ওয়াকফ বিল নিয়ে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে তোপ দাগলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার বিধানসভায় এই বিল নিয়ে সরব হন তিনি। তাঁর অভিযোগ, ওয়াকফ নিয়ে রাজ্য সরকারের সঙ্গে কোনও আলোচনা করেনি কেন্দ্র। পাশাপাশি তিনি জানিয়ে দেন, এই বিলের বিরোধিতা করবে বাংলার শাসকদল। ভারত একটি ধর্মনিরপেক্ষ দেশ। এই দেশ যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো অনুযায়ী চলে। এই কথা মনে করিয়ে তিনি ওয়াকফ বিলের বিরোধিতা করার কথা জানান। মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ, নতুন বিলে মুসলিমদের অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে। তাঁর বক্তব্যে উঠে এসেছে বুলডোজার প্রসঙ্গও। তিনি জানান, জমি পুনরুদ্ধার করতে তিনি বুলডোজার ব্যবহার করবেন না। একইসঙ্গে মমতা সাফ জানিয়ে দেন, লোকসভায় তৃণমূলই ওয়াকফ বিরোধী প্রতিবাদের নেতৃত্ব দিচ্ছে।
ওয়াকফ বোর্ডের বহু জমি নিয়ে একাধিক অভিযোগ রয়েছে। এই সব জমিগুলি বেদখল হয়ে গিয়েছে বলে দাবি করা হচ্ছে। এবিষয়ে মমতার দাবি, ১৯৩৪ সালে দখল করেছে। তখন কে দখল করেছে বলতে পারব না। সেই দখল সরাতে তিনি বুলডোজারের ব্যবহার করবেন না বলে জানিয়ে দেন। একথা বলার সময় বুলডোজার নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের সাম্প্রতিক রায়ের প্রসঙ্গ উল্লেখ করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি জানান, বেদখল হয়ে যাওয়া জমি উদ্ধারের জন্য নোটিশ দেওয়া হয়েছে। তাঁর দাবি, জমি দখলের বিষয়ে ওয়াকফ বোর্ড ট্রাইব্যুনালকে জানিয়েছে।
এদিন বিধানসভায় ওয়াকফ বিল নিয়ে বিজেপি বিধায়ক শিখা চট্টোপাধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে প্রশ্ন করেছিলেন। এরপরই এনিয়ে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে সরব হন মমতা। তাঁর কথায়, ”কোনও ধর্মের ওপর অত্যাচার হলে মানব না। অন্য দেশে কোনও ধর্মের ওপর আক্রমণ হলেও মানি না।” পাশাপাশি তাঁর আমলে সংখ্যালঘুদের উন্নয়নে কী কী কাজ হয়েছে তাঁর খতিয়ান তুলে ধরেন তিনি। তাঁর দাবি, আগে সংখ্যালঘু খাতে বাজেট ছিল ৪৭২ কোটি টাকা। এখন তা ১০ গুণ বেড়ে গিয়েছে। রাজ্যের বেশিরভাগ জেলায় মাইনরিটি সেন্টার করা হয়েছে।
মমতা এদিন বলেন, ‘ওয়াকফ আইনে পরিণত হলে ওয়াকফ ব্যবস্থাই ধ্বংস হয়ে যাবে। এই বিলটির মাধ্যমে ২৬ নম্বর ধারায় প্রদত্ত ধর্মীয় স্বাধীনতার অধিকার ও ১৪ নম্বর ধারায় সাম্যের অধিকার লঙ্ঘিত করা হয়েছে। এই কারণে আমরা এই বিলটির কঠোর প্রতিবাদ করছি। এই বিল এইভাবে নিয়ে এসে রাজ্য বিধানসভাকেও অপমান করা হয়েছে। ওয়াকফ সম্পত্তিতে শুধু মুসলিমরা দান করে, তা নয়। অন্য সম্প্রদায়ের মানুষও দান করে। অনেক উন্নয়নের কাজ হয়। তাঁদের কি বুলডোজার দিয়ে উচ্ছেদ করে দেওয়া হবে এই বিলে এনে?’
উল্লেখ্য, কেন্দ্রের ওয়াকফ বিল ২০২৪ নিয়ে প্রথম থেকেই বিরোধিতা করছে তৃণমূল কংগ্রেস। তাদের মতে, ওই বিল সংবিধানের মৌলিক নীতির পরিপন্থী, গণতান্ত্রিক ও যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর বিরোধী। নতুন ওয়াকফ বিলের বিরোধিতা করছে এই সব দলগুলির সঙ্গে তৃণমূল আলোচনা করেছে কি না তা জানতে চান বিধায়ক হুমায়ুন কবির। জবাবে মুখ্যমন্ত্রী জানান, এসব প্রশ্নের উত্তর এখানে দেওয়া যায় না। বিরোধিতার ক্ষেত্রে তৃণমূল নেতৃত্ব দিয়েছে। তার সঙ্গে অন্য দলগুলিও রয়েছে। সম্প্রতি বিধানসভার চলতি অধিবেশনে কেন্দ্রের ওয়াকফ বিলের বিরোধিতা করে একটি বিল পেশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন মমতা। কিন্তু এই সংক্রান্ত বিল পেশ করা হবে নাকি প্রস্তাব তা এখনও জানা যায়নি। এ সম্পর্কে জানতে ইতিমধ্যেই তৎপরতা শুরু করেছেন অমিত শাহর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক।