রাজ্যে দুর্গাপুজো নিয়ে বিতর্কটা গড়িয়েছে আদালত পর্যন্ত। করােনা আবহে পুজো করা উচিত হচ্ছে কিনা তা নিয়ে কাঠগড়ায় দাঁড় করানাে হচ্ছে রাজ্য সরকারকে। ক্লাবগুলিকে অনুদান দেওয়া নিয়ে বিস্তর তীর ছোঁড়াছুড়ি চলছে। এরই মধ্যে বৃহস্পতিবার শঙ্খ বাজিয়ে নবান্ন সভাঘর থেকে ১১০টি পুজো উদ্বোধন করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বললেন, ভার্চুয়ালি পুজোর উদ্বোধন করলেও মনে মনে তিনি পৌছে গিয়েছেন সকলের মধ্যে।
এদিন পুজোর উদ্বোধনী মঞ্চ থেকে তিনি ঘােষণা করলেন, আমি ছিলাম, আছি, থাকব। মমতার এই বরাভয়কে নির্ভয়ে মানতে পারছে না অনেক রাজনৈতিক মহল।
মুখ্যমন্ত্রীর এই ভার্চুয়াল পুজো উদ্বোধনকে কটাক্ষ করেছেন বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তী। তাঁর মতে, মুখ্যমন্ত্রী নিজে ঘেরাটোপের মধ্যে থেকে ভার্চুয়ালি পুজোর উদ্বোধন করছেন। আর যেসব পুজো উদ্বোধন করছেন তিনি, সেখানে জমায়েত হয়ে করােনার সম্ভাবনা বাড়ছে। সুজনবাবুর মতে পুজোর মঞ্চকে ব্যবহার করে রাজনীতি করা হচ্ছে। তাতে শারদোৎসবের কৌলিন্য নষ্ট হচ্ছে।
সুজনবাবু প্রশ্ন তুলেছেন ক্লাবগুলিকে টাকা দেওয়া নিয়েও। এদিন সুজন চত্রবর্তী বলেন, কেরলে ওনাম উৎসবে ছাড় দেওয়ায় সেখানে সংক্রমণ বেড়েছে। এই ঘটনা থেকেও শিক্ষা নেননি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ইদ-গণেশ পুজো যখন ঘরে বসেই হল, তখন দুর্গোৎসব কেন বন্ধ রাখল না সরকার? পুজোর পরে কোভিডের সংক্রমণ বাড়লে, তার দায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই নিতে হবে বলে দাবি করেন সুজন চক্রবর্তী।
তবে এই সব বিতর্কের মধ্যেই বৃহস্পতিবার নবান্ন সভাঘরে জেলার পুজোর উদ্বোধনী মঞ্চে মমতার স্পষ্ট জবাব, দুর্গাপুজো ঘরে বসে হয় না। ইদ-গণেশপুজো বাড়িতে করা যায়। কিন্তু মা দুর্গার বড় সংসার। দুর্গাপুজো বেশিরভাগ ক্লাব- কমিটি, এরাই করে। বাড়ির পুজো আর ক’টা হয়? তাই রাজ্যে দুর্গাপুজো বন্ধ করা হয়নি।
তবে পুজোর সময় সমস্ত সতর্কতা বিধি মেনে চলার জন্য সবাইকে পরামর্শ দেন মমতা। এই বিষয়ে পুজোর ক্লাবগুলিকে সতর্ক থাকতে বলেন। বােধন থেকে বিসর্জন পর্যন্ত সরকার নির্দিষ্ট বিধি মেনে চলতে অনুরােধ জানান। তবে এবারও ইছামতীতে দুর্গা প্রতিমার ভাসান বন্ধ হবেনা বলে জানিয়ে দেন মমতা। মা দুর্গার কাছে করােনামুক্ত বাংলার জন্য প্রার্থনা করেন।
বৃহস্পতিবার নবান্ন সভাঘর পূর্ব ও পশ্চিম বর্ধমান, হাওড়া, হুগলি, পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর, উত্তর ও দক্ষিণ চব্বিশ পরগণা, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া ইত্যাদি জেলার পুজোগুলির উদ্বোধন করেন। এরপর তিনি মা দুর্গার কাছে প্রার্থনা করেন, কুৎসা, অপপ্রচার থেকে বাংলাকে রক্ষা করাে। দাঙ্গার কবল থেকে সবাইকে রক্ষা করাে। মমতার এই প্রার্থনা একুশের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী বিজেপির বিরুদ্ধে বলেই মনে করা হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার নবান্ন সভাঘর থেকে পুজোর ভার্চুয়াল পুজোর উদ্বোধনের পর মুখ্যমন্ত্রী চলে যান একুশের পল্লিতে। সেখানে মা দুর্গার প্রতীকী ছবি আঁকেন মমতা। এছাড়া এদিন বােসপুকুর তালবাগান এবং শীতলামন্দিরে গিয়েও পুজোর উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।