স্যালাইন কাণ্ডের তদন্তভার সিআইডির হাতে তুলে দিল রাজ্য। মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের প্রসূতিদের নিম্নমানের স্যালাইন দেওয়ার অভিযোগ বা চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ প্রমাণিত হলে দোষীদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ। সম্প্রতি স্যালাইন কাণ্ড খতিয়ে দেখে প্রাথমিক রিপোর্ট দিয়েছে স্বাস্থ্য ভবনের তদন্তকারী কমিটি। সিআইডির পাশাপাশি স্যালাইন কাণ্ডের তদন্ত সম্পন্ন করবে এই তদন্তকারী কমিটিও। সোমবার স্যালাইন কাণ্ড নিয়ে মুখ্যসচিব, স্বাস্থ্যসচিব সহ ১০ জনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৈঠকে তিনি জানান, মৃত্যুকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত কাউকে রেয়াত করা হবে না। পাশাপাশি এ বিষয়ে কোনও গাফিলতিও বরদাস্ত করা হবে না।
এই বৈঠকের পর নবান্নে একটি সাংবাদিক বৈঠক করে মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ জানান, প্রসূতি মৃত্যুর পিছনে চিকিৎসকদের গাফিলতিও থাকতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। বিস্তারিত রিপোর্টের অপেক্ষা করা হচ্ছে। রিপোর্ট হাতে এলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কাউকে ছেড়ে কথা বলা হবে না। এদিন নবান্নে আয়োজিত বৈঠকে স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণ স্বরূপ নিগমকে একাধিক প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়েছে। তাঁর ভূমিকা নিয়ে মিটিংয়ে প্রশ্ন উঠেছে। স্বাস্থ্যসচিবের ভূমিকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও।
উল্লেখ্য, মেদিনীপুর মেডিক্যালে একই দিনে অস্ত্রোপচার করিয়ে সন্তানের জন্ম দিয়েছিলেন পাঁচ প্রসূতি। এরপরই তাঁরা প্রত্যেকে অসুস্থ হয়ে পড়েন। শুক্রবার সকলে অসুস্থ এক প্রসূতির মৃত্যু হয়। তাঁর নাম মামণি রুইদাস (২২)। বাকিদের মধ্যে গুরুতর অসুস্থ ৩ প্রসূতিকে রবিবার কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। বর্তমানে তাঁদের সেখানেই চিকিৎসা চলছে। মৃত ও অসুস্থ রোগীদের পরিবারের অভিযোগ, প্রসূতিদের চিকিৎসায় নিম্নমানের স্যালাইন ব্যবহার করা হয়েছিল। এই কারণেই একজনের মৃত্যু হয়েছে এবং বাকিরা গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। অভিযোগ প্রকাশ্যে আসতেই একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে দেন রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তর। এই কমিটি মেদিনীপুর মেডিক্যালে গিয়ে ঘটনার তদন্ত করে আসে। পাশাপাশি হাসপাতালে অধ্যক্ষ ও স্ত্রীরোগ বিভাগের বিভাগীয় প্রধানকে এসএসকেএমে ডেকে পাঠিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। সম্প্রতি এই তদন্ত কমিটি একটি প্রাথমিক রিপোর্ট পেশ করেছে। এই রিপোর্ট অনুযায়ী, মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে প্রসূতিদের চিকিৎসার সময় নির্ধারিত নিয়ম মানা হয়নি। মূলত সিনিয়র চিকিৎসকদের উপস্থিতিতেই জুনিয়র ডাক্তাররা যে কোনও ধরনের চিকিৎসা করতে পারেন। কিন্তু মৃত ও অসুস্থ প্রসূতিদের চিকিৎসার ক্ষেত্রে সেই নিয়ম মানা হয়নি।
এই রিপোর্টের কথা উল্লেখ করে মুখ্যসচিব জানান, এই ঘটনায় কোনও গাফিলতি বরদাস্ত করা হবে না। প্রাথমিক রিপোর্টের ভিত্তিতে বিস্তারিত তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট হাতে পেলে তবেই পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। সেই রিপোর্টের ভিত্তিতেই অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। কাউকে রেয়াত করা হবে না বলেও এদিন হুঁশিয়ারি দিয়েছেন মুখ্যসচিব। প্রায় আট মাস আগে স্বাস্থ্য দপ্তরের নির্দেশে সরিয়ে রাখা হয়েছিল রিঙ্গার্স ল্যাকটেট স্যালাইন। আর এই স্যালাইন মেদিনীপুর মেডিক্যালে প্রসূতিদের শরীরে ব্যবহারের পরই মৃত্যু ও অসুস্থ হওয়ার ঘটনা প্রকাশ্যে আসে। যদিও এই স্যালাইনের কারণেই ওই পাঁচ প্রসূতি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন কি না তা এখনও সম্পূর্ণভাবে স্পষ্ট নয়। এ বিষয়ে তদন্ত করে দেখছেন ১৩ সদস্যের একটি তদন্তকারী দল। রিঙ্গার্স ল্যাকটেট স্যালাইন পশ্চিমবঙ্গ ফার্মাসিউটিক্যাল নামে এক কোম্পানির তৈরি। বর্তমানে এই কোম্পানির তৈরি সব স্যালাইন সরকারি হাসপাতালে ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে স্বাস্থ্য দপ্তর।