যাম্পাস এবং লন্ডনের সঙ্গে কলকাতার সরাসরি বিমান পরিষেবার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন। অনেকের ধারনা, লন্ডনের সঙ্গে যাতায়াত ও যোগসূত্র নিবিড় করার উদ্দেশ্যেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি লন্ডনে ভারতীয় হাই কমিশনের বৈঠকেই এপ্রসঙ্গ উত্থাপন করেন। মুখ্যমন্ত্রী এই বৈঠকে বলেন, ‘বাংলা বেশি দূরে নয়। কিন্তু লন্ডন থেকে একটা সরাসরি বিমান হলে খুব ভালো হয়। আমি ইউকে-র রাষ্ট্রদূতকে বলব যদি বিষয়টা দেখেন। আগে ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ ছিল। এখন সরাসরি বিমান পরিষেবা চালু হলে সুবিধা হবে।’
এরপর শিল্প বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী ফের বিমান পরিষেবার বিষয়টি তোলেন। তিনি রাজ্যের পক্ষ থেকে জ্বালানিতে ছাড় দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে বলেন, ‘কলকাতা-লন্ডন সরাসরি বিমান পরিষেবা চালু করুন। ব্রিটিশ এয়ারওয়েজকে বিনীত অনুরোধ। আগে এই পরিষেবা ছিল। কিন্তু আমরা ক্ষমতায় আসার আগে সেটা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। যাঁরা প্রথমে আসবেন, তাঁদের জ্বালানিতে ছাড় দেওয়া হবে। অন্ডালে গ্রিন এয়ারপোর্ট চালু হয়েছে। একটাও সিট খালি থাকবে না। আমরা প্রতিদিন সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছি।’
অক্সফোর্ডে মমতার ভাষণ চলাকালীন বামপন্থী কয়েকজন আরজি কর কাণ্ড নিয়ে বিক্ষোভ দেখাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর ওপর তা কোনও প্রভাব ফেলতে পারেনি, বুঝিয়ে দিয়েছেন মমতা। ওই আচরণে বিন্দুমাত্র বিচলিত না হয়ে তিনি বরং ভাষণ শেষে হালকা মেজাজে সবার সঙ্গে কথা বলেন। তাঁকে ঘিরে প্রবাসী বাঙালি ও বিদেশিদের মধ্যে উচ্ছ্বাস দেখা যায়। অক্সফোর্ডের পড়ুয়ারাও মমতার বিকল্প অর্থনীতি ও সামাজিক নীতির কথা শুনে প্রশংসা করেন। মমতা আত্মবিশ্বাসের সুরে বলেন, ২০২৬ সালে চতুর্থবার নির্বাচনে জিতে ক্ষমতায় আসার পর তিনি ফের লন্ডন সফরে আসবেন। তিনি বছরে দুবার করে লন্ডনে আসতে চান। তবে আপাতত বাংলার উন্নয়নই তাঁর প্রধান লক্ষ্য। তাঁর এই উন্নয়নের কর্মকান্ডে বাংলার মানুষ যে তাঁর সঙ্গেই থাকবেন, এব্যাপারে তিনি নিশ্চিত। শুক্রবার রাতে তিনি লন্ডন থেকে কলকাতার উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন।