একুশের বিধানসভা নির্বাচনের আগে নিজের ঘর ভবানীপুর ছেড়ে নন্দীগ্রামে প্রার্থী হয়েছিলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই সিদ্ধান্তের ফল ইতিবাচক হয়নি। খেসারত দিতে ফের ঘরের মেয়েকে নিজের গড় থেকেই প্রার্থী হতে হচ্ছে। উপনির্বাচন হলেও এবার ভােট প্রচারে মােটেও ঢিলে দিতে রাজি নন নেত্রী।
আগের বার নিজের ঘর ছেড়ে যাওয়ার জন্য স্থানীয় মানুষের মনে যেটুকু ক্ষত হয়েছে, তার ক্ষতিপূরণ হিসেবে ভবানীপুর উপনির্বাচনে ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে ঘুরছেন মমতা। এদিকে উপনির্বাচন ঘােষণা করার পরেও প্রচারের ক্ষেত্রে বহু বিধিনিষেধ আরােপ করেছে নির্বাচন কমিশন।
বলা হয়েছে উপনির্বাচনে বৃহৎ জনসমাবেশ যেমন করা যাবে না, তেমনই বড় মিছিল কিংবা রােড শাে করা যাবে না। সেই কারণেই তৃণমূল নেত্রী ছােট ছােট সভার মাধ্যমে প্রচারাভিযান চালাচ্ছেন। ভবানীপুর উপনির্বাচন আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর। এই দিন ঘােষণার সঙ্গে সঙ্গেই তৃণমূলের নেতা কর্মীরা প্রচারে নেমে পড়েছে।
শুক্রবার মনােনয়ন পত্র জমা দেওয়ার পরে সােমবার নবান্ন থেকে ফিরেই নিজের বিধানসভা এলাকায় প্রচারের কাজে নেমে পড়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন নবান্ন থেকে ফিরে আচমকাই কলকাতা পুরসভার ৭৭ নম্বর ওয়ার্ডে চলে যান মমতা।
জনসংযােগের পাশাপাশি কর্মীদের সঙ্গেও আড্ডা দেন। খিদিরপুরের ২৫-এর পল্লি দুর্গাপুজো যে পাড়ায় হয়, সেখানে গিয়েছিলেন। আবার ইকবালপুর এলাকায় ১৬ আনা মসজিদ এলাকাতেও খিদিরপুর এলাকার ৭৭ নম্বর ওয়ার্ড দিয়ে প্রচার শুরু করা নিয়ে মমতাকে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি বিজেপি।
বিজেপির সহ-পর্যবেক্ষক অমিত মালব্য দাবি করেন, ভবানীপুরে জয় নিয়ে নিশ্চিত নন বলেই এদিন যােলাে আনা মসজিদে গিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মমতার এদিনের প্রচার অভিযানকে পরিকল্পিত বলে কটাক্ষও করেন মালব্য। উপনির্বাচন প্রচারের জন্য কমিশনের নির্দেশ মেনে ছােট যান নেত্রী। ছােট সভার ওপর জোর দিচ্ছেন মমতা। চেতলার অহীন্দ্র মঞ্চে ইতিমধ্যেই কর্মিসভা করেছেন তিনি। এবার জোর দিলেন ভবানীপুরের ওপর।
সেই কারণে উপনির্বাচনের দায়িত্বে থাকা নেতারা প্রত্যেক ওয়ার্ডে মুখ্যমন্ত্রীর জন্য ঘরােয়া কর্মসূচি নির্ধারিত করে। ভবানীপুর বিধানসভা এলাকায় রয়েছে পুরসভার আটটি ওয়ার্ড। কোভিডের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য প্রত্যেক ভােটারের কাছে পৌছতে না পারলেও ওয়ার্ডগুলিতে ঘুরতে চাইছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
রণনীতি ঠিক করার জন্য রবিবার রাতেই ভবানীপুরের পার্টি অফিসে বৈঠকে বসেছিলেন সুব্রত বক্সি, পার্থ চট্টোপাধ্যায়, ফিরহাদ হাকিম প্রমুখ। সেখানেই ঠিক করা হয়েছে আগামী বৃহস্পতিবার ৭২ নম্বর ওয়ার্ডের উত্তম উদ্যানে তৃণমূল নেত্রী বাছাই করা ভােটারদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলবেন। পরবর্তী ক্ষেত্রে বৈঠক করে বাকি সাতটা ওয়ার্ডে তৃণমূল নেত্রীর সভার সুচি ঠিক করা হবে।
কমিশনের পক্ষ থেকে নির্দেশনায় বলা হয়েছে, যদি কোনও প্রার্থী কোভিডবিধি ভেঙে প্রচার করেন, তাহলে তাকে আর এই উপনির্বাচনে প্রচার করতে দেওয়া হবে না। তাই কিছুটা সাবধানীভাবেই প্রচার চালাতে চাইছেন নেত্রী। কমিশনের নির্দেশ অনুযায়ী সমস্ত বিধি মেনে যাতে প্রচার সভার আয়ােজন করা হয়, তার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ওয়ার্ড কো-অর্ডিনেটরদের।
তাছাড়া প্রচারসুচি এমনভাবে করা হচ্ছে, যাতে তা মুখ্যমন্ত্রীর প্রশাসনিক কাজকর্মে ব্যাঘাত না ঘটায়। তাই একটা ওয়ার্ডের কর্মসুচি সম্পন্ন হওয়ার পরে অন্য ওয়ার্ডে কবে প্রচার অভিযান চালানাে হবে, তার সুচি ঠিক করা হচ্ছে।
মমতার ভবানীপুর বিধানসভা উপনির্বাচনের দায়িত্বে থাকা তৃণমূলের ‘জয় হিন্দ বাহিনীর দায়িত্বে থাকা কার্তিক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, প্রার্থী হিসেবে মমতা চেয়েছিলেন প্রত্যেক ভােটারের কাছে পৌছতে। কিন্তু করােনা সংক্রমণের জন্য তা সম্ভব না হওয়ায়, ছােট ছােট সভা করে প্রচার অভিযান চালাবেন মমতা। প্রচারে বাকি অংশ দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা ভাগ করে নিয়েছেন।