মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যের ক্ষমতায় আসার পর তাঁর বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়ে বিরোধীদের কুৎসা রটানোর অভিযোগ নতুন নয়। অতীতেও বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছেন মুখ্য়মন্ত্রী। আসন্ন ২৩ মার্চ মমতার লন্ডন সফর নিয়ে ফের বিজেপি ও বামেদের বিরুদ্ধে বিভিন্নভাবে কুৎসা রটানোর অভিযোগ উঠেছে। শুধু তাই নয়, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিদেশ সফরকালে সেখানে তাঁকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখাতে পারেন প্রবাসী ভারতীয়রা। এমন সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। সম্প্রতি সাংবাদিকদের কাছে এমন খবর পেয়েছেন তিনি। এর মধ্যে বিরোধীদের চক্রান্তের গন্ধ পাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছেন তৃণমূল সুপ্রিমো। তিনি বিরোধীদের নোংরা রাজনীতি নিয়ে মুখ খুলেছেন। বৃহস্পতিবার এর জবাবে মমতা বলেন, ‘হিংসার কোনও ওষুধ নেই, কুৎসার কোনও ওষুধ নেই, ওদের ওষুধ মানুষের জবাব।’
প্রসঙ্গত মমতার আসন্ন লন্ডন সফরে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচি রয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম সেখানকার তিনটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে আমন্ত্রণ পেয়েছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। সেখানে ভাষণ দেবেন বাংলার অগ্নিকন্যা। সেজন্য ২১ মার্চ দুবাই হয়ে লন্ডন সফরে যাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের কেলগ কলেজে ভাষণ দেবেন তিনি। একই সঙ্গে কুইন মেরি ইউনিভার্সিটি অফ লন্ডন থেকেও আমন্ত্রণপত্র এসেছে তাঁর কাছে। লন্ডনের বণিকসভাতেও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে পারেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর সঙ্গে যাচ্ছেন রাজ্যের মুখ্য সচিব মনোজ পন্থ। মুখ্যমন্ত্রী তাঁর এই সফরের আগে বৃহস্পতিবার একটি সাংবাদিক বৈঠক করেন। সেই বৈঠকে একজন সাংবাদিক বলেন, বিদেশ সফরকালে সেখানে তাঁকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখানোর সম্ভাবনা রয়েছে। এমন একটি আগাম খবর পাওয়া গিয়েছে। সেই প্রশ্নের জবাবে মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যের বিরোধী রাজনৈতিক দল বাম ও বিজেপির বিরুদ্ধে সরব হন। তাদের বিরুদ্ধে কুৎসা রটানোরও অভিযোগ আনেন।
মুখ্যমন্ত্রী ওই সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘তাহলে তো আমারই লাভ। পাবলিসিটি পাব। বিদেশ সফরে আমি ভারতের প্রতিনিধিত্ব করি। বাংলার হয়ে যাই। আমার অসম্মান মানে, বাংলার অসম্মান। যাঁরা ডেকেছেন তাঁদের অপমান করা হবে।’
এরপরই এই বিষয়টি নিয়ে রাজ্যের বিরোধী রাজনৈতিক দল বাম ও বিজেপি-কে নিশানা করেন মমতা। তিনি বিরোধীদের তোপ দেগে বলেন, ‘আগেও করেছে। ২০১৫ সালে করেছিল, ১৬-তে জবাব পেয়েছে। ২০২৫-এ করবে, ২৬-এ জবাব পাবে। হিংসার কোনও ওষুধ নেই, কুৎসার কোনও ওষুধ নেই, চক্রান্তের কোনও ওষুধ নেই, এদের ওষুধ একটাই, মানুষের জবাব। মানুষ এদের উত্তর দেবে।’
এদিকে এই বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছেন তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ। তিনি সামাজিক মাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছেন। কুণাল অভিযোগ করেছেন, মুখ্যমন্ত্রীর লন্ডন সফর নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা করা হয়েছিল। এজন্য ভুয়ো খবর ছড়িয়ে অপপ্রচার করার চেষ্টা চালিয়েছেন তাঁরা। কিন্তু সফল না হওয়ায় কিছু ‘অতৃপ্ত আত্মা’ এবার বিদেশের মাটিতে বাংলাকে বদনাম করার চেষ্টা করছেন। মমতার লন্ডন সফরে বিক্ষোভের নামে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা চালাতে পারে বাম, অতিবাম ও বিজেপি সমর্থিত মুষ্টিমেয় কিছু মানুষ। এর মধ্যে কলকাতা ও দিল্লির কিছু রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের মদতের গন্ধ পাচ্ছেন কুণাল।
বুধবার এক্স-এ তিনি পোস্ট করেছেন, ‘মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীর লন্ডন সফর, বিশেষত অক্সফোর্ডের আমন্ত্রণে সেখানে ভাষণ দিতে যাওয়া যারা সহ্য করতে পারছে না, কুৎসার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছে; তাদের একাংশ এখন তাঁর লন্ডন সফর চলাকালীন বিক্ষোভের নামে বিশৃঙ্খলা করে বাংলা সম্পর্কে মিথ্যা প্রচারের ষড়যন্ত্র করছে। বিদেশে গিয়ে থাকা পুরনো বাম, অতিবাম, তৎকাল বিজেপির কিছু লোক এতে যুক্ত। এরা অন্ধ তৃণমূল বিরোধিতা থেকে মুখ্যমন্ত্রীর সফরের সময় অশান্তি করতে চাইছে। দশ-পনেরোটা লোক নিয়ে ছবি তুলে অপপ্রচার। এরা বাংলা সম্পর্কে মিথ্যার ডালি সাজিয়ে বিভিন্ন গ্রুপে প্ররোচনা দিচ্ছে।’
কুণাল বিষয়টি নিয়ে বিরোধীদের হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, ‘বাংলাকে বদনামের এই চক্রান্ত হলে গণতান্ত্রিক ভাষাতেই জবাব হবে। যারা আর জি কর নিয়ে পরের পর কুৎসা করেছে, যারা যাদবপুরে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর গাড়িতে হামলা করে, তাদের ঘরানার বিকৃত মানসিকতার কিছু লোক এখন লন্ডনে মুখ্যমন্ত্রীর সফরে কিছু করে ছবি তুলে নাটকের পরিকল্পনা করছে। ইমেল, কিছু গ্রুপের মাধ্যমে মিথ্যা বলে প্ররোচনা ছড়ানো হচ্ছে।’
তাঁর আরও অভিযোগ, ‘বাম, অতি বাম ও বিজেপির কিছু সমর্থক হাত মিলিয়ে ষড়যন্ত্রে সামিল। তাদের কিছু নিজস্ব প্রস্তুতির ই-মেল হাতে এসেছে। গুটিকতক বিকৃতমস্তিষ্ক ও ভাড়াটে লোক জুটিয়ে এরা বিদেশে বাংলাকে বদনাম করতে চায়। যদি বাংলার মেয়ের বিশ্বের দরবারে উন্নয়নের মডেল তুলে ধরার সফরে কোনওরকম অসভ্যতার চেষ্টা হয়, বাংলায় তার জবাব মিলবে, ভোটে মানুষ বিরোধীদের আরও মুছে দেবেন। বাংলার মানুষ গণতান্ত্রিক পথেই জবাব দেবেন। বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর সফরে আপত্তিজনক কাজ করে বিদেশে বাংলাকে অপমান সহ্য করবেন না বাংলার মানুষ।’