• facebook
  • twitter
Saturday, 23 November, 2024

কলকাতা পুরভোটে ‘খেলা হবে’, প্রার্থী তালিকায় ভারসাম্য রাখলেন মমতা

প্রার্থী তালিকা প্রকাশ হওয়ার আগে থেকেই বেশ কিছু জায়গায় দেওয়াললিখন শুরু করে দিয়েছিল শাসক দল তৃণমূল। অনেক জল্পনার পর প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করা হল।

প্রার্থী তালিকা প্রকাশ হওয়ার আগে থেকেই বেশ কিছু জায়গায় দেওয়াললিখন শুরু করে দিয়েছিল শাসক দল তৃণমূল। অবশেষে শুক্রবার দিনভর জল্পনার পর প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করা হল। চারজন বিধায়কের নাম নিয়ে জল্পনা ছিল।

‘এক ব্যক্তি এক পদ’ নীতির কথা ঘোষণা করেছিল তৃণমূল। তাই ফিরহাদ হাকিম সহ ৪ বিধায়ককে পুরভোটে টিকিট দেওয়া হবে কি না, তা নিয়ে জল্পনা ছিল।

শুক্রবার সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় জানালেন, প্রশাসকমণ্ডলীতে থাকা ৪ বিধায়কের পাশাপাশি আরও ২ বিধায়ককে প্রার্থী তালিকায় জায়গা দেওয়া হয়েছে। রত্না চট্টোপাধ্যায় প্রার্থী হচ্ছেন পুরভোটে।

সেই সঙ্গে বিধায়ক পরেশ পালও প্রার্থী হচ্ছেন বলে জানা যাচ্ছে। এদিন সাংবাদিক বৈঠকে তৃণমূল কংগ্রেসের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, দলের প্রয়োজনে বিধায়ককেই তালিকায় রাখা হয়েছে।

এছাড়া, সাংসদ হওয়া সত্ত্বেও টিকিট দেওয়া হচ্ছে মালা রায়কে। তবে প্রার্থী তালিকায় নাম নেই রাজ্যসভার সাংসদ শান্তনু সেনের। তাঁর স্ত্রীকে টিকিট দেওয়া হয়েছে বলে সূত্রের খবর। মনে করা হচ্ছে, অভিজ্ঞতার কথা মাথায় রেখেই ওই চার বিধায়ক প্রশাসককে টিকিট দেওয়া হচ্ছে।

কারণ পুরসভায় তাদের দীর্ঘদিনের কাজ অভিজ্ঞতা রয়েছে। যদিও ১৪৪ টি আসনের মধ্যে ৮৭ জনকে পুনরায় মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৭৮ জন নিজের ওয়ার্ডেই টিকিট পাচ্ছেন, বাকিদের ওয়ার্ড বদল হয়েছে। টিকিট পাননি ৩৯ জন।

বিভিন্ন কারণে তাদের বাদ দেওয়া হয়েছে। যে ৩৯ জনকে টিকিট দেওয়া হচ্ছে না, সেখানে নতুন প্রার্থীর নাম থাকছে। পাশাপাশি যে ওয়ার্ডগুলিতে তৃণমুল ক্ষমতায় করার নেই, সেখানে আরও ১৮ জন নতুন প্রার্থীর নাম বলা হবে।

অর্থাৎ এবার কলকাতা পুরসভার তৃণমূলের প্রার্থী তালিকায় মোট ৫৭ জন নতুন প্রার্থী স্থান পাচ্ছেন। সংখ্যালঘু প্রার্থী থাকছেন ২৩ জন ও ৪৫ শতাংশ মহিলা টিকিট পেয়েছেন। ১৪৪ টি ওয়ার্ডে ৮০ জন পুরুষ এবং ৬৪ জন মহিলা প্রার্থী হচ্ছেন। ৬ জন কাউন্সিলরের ওয়ার্ড পরিবর্তন হচ্ছে।

যদিও কলকাতা পুরভোটে শাসক দলের ৩৯ জন কাউন্সিলর ফের ভোটে লড়ার সুযোগ না পেলেও বাদ গেলেন না কলকাতার প্রাক্তন মেয়র ফিরহাদ হাকিম সহ ছয় বিধায়ককে।

