• facebook
  • twitter
Wednesday, 2 April, 2025

কলকাতায় ফিরলেন মমতা, ছয় দিনের বিলেত সফরে খুশি মুখ্যমন্ত্রী

প্রতিটি সংস্থার সঙ্গে পৃথক বাণিজ্য বৈঠকও করেছেন। সব ঠিকঠাক থাকলে টেকনোর সঙ্গে জোট বেঁধে বাংলায় ফুটবলার তৈরির স্কুল গড়বে ম্যানসিটি।

বিলেত সফর শেষে কলকাতায় ফিরলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

ছয় দিনের লন্ডন সফর সেরে অবশেষে শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা নাগাদ কলকাতায় ফিরলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিমানবন্দরে তাঁকে স্বাগত জানাতে ভিড় করেন দলের কর্মী, সমর্থকরা। দমদম বিমানবন্দরে নামতেই তাঁকে নিয়ে উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়েন তাঁরা। স্লোগান ওঠে– ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জিন্দাবাদ!’ তাঁদের দেখে হাত নাড়িয়ে অভিবাদন গ্রহণ করেন মুখ্যমন্ত্রী।

এদিন কলকাতা বিমানবন্দরে নেমে মমতা সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেননি। তিনি সোজা গাড়িতে উঠে চলে যান। বোঝাই যাচ্ছে, তিনি লন্ডনের টানা কর্মসূচি এবং বিমান যাত্রায় ক্লান্ত। তাছাড়া সামনেই ঈদ। সেটা নিয়েও রাজ্য জুড়ে ব্যস্ততা শুরু হয়ে যাবে। তবে শহরে ফিরে সাংবাদিকদের সঙ্গে সেভাবে কথা না বললেও বিমানে ফেরার সময় তাঁর সফরসঙ্গীদের সঙ্গে অনেক কথা বলেছেন। তাতেই স্পষ্ট, এবারের লন্ডন সফরে যথেষ্ট সন্তুষ্ট মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

প্রসঙ্গত তাঁর লন্ডনে রওনা হওয়ার নির্ধারিত দিন ২৩ মার্চ হলেও হিথরো বিমানবন্দরে উড়ান পরিষেবার গোলমালের জেরে তিনি ২২ মার্চ রওনা হয়ে যান। অবশেষে আজ ২৯ তারিখ তিনি রাজ্যে ফিরলেন। লন্ডনে ছিলেন ছয়দিন। মাঝে দুইদিন আকাশপথে যাতায়াতে কেটে গিয়েছে। এই টানা ছয়দিনের সফরে শিল্প বৈঠক থেকে শুরু করে অক্সফোর্ডে ভাষণ সহ মুখ্যমন্ত্রীর একাধিক গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচি ছিল লন্ডনে। তারই মধ্যে বাণিজ্য সম্মেলনের দিনেই ইংলিশ ফুটবল ক্লাব ম্যাঞ্চেস্টার সিটির সঙ্গে মউ স্বাক্ষর করেছে টেকনো গ্রুপ। টেকনোর পক্ষে মউ সই করেন সংস্থার কর্ণধার সত্যম রায়চৌধুরীর পুত্র দেবদূত রায়চৌধুরী। সব ঠিকঠাক থাকলে টেকনোর সঙ্গে জোট বেঁধে বাংলায় ফুটবলার তৈরির স্কুল গড়বে ম্যানসিটি। এছাড়া প্রতিটি সংস্থার সঙ্গে পৃথক বাণিজ্য বৈঠকও করেছেন।

মমতা লন্ডনে ভারতীয় হাই কমিশনে গিয়েও রাজ্যের সঙ্গে সম্পর্কিত বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা সেরেছেন। সেই আলোচনায় বিশেষভাবে গুরুত্ব পায় সপ্তাহে অন্তত দুইবার লন্ডন-কলকাতা সরাসরি বিমান পরিষেবার বিষয়। পরে শিল্প বৈঠকেও সেখানকার উড়ান সংস্থাকে এই প্রস্তাব দেন। এছাড়া অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাষণের মাঝে তিনি বাংলাতে কীভাবে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস করা যায় সে বিষয়েও উদ্যোগ নিয়েছেন।

