• facebook
  • twitter
Saturday, 23 November, 2024

নন্দীগ্রামেই হবে ডার্বি ম্যাচ মমতা বনাম শুভেন্দু

সব জল্পনার অবসান। শনিবার বিকেলে বিজেপির প্রার্থী তালিকা ঘােষণা হতেই একুশের লড়াইয়ের ডার্বি কেন্দ্র হয়ে দাঁড়াল নন্দীগ্রাম।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, শুভেন্দু অধিকারী (Photo: SNS)

সব জল্পনার অবসান। শনিবার বিকেলে বিজেপির প্রার্থী তালিকা ঘােষণা হতেই একুশের লড়াইয়ের ডার্বি কেন্দ্র হয়ে দাঁড়াল নন্দীগ্রাম। ২৭ মার্চ মহাসংগ্রামের অপেক্ষায় নন্দীগ্রাম। কেন না নন্দীগ্রাম থেকেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে লড়চ্ছেন শুভেন্দু অধিকারী। 

এ দিন বাংলার প্রথম দু’দফার আসনে প্রার্থী তালিকা ঘােষণা করে বিজেপি। তালিকায় সেরা চমক সন্দেহাতীতভাবেই শুভেন্দুর নাম। সেই সঙ্গে প্রথম দু’দফার ৫৭ আসনের জন্য নিজেদের প্রার্থী তালিকাও ঘােষণা করে দিয়েছে গেরুয়া শিবির। 

তাতে আর এক উল্লেখযােগ্য নাম প্রাক্তন ভারতীয় ক্রিকেটার অশােক দিন্দা। তিনি ময়না কেন্দ্র থেকে লড়াই করবেন। ১ টি আসন জোটসঙ্গীদের অল ঝাড়খণ্ড স্টুডেন্ট ইউনিয়নের জন্য ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে গেরুয়া শিবির। 

শুভেন্দুর পাশাপাশি আরও বেশ কয়েকজন প্রাক্তন তৃণমূল নেতা স্থান পেয়েছেন গেরুয়া শিবিরের প্রথম তালিকায়। পুরুলিয়ায় প্রার্থী হয়েছেন প্রাক্তন বিধায়ক সুদীপ মুখােপাধ্যায়। তমলুকে টিকিট পেয়েছেন হরেকৃষ্ণ বেরা। সবং থেকে বিজেপির প্রার্থী অমুল্য মাইতি। হলদিয়া কেন্দ্রে বিদায়ী বাম বিধায়ক তাপসী মল্লিককেই প্রার্থী করছে গেরুয়া শিবির। 

দলত্যাগীদের পাশাপাশি একাধিক চমকও রয়েছে গেরুয়া শিবিরের প্রার্থী তালিকায়। ডেবরা থেকে প্রার্থী হচ্ছেন প্রাক্তন আইপিএস ভারতী ঘােষ। এই কেন্দ্রে তৃণমূলের হয়েও ভােটে লড়ছেন প্রাক্তন আইপিএস হুমায়ুন কবীর। যদিও সব আলােই কেড়ে নিয়েছে মমতার বিরুদ্ধে শুভেন্দুর ভােটে দাঁড়ানাে নিয়ে। ফলে এবার নন্দীগ্রামে মমতা বনাম শুভেন্দু। 

প্রসঙ্গত, এই নন্দীগ্রামই ৩৪ বছরের বাম শাসনের পতনের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। আর বাম শাসনের পতনে এই নন্দীগ্রাম থেকেই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করেন শুভেন্দু-মমতা। কিন্তু রাজ্যের প্রাক্তন পরিবহন মন্ত্রী শুভেন্দু বিজেপি-তে যােগ দেওয়ার পরেই ফের আলােচনার কেন্দ্রে চলে আসে নন্দীগ্রাম। যে জমি আন্দোলন থেকে উত্থান মমতার, সেখানে একসময় তাঁর কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়েছিলেন শুভেন্দু। পরবর্তী সময়ে শুভেন্দু এবং অধিকারী পরিবারের গড় হয়ে ওঠে নন্দীগ্রাম। তাই সেখানে জমির দখল টিকিয়ে রাখা বড় চ্যালেঞ্জ ছিল তৃণমূল এবং মমতার কাছে। তাই গত ১৮ জানুয়ারি তেখালির মাঠে দাঁড়িয়ে নন্দীগ্রাম থেকে নিজে প্রদ্বিন্দ্বিতা করবেন বলে জানিয়ে দেন মমতা। 

মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, নন্দীগ্রাম আমার সবথেকে লাকি জায়গা। নন্দীগ্রাম থেকে ২০২১-এ তৃণমূল জিতবে। নন্দীগ্রাম থেকেই শুরু হল তৃণমূলের জেতার পালা। কারও নাম এখনই বলছি না। পরে বলব। ভালাে মানুষ দেব, যিনি সত্যিকারের আপনাদের পাশে থেকে কাজ করবেন। আমিই যদি নন্দীগ্রামে দাঁড়াই কেমন হয় ভাবছিলাম। কথার কথা। একটু বললাম। একটু ইচ্ছে হল। একটু আমার মনের জায়গায়। সুব্রত বক্সিকে আমার নাম মনে রাখতে বলব। 

