লকডাউনে শহরবাসী ছুটির মুডে থাকলেও নাওয়া খাওয়া ভুলে রাজ্যবাসীর সুরক্ষণ সুনিশ্চিত করতে ব্যস্ত রয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আপতকালীন অবস্থায় জরুরি, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সরবরাহে যাতে কোনও অসুবিধা না হয় নিয়মিত, তা নিয়ে বৈঠক চলছে নবান্নে। একই সঙ্গে খুচরো বাজারগুলিতে যাতে বেচাকেনা স্বাভাৰ্কি থাকে, তার দিকেও নজর রেখে চলেছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। বুধবার নবান্নে রাজ্যের কৃষিমন্ত্রী, কৃষি বিপণন উপদেষ্টা কমিটির শীর্ষ কর্তাদের নিয়ে উচ্চপর্যায়ের বৈঠক সানে তিনি। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম যাতে সাধারণের সাধ্যের মধ্যে থাকে, তা স্থানীয় প্রশাসনকে দেখার নির্দেশ দেন।
এদিকে রাত পোহাতে না পোহাতেই বৃহস্পতিবার শহরের বেশ কয়েকটি বাজার পরিদর্শনে বের হন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর সঙ্গে এদিন ছিলেন কলকাতা পুলিশের নগরপাল অনুজ শর্মা, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার ডি পি সিংহ সহ অপর শীর্ষ আধিকারিকরা। শহরের বড় বাজারগুলির পাশাপাশি খুচরো বাজারগুলিতে কীভাবে কেনাকাটা হচ্ছে, তা সরেজমিনে খতিয়ে দেখেন তিনি।
এখানেই শেষ নয়, জানবাজার পরিদর্শনের সময় সবজি বাজারে নিজে হাতে সুরক্ষা রেখা এঁকে দেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী। পাশাপাশি ক্রেতা ও বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলেন। তাঁদের সমস্যাগুলি শুনে শীর্ষ আধিকারিকদের তৎক্ষণাৎ প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেন তিনি।
পাইকারি বাজারগুলোয় যাতে সুষ্ঠুভাবে পণ্য পৰ্বিহণ হয়, তা নজরে রাখার নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী। কোনওভাবেই যাতে পাইকারি বাজার বন্ধ না থাকে এদিন পোড়া বাজারে দাঁড়িয়ে তা সুনিশ্চিত করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রী এদিন অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার ডি পি সিংকে জরুরি পণ্যও সরবরাহ ব্যবস্থার ‘নোডাল অফিসার’ নিযুক্ত করেন।
বাজারগুলিতে যাতে ভিড়ভাট্টা না হয়, সেদিকে নজর রাখার নির্দেশ দেন তিনি। বাজার ব্যবস্থা চলাকালীন পুলিশকর্মীদের তদারকিতে যাতে গোটা বিষয় পরিচালিত হয়, তা সুনিশ্চিত করেন। রাজ্যের খুচরো বাজারগুলি যাতে নিয়মিত চলে, তাও দেখার নির্দেশ দেন স্থানীয় প্রশাসনকে। করোনা মোকাবিলায় প্রতিটি রাজাই নিজের মতো করে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সেখানে পিছিয়ে নেই বাংলাও। কোনও ভিডিও কনফারেন্সে নির্দেশ নয়, স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে নিজেই পরিদর্শনে বের হচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই পরিস্থিতিতে সুরক্ষা কতটা জরুরি, নিরাপদ দূরত্ব মেনে চলা কতটা প্রয়োজন সাধারণের মধ্যে দাড়িয়ে তা বোঝাচ্ছেন তিনি। একই সঙ্গে দিনরাত এক করে যারা সাধারণ মানুষের কাজে ব্যস্ত, সেই চিকিৎসক, চিকিৎসা সহায়ক কর্মী থেকে শুরু করে পুলিশ কর্মীদের উৎসাহ দিয়ে মনোবল বাড়ানোর চেষ্টা করছেন বাংলার মমতাময়ী মুখ্যমন্ত্রী।
এদিন প্রথম পোস্তা বাজার হয়ে একে একে জানবাজার, নিউ মার্কেট, গড়িয়াহাট বাজার সহ একাধিক পাইকারী ও খুচরো বাজার পরিদর্শন করেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রীর মতো বাজার ব্যবস্থা স্বাভাবিক রাখতে তৎপর পশ্চিমবঙ্গ সরকারের টাস্ক ফোর্সের সদস্য তথা চাষি ভাণ্ডার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কমল দে, কৃষিমন্ত্রী তপন দাশগুপ্ত এবং কৃষি বিপণন দফতরের মুখ্য উপদেষ্টা প্রদীপ মজুমদারের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন কমল দে।
পর্যাপ্ত ট্রাক না থাকায় কিছু সমস্যা হলেও পাইকারি বাজারে ৭০ শতাংশ সব্জি জেলাগুলি থেকে আসছে বলে জানালেন তিনি। বড় ঝুড়ি বোঝাই সব্জি ট্রাক থেকে নামানোর সময় যাতে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে শ্রমিকরা কাজ করে, সেদিকে সম্পূর্ণ নজর রাখা হচ্ছে। শহরের পাইকারি বাজারগুলিতেও টাস্ক ফোর্সের তরফ থেকে মাইকে প্রচার চালানো হচ্ছে বলেও জানান কমল দে।