বৃহস্পতিবার কৃষ্ণনগর রবীন্দ্রভবনে সরকারি আধিকারিক, প্রশাসনিক কর্তা ও জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে ঘণ্টা দেড়েক সময় নিয়ে প্রশাসনিক বৈঠক সারলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সাড়ে বারোটা নাগাদ লাল-সাদা কপ্টারে কৃষ্ণনগর গভ.কলেজ মাঠে নামলেন মমতা।
বৈঠকে প্রথমেই খবর নিলেন কোভিড, ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু নদিয়ায় নিয়ন্ত্রণে আছে তো? স্বাস্থ্য কর্তাদের নির্দেশ দিলেন করোনার তৃতীয় ঢেউ যাতে না আসে দেখতে হবে। কৃষক বন্ধু প্রকল্প, লক্ষ্মীভান্ডার, দুয়ারে সরকার ঠিকঠাক চলছে কি না খোঁজ নিলেন।
ঘোষণা করলেন, ১লা জানুয়ারি মা মাটি দিবসের পাশাপাশি ছাত্র দিবস হিসাবেও পালিত হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ১ থেকে ৭ জানুয়ারি তা পালন করতে হবে। মোট ৩৪ টি প্রকল্পের উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী। যার প্রস্তাবিত অর্থমূল্য ৬৪৯৫.৭৫ লক্ষ টাকা। এই প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে কল্যাণী হরিণঘাটায় পানীয় জল প্রকল্প। ২০২৪ সালের মধ্যে ঘরে ঘরে পানীয় জল পৌঁছবে বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী।
প্রশাসনিক বৈঠকের মধ্যেই পুর নির্বাচন, আইন শৃঙ্খলা সবই আলোচনায় চলে আসে। গত বিধানসভা নির্বাচনে কৃষ্ণনগর শহর কেন্দ্রিক উত্তর বিধানসভায় বিজেপির প্রতীকে মুকুল রায় জয়ী হন।
এদিন মুকুলকে মমতার অনেকটা পিছনে কারামন্ত্রী উজ্জ্বল বিশ্বাসের পাশে মঞ্চে দেখা গেল বেশ কিছুদিন ধরে কৃষ্ণনগরের সাংসদ মহুয়া মৈত্র বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন।
গত বিধানসভার আগে দু-পয়সার সাংবাদিক বলে বিতর্কে জড়ান কৃষ্ণনগর তথা নদিয়া জেলার রাজনীতিতে তৃণমুলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব স্পষ্ট। শংকর সিংয়ের মতো বর্ষীয়ান নেতারা অনেকটাই কোণঠাসা।
এদিন মমতা সরাসরি মহুয়াকে নিশানা করে বলেন, ‘মহুয়া মৈত্রকে বলছি, কে কার পক্ষে বিপক্ষে আমার দেখার দরকার নেই। ছুদিন এগুলো চলতে পারে চিরকাল নয়। একজন লোক চিরকাল এক জায়গায় থাকবে তাও নয়। স্বভাবতই মমতার এই মন্তব্যে দলে মহুয়ার বিরোধী শিবির খুশি। অনেকেই বলছেন আগামী লোকসভায় কৃষ্ণনগরে মহুয়ার টিকিট পাওয়া নিয়ে প্রশ্নচিহ্ন উঠে গেল।
মুখ্যমন্ত্রীর কথায় বারবার উঠে আসে, সব কাজই হয়ে গিয়েছে। নতুন করে দেওয়ার আর কিছু নেই। নবদ্বীপের বিধায়ক পুন্ডরীকাক্ষ সাহা, নাকাশিপাড়ার বিধায়ক কল্লোল খাঁ, তেহট্টের বিধায়ক তাপস সাহা, মন্ত্রী উজ্জ্বল বিশ্বাস, জেলা পরিষদের সভাধিপতি রিক্তা কুন্ডু সহ জনপ্রতিনিধিদের প্রায় সকলেই মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্যকে সমর্থন করেন।
শান্তিপুরে উপনির্বাচনে জয়ী ব্রজকিশোর গোস্বামী শাস্তিপুর হাসপাতাল ও গঙ্গা ভাঙন রোধে মুখ্যমন্ত্রীর স্নেহময়ী দৃষ্টি দাবি করেন। ভাঙন নিয়ে মমতা বলেন, ‘ওটা কেন্দ্রের ব্যাপার। আমরা তদবির করব।’
এদিন জাতীয় সড়ক সম্প্রসারণের কাজ ঢিলেতালে হওয়ার প্রসঙ্গটি আলোচনায় ওঠে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এটা কেন্দ্রীয় সরকারের কাজ। সব জায়গায় জাতীয় সড়কের কাজ ধীরে হচ্ছে।’
করিমপুরের বিধায়ক বিমলেন্দু সিংহ রায় ও ডিএম-এসপি-র উদ্দেশ্যে মমতা বলেন, ‘বর্ডারে সজাগ দৃষ্টি রাখবেন কোনভাবেই বিএসএফ যেন পুলিশের অনুমতি ছাড়া না ঢুকতে পারে।
বিএসএফ যেন সাধারণ মানুষের উপর অত্যাচার না করে দেখতে হবে। চেম্বার অফ কমার্সের প্রতিনিধিদের মুখ্যমন্ত্রী জানান, ‘সামনে ২৮ ডিসেম্বর শিল্প প্রতিনিধিদের নিয়ে সিনার্জি হবে। এবার থেকে স্কুলের বাচ্চাদের পোশাক শান্তিপুর-ফুলিয়ার টেক্সটাইল হাব থেকে তৈরি হবে।
তাঁতিদের তিন বছরের অর্ডার একেবারে দিয়ে দেওয়া হবে। এর জন্য নতুন মেশিনও আসছে। ২১২ কোটি টাকা বরাদ্দ হচ্ছে। আমরা বিক্রি করতে পারছি না তাঁতিদের একথা বলার আর জায়গা থাকবে না” হরিণঘাটা-ফুলিয়া দুগ্ধ প্রকল্প মুখ থুবড়ে পড়েছে।
কিষাণ মিল্ক ইউনিয়ন দৈনিক ১২ হাজার লিটার দুধ সংগ্রহ করত। এখন সেটা পাঁচশো লিটারে নেমে এসেছে। এটাকে আগের চেয়েও উন্নত করার চেষ্টা হচ্ছে ও ডেয়ারি বুথ তৈরি হবে বলে নদিয়া জেলাশাসক জানান। পাটচাষ ও শিল্পকে উন্নত করে বিদেশি মুদ্রা অর্জনের পথ সুগম করার কথা বলেন নদিয়া জেলা চেম্বার অব কমার্সের প্রতিনিধিরা।