• facebook
  • twitter
Friday, 22 November, 2024

ডিসেম্বরে ত্রিপুরা সফরে যাবেন মমতা, ‘আজ খুঁটিপুজো করলাম, তেইশে বিসর্জন’: অভিষেক

রবিবার ত্রিপুরার মাটিতে জনসভা করতে গিয়ে বিপ্লব দেব সরকারকে উৎখাত করার ডাক দিলেন তৃণমুলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।

অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (File Photo: SNS)

রবিবার ত্রিপুরার মাটিতে জনসভা করতে গিয়ে বিপ্লব দেব সরকারকে উৎখাত করার ডাক দিলেন তৃণমুলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। বুঝিয়ে দিলেন কোনওভাবেই ত্রিপুরায় বিজেপিকে এক ইঞ্চি জমি ছাড়বে না তৃণমুল। এটা কংগ্রেস বা সিপিএম না। দলটার নাম তৃণমূল। যত কাটবেন তত বাড়বে। যত আঘাত করবেন, আমাদের কর্মীদের মনোবল তত বাড়বে।

তিনি বলেন, ২৩-এ বিসর্জন খুঁটিপুজো আজ করলাম। ২৩-এ বিসর্জন। আপনার ১০ গুণ জেদ আমার। আপনার জেদ গায়ের জোরে ত্রিপুরায় গুণ্ডারাজ চালাব। আমার জেদ ত্রিপুরার মানুষের সমর্থন নিয়ে ত্রিপুরায় মানুষের দুয়ারে সরকার চালাব। ডিসেম্বরে মমতার সভা সামনে পুরভোট।

আবার আপনি গায়ের জোরে ভোট করবেন। আপনি বলছেন, যে ভাবেই হোক আমার রাজত্ব কায়েম রাখব। এতদিন পেরেছেন, আর পারবেন না। কারণ এতদিন আপনাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ছিল কংগ্রেস ও সিপিএম। তৃণমূল শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে লড়বে। এবার আপনার সামনে লড়াইয়ে তৃণমূল। আর পারবেন না।

২০২৩-এর এক বছর আগে থেকে ঘরবাড়ি নিয়ে এখানে বসে থাকব। নভেম্বরে আরও দু’তিনবার। ডিসেম্বরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিবেকানন্দ ময়দানে মিটিং করবে তৃণমুল। বিজেপি র উদ্দেশ্যে বলেন, নেদিকে বাঁদিকে যারা ঘোরে তাঁরা সবাই আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। সুইচ টিপলেই ১৫ জন বিধায়ক তৃণমূলে আসবে।

কিন্তু সরকার ভাঙার রাজনীতি আমি করি না আমি ২৩-এ আপনার গদি উপড়ে ফেলব। আগামী দিনে দিল্লি ত্রিপুরাকে চালাবে না। ত্রিপুরা দিল্লিকে চালাবে। ত্রিপুরায় বসে দিল্লির তল্পিবাহকতা চলবে না। বাংলা থেকে তাড়িয়েছি, ত্রিপুরা থেকেও একইভাবে তাড়াব। যেদিন ভোট দিতে যাকেন, এক ভোটে বিজেপিকে উপড়ে ফেলবেন।

মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেবেকে কটাক্ষ করে বলেন, আগে ছিল সিপিএমের হার্মাদ। এখন একটা বসে আছে বিজেপির উন্মাদ। বিপ্লব দেবের ছুটি হয়ে গিয়েছে। ওঁর একটা ক্লাবের প্রেসিডেন্ট হওয়ার যোগ্যতা নেই, একটা ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হওয়ার যোগ্যতা নেই। পৃষ্ঠার পর আমি পুলিশ প্রশাসনকে দোষ দিই না। এদের উপরও প্রশাসনের চাপ রয়েছে। ওদেরও চাকরি বাঁচাতে হয়।

আমি শুধু এঁদের বলব যে কাজই করুন, মনে রাখবেন আপার কাঁধে অশোকস্তম্ভের চিহ্ন আছে, পদ্মফুলের নয়। আমি তথ্যের উপর নির্ভর করে কথা বলি। চলুন বিতর্ক হোক। সভা আপনি ঠিক করুন। সময় আপনি ঠিক করুন।