তবে এই সফরে মমতার মূল লক্ষ্য ছিল রাজ্যে লগ্নি আনা এবং কর্মসংস্থান বাড়ানো। সেই লক্ষ্যে অনেকটাই সফল হয়েছেন তিনি। তাঁর এই বাণিজ্য বৈঠকের নির্যাস থেকে জানা গিয়েছে, লন্ডনে যে বাণিজ্য সম্মেলন হয়েছে, তা গত মাসে কলকাতায় অনুষ্ঠিত বিশ্ব বঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনের সূত্র ধরেই এগিয়েছে। কারণ বিশ্ব বঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনে ব্রিটেনের বিভিন্ন ক্ষেত্রের শিল্পপতিরাও ছিলেন। ছিলেন বাংলায় ব্যবসা করা বাঙালি-অবাঙালি শিল্পপতিরাও। প্রতিনিধি দলে ছিলেন, ধানসেরি ভেনচার্সের এগ্‌জ়িকিউটিভ চেয়ারম্যান চন্দ্র কুমার ধানুকা, অম্বুজা নেওটিয়া গ্রুপের চেয়ারম্যান হর্ষ নেওটিয়া, গ্রাফিতি ইন্ডিয়ার চেয়ারম্যান কেকে বাঙুর, টেগা ইন্ডাস্ট্রিজ়ের মেহুল মোহানকা, শ্রী সিমেন্টের ভাইস চেয়ারম্যান তথা বাংলায় ফিকির চেয়ারম্যান প্রশান্ত বাঙুর, জিইইসিএলের ভাইস চেয়ারম্যান তথা এমডি প্রশান্ত মোদী, লক্ষ্মী গ্রুপের চেয়ারম্যান রুদ্র চট্টোপাধ্যায়, প্যাটন ইন্টারন্যাশনালের এমডি সঞ্জয় বুধিয়া, সিস্টার নিবেদিতা বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য সত্যম রায়চৌধুরী, আরপি সঞ্জীব গোয়েন্কা গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান শাশ্বত গোয়েন্কা, রিলায়্যান্স ইন্ডাস্ট্রিজ়ের প্রেসিডেন্ট তরুণ ঝুনঝুনওয়ালা, জেনেসিসের কর্ণধার উজ্জ্বল সিন্হা, টিটাগড় রেলওয়ে সিস্টেমের এমডি উমেশ চৌধুরী, ফিকির ডিজি জ্যোতি ভিজ, ফিকির ডেপুটি সেক্রেটারি জেনারেল মৌসুমী ঘোষ।

প্রসঙ্গত যে কোনও বিনিয়োগকারীর কাছেই পরিবেশ, শ্রমিকের মান এবং যোগাযোগ ব্যবস্থা বিনিয়োগ বা শিল্প স্থাপনের আদর্শ মানদন্ড বা সূচক হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে। ব্রিটেনের বাণিজ্য বৈঠকে সেই তিন গুরুত্বপূর্ণ সূচকের কথাই উল্লেখ করেছেন দূরদর্শী মমতা। সেই সঙ্গে আগের বাম সরকারের সময়ের থেকে বর্তমানে তৃণমূল নেতৃত্বাধীন সরকারের সময়ে অবস্থার কতটা উন্নতি হয়েছে সেই কথাও তুলে ধরেন শিল্পপতিদের সামনে। তিনি বাম আমলের ধর্মঘটের সংস্কৃতির কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘আগের সরকারের সময়ে ধর্মঘটের কারণে অনেক কর্মদিবস নষ্ট হত। কিন্তু আমরা বন্‌ধের সংস্কৃতিই বন্ধ করে দিয়েছি। এখন আর বাংলায় কোনও শ্রমদিবস নষ্ট হয় না।’