মমতার এই ঘােষণায় স্বভাবতই হইচই পড়ে যায় বিজেপি’র অন্দরে। নন্দীগ্রামকে পাখির চোখ করলেও, তখনও সেখানে কাকে নামানাে হবে, তখনও তা ভেবে উঠতে পারেননি গেরুয়া নেতৃত্ব। তবে মমতার ঘােষণার পর থেকেই শুভেন্দুকে সেখানে তৃণমূল দলনেত্রীর বিরুদ্ধে নামানাের দাবি জোরালাে হয়ে উঠতে শুরু করে। 

তার নেপথ্যে শুভেন্দুর ভূমিকাও কম ছিল না। নিজে নন্দীগ্রামে প্রার্থী হতে চান কি না, স্পষ্ট না করলেও, মমতাকে নন্দীগ্রামে ৫০ হাজার ভােটে হারিয়ে ছাড়বেন বলে হুঁশিয়ারি দিতে শুরু করেন তিনি। বলেছিলেন, ‘নন্দীগ্রামে হাফ লাখের বেশি ভােটে মাননীয়াকে হারাতে না পারলে রাজনীতি ছেড়ে দেব।’ 

প্রাক্তন দলনেত্রীর বিরুদ্ধে শুভেন্দু আরও বলেছিলেন, ‘দিদিমণিকে নন্দীগ্রামেই দাঁড়াতে হবে। এক জায়গাতেই দাঁড়াতে হবে। কার ভরসায় আপনি নন্দীগ্রামে দাঁড়াবেন? ৬২ হাজারের ভরসায়? আর পদ্ম জিতবে ২ লাখ ১৩-র ভরসায়। আমরা লড়তে জানি, জিতবই। এমনকি নন্দীগ্রাম থেকে ভােটে লড়লে, শুধু নন্দীগ্রাম থেকেই মমতাকে লড়তে হবে মুখরক্ষার জন্য ভবানীপুরকে হাতে রাখা চলবে না বলেও সুর চড়াতে শুরু করেন তিনি। বিজেপির অন্য নেতারাও তাতে গলা মেলান।

কিন্তু এমন তর্জন-গর্জনের মধ্যেও শুক্রবার তৃণমূলের প্রার্থী তালিকা ঘােষণা হওয়ার পর দেখা যায়, শুধু নন্দীগ্রামকেই ‘ফোকাস’ করছেন মমতা। সেখান থেকে প্রার্থী হয়েছেন তিনি। শুধু তাই নয়, তিনি জানান, “কথা দিলে কথা রাখি আমি। নন্দীগ্রাম থেকেই এ বার ভােটে লড়ছি আমি।” 

মমতার এই ঘােষণার পরই বিজেপির প্রার্থিতালিকার দিকে তাকিয়ে ছিলেন সকলে। গেরুয়া শিবিরও আর দেরি করতে চায়নি। তাই আজ, রবিবার প্রধানমন্ত্রীর বিগ্রেডের আগেই যাবতীয় জল্পনার অবসান ঘটালাে পদ্ম শিবির। মমতা নন্দীগ্রামে দাঁড়ানাের কথা ঘােষণার পরেই তৃণমূল নেত্রীর বিরুদ্ধে তােপ দাগতে শুরু করেন শুভেন্দু। নন্দীগ্রামের মানুষ ভূমিপুত্রকে প্রার্থী দেখতে চায়, তাই মমতার হার নিশ্চিত বলে দাবি করতে শুরু করেন তিনি এমনকি এদিন প্রার্থিতালিকা ঘােষণার আগে নন্দীগ্রামের চণ্ডীপুরে পথসভায় গিয়ে মমতাকে ‘বহিরাগত’ বলে কটাক্ষও করেন তিনি, ঠিক যে ভাবে কেন্দ্রীয় বিজেপি নেতৃত্বের বিরুদ্ধে আক্রমণ শানিয়ে আসছে জোড়াফুল শিবির। 

তিনি বলেন, ‘মাননীয়া ভবানীপুর থেকে পালালেন কেন? আর বিকেলেই তার নাম ঘােষণা হওয়াকে একুশের ভােটে বাংলায় অন্যতম বড় চমক বলেই মনে করছে পর্যবেক্ষক মহলের একাংশ। হাই ভােল্টেজ এই কেন্দ্রে এবার নজর থাকবে সবার। এই লড়াই দু’পক্ষেরই ‘প্রেস্টিজ ফাইট’। 

এদিকে, এ দিন শুভেন্দুর নাম বিজেপি প্রার্থী হিসেবে ঘােষিত হওয়ার পরেই কাঁথির ‘শান্তিকুঞ্জ’ থেকে শিশির অধিকারী জানিয়ে দেন, তিনি এখনও পর্যন্ত মনে করছেন না তার প্রয়ােজন হবে। কিন্তু তেমন দরকার বুঝলে নন্দীগ্রামের বিজেপি প্রার্থীর হয়ে প্রচারে নামবেন। পাশাপাশিই বলেছেন, “শুভেন্দু নন্দীগ্রামে বিপুল ভােটে জিতবে। আমার প্রচারে নামার কোনও দরকার বলে এখনও পর্যন্ত মনে হচ্ছে না। কিন্তু যদি কোনও দরকার হয়, তা হলে আমি অবশ্যই প্রচারে নামব।” এমনকি বলেন, “উনি (মমতা) এখানে লড়তে এসে মস্ত ভুল করছেন। ভােটের ফল ওঁর পক্ষে যাবে না। আমি আবার বলছি, শুভেন্দু বিপুল ভােটে জিতবে।”