আপনি আপনার রিপোর্ট কার্ড নিয়ে যাবেন, আমি আমার রিপোর্ট কার্ড নিয়ে যাব। ১০-০ গোলে হারাতে না পারলে আপনি যা বলবেন, করব। করোনার থেকেও বিপজ্জনক বিজেপি করোনার থেকেও বিপজ্জনক করোনার থেকে বিপজ্জনক ভাইরাস হচ্ছে বিজেপি ভাইরাস এর একটাই ভ্যাকসিন। ভ্যাকসিনের নাম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ডোজ দিতে হবে। একটা নভেম্বর মাসে পুরভোটে। আরেকটা ২০২৩ সালে। ডিসেম্বরে ত্রিপুরা যাবেন দলনেত্রী।

রবিবার আগরতলার রবীন্দ্রভবনের জনসভা থেকে একথা ঘোষণা করে দিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। জানালেন, ত্রিপুরার বিবেকানন্দ ময়দানে সভা করবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ত্রিপুরায় সাংগঠিক শক্তি বাড়িতে তেইশের বিধানসভা নির্বাচনে নতুন করে ঝাঁপিয়ে পড়ার প্রস্তুতি অনেক আগেই শুরু করেছে তৃণমূল।

নিয়মিত সে রাজ্যের মাটি কামড়ে পড়ে থাকছে। তৃণমূলের ছাত্র-যুব নেতৃত্ব। বারবার হামলার মুখেও পড়ছেন তাঁরা। তা সত্ত্বেও লড়াই জারি রেখে একাধিক কর্মসূচি পালন করছেন। ত্রিপুরার লড়াইয়ে ছাত্র-যুবদের সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এগিয়ে দিয়েছেন অভিষেককে। তিনিই সেনাপতি।

আর তাঁর সঙ্গে দলের অভিজ্ঞ বর্ষীয়ান পাঁচ নেতা কুণাল ঘোষ, মলয় ঘটক, শান্তনু সেন, ব্রাত্য বসু, সমীর চক্রবর্তী। প্রত্যেকেই পালা করে করে ত্রিপুরায় যাচ্ছেন, দলীয় বৈঠকে যোগ দিয়ে সংগঠনের কাজ দেখভাল করছেন। এই বিসর্জন পরিস্থিতিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছেও একাধিকবার সাংবাদিকরা প্রশ্ন রেখেছিলেন, তিনি কবে ত্রিপুরা যাচ্ছেন? সুনির্দিষ্ট দিনক্ষণ বলেননি নেত্রী। প্রয়োজনে যাবেন, সে কথাই বারবার উল্লেখ করেছিলেন।

এবার অবশ্য সেই সময় আসন্ন। রবিবার আগরতলার রবীন্দ্রভবনের সভা থেকে অভিষেক বিপ্লব দেবের উদ্দেশে স্পষ্ট ঘোষণা করলেন, বিপ্লববাবু, আপনার ইচ্ছা পূরণ হবে। ডিসেম্বরেই ত্রিপুরায় আসবেন বন্দ্যোপাধ্যায়। বিবেকানন্দ ময়দানে সভা করবেন। পারলে আটকান।

প্রসঙ্গত, বিবেকানন্দ ময়দান ত্রিপুরার অন্যতম বড় সভাস্থল। সেখানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জনসভার পরিকল্পনা যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলে মত রাজনৈতিক মহলের। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের আরও চ্যালেঞ্জ, বারবার আটকানোর চেষ্টা করে কোনও লাভ হবে না।

আমরা ঠিক এখানে এসে কর্মসূচি করব। আর তেইশের পর থেকে তো এখানেই ঘরবাড়ি তৈরি করে থাকব। রবিবার ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলার রবীন্দ্রভবনে জনসভায় বক্তব্য রেখেছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। শুরু থেকেই বিজেপি শাসিত ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেবকে কার্যত কড়া আক্রমণের পথেই হাটলেন তিনি।

