• facebook
  • twitter
Friday, 22 November, 2024

উৎসবে গোয়েন্দাদের সতর্ক থাকার নির্দেশ মমতার

দানা–পরবর্তী পরিস্থিতিতে তৎপর প্রশাসন

প্রায় ২৮ ঘণ্টা নবান্নে থাকলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সারা রাত জেগে ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’ মোকাবিলায় পরিস্থিতির উপর নজর রাখলেন তিনি। শুক্রবার সকালেও তাঁকে সক্রিয় ভূমিকায় দেখা গেল। নবান্নে বসেই দুই মেদিনীপুর, দুই ২৪ পরগনা, হুগলি, ঝাড়গ্রাম, বাঁকুড়া সহ ৭টি জেলার জেলাশাসকের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী। জেলাশাসকদের থেকে সংশ্লিষ্ট জেলাগুলির পরিস্থিতি সম্পর্কে খোঁজ নিলেন মমতা। ঘূর্ণিঝড় সম্পর্কিত সমগ্র পরিস্থিতি নিয়ে দুপুরেও প্রশাসনিক আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি।

বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে ওড়িশায় আছড়ে পড়ে ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’। তবে আশঙ্কা থাকলেও পশ্চিমবঙ্গের উপর ঘূর্ণিঝড়ের তেমন প্রভাব পড়েনি। কিন্তু তা সত্ত্বেও ঘূর্ণিঝড়–পরবর্তী পরিস্থিতি সামলাতে কোনও ফাঁক রাখতে চাইছেন না মমতা। বৃহস্পতিবার সারা রাত নবান্নে থেকে পরিস্থিতির উপর নজরদারি চালিয়েছিলেন তিনি। শুক্রবার দুপুরে জেলা প্রশাসনের আধিকারিকদের থেকে সংশ্লিষ্ট জেলাগুলির পরিস্থিতি সম্পর্কে খোঁজখবর নেন মুখ্যমন্ত্রী। ঝড়–বৃষ্টির পরবর্তী প্রভাব নিয়ে কোনও শিথিলতা রাখতে চাইছেন না তিনি। একথা এদিন দুপুরে নবান্নের বৈঠক থেকে রাজ্য প্রশাসনকে জানিয়ে দিয়েছেন মমতা। দানার উপর নজরদারির জন্য বৃহস্পতিবার থেকে নবান্নেই ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৪টে নাগাদ তিনি সেখান থেকে বেরিয়ে যান। প্রায় ২৮ ঘণ্টার বেশি সময় তিনি নবান্নেই ছিলেন।

শুক্রবার দুপুরে দানা সংক্রান্ত পর্যালোচনা বৈঠকে বসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। ঝড় থেকে সামান্য রেহাই মিললেই বৃষ্টি থেকে রেহাই পায়নি পশ্চিমবঙ্গের একাধিক এলাকা। এই কারণে সামগ্রিকভাবে গোটা রাজ্যের জন্যই প্রশাসনিক আধিকারিকদের একাধিক নির্দেশ দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিশেষ করে পূর্ব মেদিনীপুর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার পরিস্থিতির উপর নজর দিতে বলেন। মমতা এদিন জানান, ঝড়বৃষ্টিতে বহু চাষির ক্ষতি হয়েছে। কৃষকদের কত ক্ষতি হয়েছে তা যাচাই করতে সমীক্ষা করানোর নির্দেশ দেন তিনি। বিভিন্ন ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় নেওয়া মানুষজন যাতে এখনই নিজেদের বাড়িতে না ফেরেন, তা নিশ্চিত করতে জেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দেন। পাশাপাশি জমা জল থেকে মশাবাহিত বিভিন্ন রোগের প্রাদুর্ভাবের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে মশারি বিতরণের নির্দেশ দেন মমতা।

তাঁর কথায়, ‘যেখানে ম্যালেরিয়ার প্রকোপ রয়েছে, সেখানে মশারি দিতে হবে।’ আবহাওয়ার পুরোপুরিভাবে উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত ত্রাণ শিবির ও মেডিক্যাল ক্যাম্পগুলি চালানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পর্যাপ্ত পরিমাণে ত্রাণ মজুত রাখার বিষয়টিও নজরে রাখতে বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। টেলি মেডিসিন পরিষেবা কার্যকর করা যায় কি না তা–ও খতিয়ে দেখার নির্দেশ দিয়েছেন। দুর্যোগে যাদের বাড়ি ঘর ভেঙে গিয়েছে তাঁদের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় আরও দুদিন জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা দল ও রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা দলের কর্মীদের মোতায়েন রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

ফের এদিন কেন্দ্রের বিরুদ্ধে তোপ দাগেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর দাবি, দুর্যোগের ক্ষেত্রে রাজ্যকে কোনও রকমভাবে সাহায্য করে না কেন্দ্র। এদিন ডিভিসিকেও আক্রমণ করেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘ঝাড়খণ্ডে বৃষ্টি হলেই ডিভিসি জল ছাড়ছে।’ মুখ্যমন্ত্রী এদিন আরও বলেন, ‘একজনের মৃত্যুর খবর পেয়েছি। সেটাও খুব দুর্ভাগ্যজনক। উনি বাড়িতে কেবল তার নিয়ে কাজ করছিলেন।’

কামারহাটি সহ রাজ্যের অন্য কোনও এলাকায় সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা যাতে ছড়িয়ে না পড়ে তা নিয়ে নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর অভিযোগ, কলকাতায় সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ছড়ানোর পরিকল্পনা করা হচ্ছে। তাঁর কথায়, ‘কয়েকজন দুষ্টু লোক আছে। শুধু দুষ্টুমির প্ল্যান করে। সেই প্ল্যান ভেস্তে দিতে হবে। আইবি, এসটিএস ও পুলিশ আধিকারিকদের সোর্সকে ভালোভাবে কাজে লাগাতে হবে। গতকাল হাওড়ায় ঝড় বৃষ্টির সময় একজনকে খুন করে দিয়ে চলে গেল। আবহাওয়ার এরকম পরিস্থিতিতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উপর নজর দিতে হবে।’
এরপর পাঁচের পৃষ্ঠায়