প্রবীর ঘোষাল
আড়াই দশক আগে বাংলার ভোটে রিগিং ঠেকাতে ‘নো আইডেনটিটি কার্ড, নো ভোট’ স্লোগান তুলেছিলেন জননেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই সময় সিপিএমের দীর্ঘদিন ক্ষমতায় টিকে থাকার নেপথ্যে ছিল বলগাহীন রিগিং। বিধানসভা কিংবা লোকসভার নির্বাচনে বামফ্রন্টের বকলমে বাংলায় লাল পার্টির জেতার প্রধান অস্ত্রই ছিল রিগিং।
আর সেই রিগিংকে ‘সায়েন্টিফিক’ করতে তারা কাজটা শুরু করত ভূতুড়ে ভোটার তালিকা তৈরির মধ্য দিয়ে। তৎকালীন নির্বাচন কমিশনার টি এন সেশন চেষ্টা চালিয়েছিলেন নির্বাচনে কারচুপি বন্ধ করতে। কিন্তু সিপিএমের সঙ্গে লড়ে তিনি জিততে পারেননি। ২০০৪ সালে লোকসভা নির্বাচনৈ বাংলায় নির্বাচন কমিশনের পর্যবেক্ষক হিসাবে এসেছিলেন বিহার ক্যাডারের জাঁদরেল আইএএস অফিসার আফজল আমানুল্লা।
সেবার লোকসভার ভোটে এ রাজ্যে রেকর্ড রিগিংয়ের মাধ্যমে সিপিএম ফলাফলে নয়া নজির সৃষ্টি করেছিল। গ্রামাঞ্চলে অধিকাংশ মানুষ ভোটই দিতে পারেননি। অবশ্য তার আগেই বিরোধীপক্ষের ভোটারদের নাম বাদ দিয়ে এবং লক্ষ লক্ষ ভুয়ো ভোটারের নাম তুলে তালিকাতেই ‘সায়েন্টিফিক রিগিং’য়ের কাজটা অনেকটাই এগিয়ে রেখেছিল সিপিএম। নির্বাচনে তাদের ‘বিপুল জয়’ সম্পর্কে পর্যবেক্ষক আফজল আমানুল্লা নির্বাচন কমিশনের কাছে ১৩ পাতার একটি রিপোর্ট পেশ করেছিলেন। তাতে ভোটার তালিকা তৈরি তেকে গণনা পর্যন্ত বাংলার ভোটে সায়েন্টিফিক রিগিংয়ের বর্ণনা ছিল।
সেদিনও মমতাই একমাত্র নেত্রী, যিনি সোচ্চারে বলেছিলেন, ‘সবটাই রিগিংয়ের রেজাল্ট।’ এবারও তিনিই প্রথম বিজেপির রিগিং-রহস্য ফাঁস করেছেন। মহারাষ্ট্র এবং দিল্লিতে ভোটে পদ্ম শিবিরের প্রত্যাবর্তনের নেপথ্যে যে ভোটার তালিকার ভূতুড়ে ভোটাররা দাপিয়ে বেড়িয়েছে, সেই অভিযোগ অনেকটাই বিশ্বাসযোগ্য হয়ে উঠেছে।
সিপিএমের রিগিংয়ের বিষয়েও সেদিন তিনি তথ্য দিয়ে নির্বাচন কমিশনকে বোঝাতে চেয়েছিলেন, এবারও তিনি বাংলার ভোটে চুপি চুপি ভূতুড়ে ভোটার তালিকা তৈরির ষড়যন্ত্র ফাঁস করে দিয়েছেন। দেশময় এই ইস্যুতে হই হই শুরু হয়েছে। সংসদের উভয়কক্ষ উত্তাল হয়ে উঠেছে। কংগ্রেস সহ অধিকাংশ বিজেপি-বিরোধী দল মমতা তথা তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে গলা মিলিয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা, বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর অভিযানে নড়েচড়ে বসেছে নির্বাচন কমিশনও। কমিশন ঘোষণা করতে বাধ্য হয়েছে, একই এপিক নম্বরে একাধিক ভূতুড়ে ভোটার আর থাকবে না। তিন মাসের মধ্যে ভোটার তালিকা সংশোধন করা হবে।
বলা দরকার, বাংলায় কিন্তু ভুতূড়ে ভোটার তালিকা সংশোধন এবং রিগিং ঠেকিয়ে বামফ্রন্ট সরকারের বিদায় ঘণ্টা বাজিয়েছিলেন মমতা। এবারও কি দেশের রাজনীতিতে পরিবর্তনের হাওয়া বাংলা থেকেই উঠতে চলেছে?