তাদের মধ্যে রয়েছেন প্রাক্তন মেয়র পারিষদ দেবাশিস কুমার, দেবব্রত মজুমদার এবং প্রাক্তন ডেপুটি মেয়র অতীন ঘোষ। তবে পুরো বিষয়টিই ছিল তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুমোদন সাপেক্ষ। দেখা গেল, মমতার অনুমোদন পায়নি সেই সিদ্ধান্ত। মমতা আবার বেছে নিয়েছেন তার পুরনো দিনের লড়াইয়ের সাথীদেরই।

প্রার্থীতালিকায় শেষ মহূর্তের রদবদলের কারণেই ছাপানো প্রার্থীতালিকা প্রকাশ করতে খানিক বিলম্ব হয়ে যায় তৃণমূলের। ফিরহাদ যেমন পুরভোটের টিকিট পেয়েছেন, তেমনই প্রার্থী তালিকায় নাম নেই প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়র।

জল্পনা ছিল, বাবুলকে ‘সম্ভাব্য’ মেয়র হিসেবে তুলে ধরে পুরভোটের ময়দানে নামবে তৃণমূল। যদিও দলের একাংশ বলছিলেন, বাবুল সদ্যই বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে এসেছেন। এত দ্রুত তাকে কলকাতা পুরসভার মেয়রের মতো পদে তুলে ধরলে দলের একাংশে অনুযোগ তৈরি হতে পারে।

বাবুলের নাম প্রার্থী তালিকায় না থাকায় পরবর্তী মেয়র হিসেবে ফিরহাদের নাম নিয়ে আবার জল্পনা শুরু হয়েছিল। কিন্তু তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘ভোটের পর কাউন্সিলররা বসে সেই সিদ্ধান্ত নেবেন। এখন থেকেই কিছু ঠিক করা হচ্ছে না।’

ঘটনাচক্রে, এর আগে ‘সম্ভাব্য মেয়র’ তুলে ধরেই পুরভোটে গিয়েছে তৃণমূল। মনে করা হচ্ছে, দলের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির কারণেই এবার সেই রাস্তা থেকে সরে আসা হল। ফিরহাদ নিজে পুরভোটে দাঁড়াতে বেশি আগ্রহী ছিলেন।

সূত্রের খবর, দলকে তিনি বলেছিলেন, প্রয়োজনে মন্ত্রিত্ব ছেড়ে দেবেন। কিন্তু তাকে যেন পুরভোটের টিকিট দেওয়া হয়। দেখা গেল, শেষ পর্যন্ত তাকে পুরভোটের টিকিট দেওয়া হল।

মনে করা হচ্ছে, স্বয়ং দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শেষ মুহূর্তের হস্তক্ষেপে ফিরহাদ সহ অন্য ‘পুরনো অনুগত’রা পুরভোটের টিকিট পেলেন। ফলে পিকে’র টিম যে রিপোর্টই দিক না কেন, শেষ পর্যন্ত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে তৃণমুলের শেষ কথা, তা ফের প্রমাণিত হল।

এদিন পুরসভার প্রার্থী নিয়ে বৈঠকের আগে পর্যন্ত ঠিক ছিল, ফিরহাদ-অতীন-দেবাশিসের কন্যাদের তাদের বদলে টিকিট দেওয়া হবে সামনে আনা হবে দ্বিতীয় প্রজন্মকে শুক্রবার সন্ধ্যায় তৃণমুল তাদের প্রার্থীতালিকা ঘোষণা করে।

কলকাতা পুরসভার ৯৬ নং ওয়ার্ডে তৃণমূল প্রার্থী করেছে প্রয়াত ক্ষিতি গোস্বামীর কন্যা বসুন্ধরা গোস্বামীকে। এদিন বিকেলে প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করতে দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং প্রশান্ত কিশোর (পিকে) ভোট কৌশলী বৈঠক করেন কালীঘাটে, মমতার বাড়িতে।

রাজনৈতিক একাংশের ধারণা, তৈরিতে আইপ্যাক-এর সুপারিশ যেমন বিবেচনা করা হয়েছে, তেমনই প্রার্থীর জনসংযোগ কেমন, সে বিষয়টিও গুরুত্ব পেয়েছে। সব মিলিয়ে নবীন ও প্রবীণ সেই সঙ্গে নাগরিক পরিষেবার সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে যুক্ত থাকা নেতৃত্বের উপরে কলকাতা পুরভোটে বাজি রাখল তৃণমূল কংগ্রেস মহলের প্রার্থীতালিকা।