বৃহস্পতিবার কালচিনির সভা থেকে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বোসের অন্তর্ধান রহস্য নিয়ে সুর চড়ালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নেতাজি সংক্রান্ত ফাইলগুলি কেন্দ্র কেন প্রকাশ্যে আনছে না তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। পাশাপাশি তাঁর দাবি, নেতাজি চক্রান্তের শিকার হয়েছেন। রাজ্যের কাছে থাকা এই সংক্রান্ত ৬৪টি ফাইল ইতিমধ্যেই প্রকাশ করা হয়েছে। কিন্তু কেন্দ্র এখনও গোপন ফাইল প্রকাশ্যে না আনায় তোপ দেগেছেন মুখ্যমন্ত্রী।
এছাড়াও ২৩ জানুয়ারিকে জাতীয় ছুটি হিসেবে ঘোষণা না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তিনি। এদিন ফের আবাস যোজনা ও ১০০ দিনের কাজের ইস্যুতে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে তোপ দেগেছেন মমতা। তাঁর দাবি, উত্তরবঙ্গের সামগ্রিক উন্নয়ন থমকে আছে কেন্দ্রের অবহেলার কারণেই। এদিনের এই প্রশাসনিক সভায় দেখা গেল প্রাক্তন বিজেপি সাংসদ জন বার্লাকে। শাসকদলে তাঁর যোগদান এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা বলে মত রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের। সূত্রের খবর, আগামী সপ্তাহেই আনুষ্ঠানিকভাবে তৃণমূলে যোগদান করতে পারেন জন বার্লা।
নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর জন্মদিন পালন উপলক্ষ্যে ডুয়ার্সে প্রথমবার রাজ্যস্তরের অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়েছে। বৃহস্পতিবারের এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি আগেই জানিয়ে দিয়েছিলেন যে, এবার নেতাজির জন্মদিন উপলক্ষ্যে রাজ্য সরকারের মূল অনুষ্ঠানটি ডুয়ার্সে আয়োজিত হবে। সেই কথামতো বৃহস্পতিবার কালচিনিতে নেতাজির ১২৯ তম জন্মদিবস পালন করা হল। এই অনুষ্ঠান থেকে মমতার আক্ষেপ, নেতাজির জন্মদিবস জানা থাকলেও মৃত্যুদিন অজানা।
ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের সঙ্গে বক্সার সম্পর্ক এদিন ব্যাখ্যা করেছেন মমতা। তিনি জানান, আন্দামান সেলুলার জেলে সবথেকে বেশি বাংলার স্বাধীনতা সংগ্রামীরা বন্দি ছিলেন। তারপর ছিলেন পঞ্জাবের বিপ্লবীরা। আন্দামান সেলুলার জেলের পর বক্সায় সবথেকে বেশি সংখ্যক স্বাধীনতা সংগ্রামীকে বন্দি করে রাখা হয়েছিল। মমতা আরও জানান, নেতাজিই সকলকে সব ধর্মকে একসঙ্গে নিয়ে চলতে শিখিয়েছেন। এদিন মঞ্চ থেকে সকলকে মানবিকতার পাঠ পড়ালেন মমতা।
মুখ্যমন্ত্রী মনে করিয়ে দিয়েছেন, নেতাজিকে শ্রদ্ধা জানাতে রাজ্যের তরফে জয় হিন্দ বাহিনী তৈরি করা হয়েছে, আলিপুর মিউজিয়ামে যে কুঠুরিতে তিনি থাকতেন সেটি সংস্কার করে জনগণের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে। এমনকী নেতাজির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েই ‘তরুণের স্বপ্ন’ প্রকল্পের নামকরণ করা হয়েছে।
মমতা জানান, উত্তরবঙ্গের উন্নয়নের জন্য রাজ্য সরকার বহু প্রকল্পে প্রচুর টাকা বরাদ্দ করেছে। পরিসংখ্যান তুলে ধরে কোন খাতে কত খরচ ও বরাদ্দ হয়েছে তা তুলে ধরেন তিনি। তাঁর দাবি, রাজ্য সরকারের প্রধান অগ্রাধিকার হল উন্নয়ন। কিন্তু কেন্দ্রের অবহেলার কারণেই উত্তরবঙ্গের সামগ্রিক উন্নয়ন থমকে আছে। তিনি জানান, উত্তরবঙ্গে ৫৯টি চা বাগান রাজ্য সরকারই খুলিয়েছে। কেন্দ্র একটিও বন্ধ চা বাগান খোলানোর উদ্যোগ নেয়নি। রাজ্যের উদ্যোগে আরও কয়েকটি চা বাগান খোলার ব্যবস্থা করা হবে।
মুখ্যমন্ত্রী জানান, উত্তরবঙ্গের উন্নয়নে রাজ্য ১ লক্ষ ৬৪ হাজার কোটি টাকারও বেশি খরচ করেছে। ১০০ দিনের কাজ এবং আবাস যোজনায় বাংলাকে বঞ্চনা করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। তা সত্ত্বেও দক্ষিণবঙ্গের মতো উত্তরবঙ্গেও রাজ্য সরকারের তরফে বাংলার বাড়ি দেওয়া হচ্ছে। মানুষের কাজের জন্য চালু করা হয়েছে কর্মশ্রী প্রকল্প। পর্যটনের বিকাশ থেকে শিক্ষার উন্নয়নে কাজ চলছে। একাধিক কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয় নির্মাণ, পানীয় জলের প্রকল্প-সহ বিভিন্ন সরকারি উন্নয়নের খতিয়ান এদিন তুলে ধরেন মমতা। পাশাপাশি তিনি জানান, সারি ও সরনা ধর্মকে স্বীকৃতি পাইয়ে দেওয়ার জন্য কেন্দ্রকে চিঠি লিখেছেন মমতা।
মমতার কাছে অভিযোগ এসেছে, বনাঞ্চলের কিছু এলাকায় জনজাতির জমি দখলের চেষ্টা হচ্ছে। এ বিষয়ে কড়া হুঁশিয়ারি দেন মুখ্যমন্ত্রী।