তীব্র শ্লেষের সুরে বললেন, আগে এখানে সিপিএমের হার্মাদ ছিল, এখন রয়েছে বিজেপির উন্মাদ। বললেন, বিপ্লব দেব এখন বিগ ফ্লপ দেব। বিপ্লব দেব সরকারকে চ্যালেঞ্জের সুরে তাঁর বক্তব্য, আজ খুঁটিপুজো হল, তেইশে বিসর্জন। অভিষেকের সভার ঠিক আগেরদিন থেকেই ত্রিপুরায় নয়া

কোভিডবিধি জারি করে প্রশাসন বাংলা থেকে ত্রিপুরায় আসতে গেলে আর টি পি সি আর টেস্ট রিপোর্ট বাধ্যতামূলক। তা নিয়ে এদিন বক্তব্যের শুরুতে বিপ্লব দেবের উদ্দেশে কয়েকটি প্রশ্ন ছুঁড়ে দেন।

বলেন, আমাকে আটকাতে ত্রিপুরার সাধারণ মানুষকে কেন ভয় দেখাচ্ছেন? কোভিডবিধিই পালটে দিলেন, ধারা জারি করলেন, অভিষেক কীসের এত ভয় বিপ্লববাবু? ত্রিপুরার প্রশাসনিক কাজকর্মের উদাসীনতার একাধিক খতিয়ান তুলে ধরে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের শ্লেষ, এখানে গণতন্ত্র ধর্ষিত, জঙ্গলরাজ চলছে। দুয়ারে গুন্ডা। পাঠানো হচ্ছে। কাউকে কথা বলতে দেওয়া হচ্ছে না। আর দিল্লির ‘হ্যাঁ’তে ‘হ্যাঁ’ মিলিয়ে ‘জি হুজুর’ বলার রেওয়াজ শুরু হয়েছে। এই কালচার পালটাতে হবে।

তাই আমি বলছি, দুয়ারে গুণ্ডা-এই অবস্থায় পালটে ত্রিপুরায় বাংলার মতো ‘দুয়ারে সরকার’ প্রতিষ্ঠা করব। ২০২৩ সালে ত্রিপুরায় বিধানসভা ভোট। বর্তমান সরকারকে উৎখাত করে বিজেপি বিরোধী সরকার প্রতিষ্ঠাই এই মুহূর্তে তৃণমূলের এক ও একমাত্র লক্ষ্য। কোন ইস্যু নিয়ে ত্রিপুরায় নির্বাচনী রণকৌশল স্থির করছে তৃণমূল, তা অনেকটাই স্পষ্ট করে দিলেন তিনি।

দৃঢ়তার সঙ্গে উচ্চারণ করলেন বেশ কয়েকটি শব্দ। কখনও বললেন, ‘আজ খুঁটিপুজো করলাম, ২০২৩ সালে বিসর্জন।’ কখনও আবার চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে বললেন, ‘কাল কোর্টে জিতেছি, তেইশে ভোটে জিতব।’ কখনও আবার তাঁর গলায় শোনা গেল, ‘আগামী দিনে দিল্লি ত্রিপুরা চালাবে না, ত্রিপুরা দিল্লি চালাবে।

অভিষেকের এই জনসভা একাধিক দিক থেকে তাৎপর্যপূর্ণ। প্রথমত, ত্রিপুরায় অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রথম জনসভা এটাই। নানা বাধাবিপত্তি পেরিয়ে নির্দিষ্ট জায়গায় সভা করার আইনি অনুমতি, বড় জয় বলেই মনে করা হচ্ছে। দ্বিতীয়ত , এই সভাতেই প্রায় ৯ মাস পর দলে ফিরলেন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়।

বিধানসভা ভোটের আগে দলবদলের জন্য ভুল কবুল করে, ক্ষমা চেয়ে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ‘মা’ বলে সম্বোধন করে অভিষেকের হাত থেকে দলীয় পতাকা তুলে নিলেন রাজীব। তৃতীয়ত, রাজীবের পাশাপাশি অভিষেকের হাত ধরে তৃণমূলে যোগ দিলেন বিজেপি ত্যাগী বিধায়ক আশিস দাস। এই সভা থেকেই অভিষেক ত্রিপুরায় কার্যত ভোটের ডঙ্কা বাজিয়ে দিলেন। বললেন, ভাইফোঁটা, কালীপুজোর পর আবার আসব।