পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য ১০ হাজার টাকা করে দাবি মমতার

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (File Photo: IANS)

করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে চুড়ান্ত আর্থিক সংকটে পরিযায়ী শ্রমিকরা। অবিলম্বে আর্থিক সাহায্যের প্রয়োজন তাদের। রাজ্য সরকারের ইচ্ছে থাকলেও তাদের সাহায্য করার সংগতি নেই। তাই কেন্দ্রের কাছে মুখ্যমন্ত্রীর আবেদন, পি এম কেয়ারস ফান্ড থেকে পরিযায়ী ও অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিকদের অ্যাকাউন্টে ১০ হাজার টাকা করে এককালীন আর্থিক সাহায্য করা হোক।

লকডাউনের আগেই পরিযায়ী শ্রমিকদের ফেরানোর ব্যবস্থা করা যেত বলে বুধবার কেন্দ্রকে ফের তোপও দাগলেন মমতা। সেই সঙ্গে লকডাউন এবং কর্মহীনতার জন্য পরিযায়ী শ্রমিকদের আর্থিক সঙ্কট দূর করতে কেন্দ্রকে এগিয়ে আসতে আর্জি জানালেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুধু পশ্চিমবঙ্গের জন্যই নয়, গোটা দেশের শ্রমিকদের জন্যই এই আবেদন রাখলেন তিনি।

বুধবার সকালে একটি টুইট করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় লেখেন, অতিমারির জেরে চরম আর্থিক দুর্দশার মধ্যে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। আমি কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে আবেদন জানাচ্ছি যে, পরিযায়ী ও অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিকদের জন্য যে মাথাপিছু এককালীন ১০ হাজার টাকা দেওয়া হয়। পি এম কেয়ারস-এর একটি অংশও এক্ষেত্রে ব্যবহার করা যেতে পারে।


প্রসঙ্গত এর আগে পরিযায়ী শ্রমিকদের সরাসরি টাকা দেওয়ার পক্ষে সওয়াল করেছিলেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়। একই দাবি তুলেছিলেন রিজার্ভ ব্যাঙ্কের প্রাক্তন গভর্নর রঘুরাম রাজনও। কংগ্রেস নেত্রী সোনিয়া গান্ধিও পরিযায়ী শ্রমিকদের অ্যাকাউন্টে সরাসরি টাকা জমা দেওয়ার সুপারিশ করেছিলেন। এবার সেই একই দাবি তুললেন মমতা।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই দাবি নিয়ে ইতিমধ্যেই বিরোধী মহলে শুরু হয়েছে জল্পনা। বিজেপির কথায়, করোনা সংক্রমণ রুখতে ব্যর্থ হয়েছে রাজ্য। তা ঢাকতেই কেন্দ্রের ওপর দায় চাপাতে চাইছে রাজ্য সরকার। এছাড়া শ্রমিক স্পেশাল ট্রেন নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্যে মানুষের মনে যে অসন্তোষ তৈরি হয়েছে, তা মেটাতেই মমতার এই দাবি বলে মনে করছে বিরোধীরা।

এদিকে পরিযায়ী শ্রমিকদের ঘরে ফেরার দুর্দশার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের অদূরদর্শিতাকেই দায়ী করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার নবান্নে সাংবাদিক সম্মেলনে কেন্দ্রকে কটাক্ষ করে তিনি বলেন, লকডাউন ঘোষণার আগেই যদি পরিযায়ীদের ফেরানোর বন্দোবস্ত করা হত, তাহলে ওদের দুর্ভোগে পড়তে হত না।

রাজ্যে এখনও পর্যন্ত ট্রেন এবং সড়কপথে সাড়ে আট লক্ষ শ্রমিক ঘরে ফিরেছে। আগামী দশ জুনের মধ্যে সংখ্যাটা সাড়ে দশ লক্ষে পৌছবে। পরিযায়ী শ্রমিকদের দফায় দফায় না ফেরালে রাজ্যে করোনা সংক্রমণ অনেক বেড়ে যেত বলে মন্তব্য করেন মমতা।

এদিন পরিসংখ্যান দিয়ে তিনি জানান, শুধু শ্রমিক স্পেশাল ট্রেনের ভাড়াই নয়, রাজ্যে পা রাখার পর পরিযায়ী শ্রমিকদের গণপরিবহণে তাদের গন্তব্যে পৌছে দেওয়ার জন্য মোট চল্লিশ কোটি টাকা খরচ হয়েছে রাজ্য সরকারের। এছাড়া রয়েছে যে সব পরিযায়ী শ্রমিকদের কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে, তাদের খরচ বহন করতে হয়েছে রাজ্য সরকারকে।

মুখ্যমন্ত্রী এদিন জেলাশাসক, এসডিও ও বিডিওদের নির্দেশ দেন, সব পরিযায়ী শ্রমিকদের তালিকা তৈরি করতে। তাদের কুটির ও ক্ষুদ্র শিল্পের কাজে লাগানো হবে। প্রয়োজনে একশ দিনের কাজে তাদের শ্রম ব্যবহার করা হবে বলেও আশ্বাস দেন।

বুধবার নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, করোনা মোকাবিলায় তৈরি রাজ্যের দু’শো কোটি টাকার তহবিল প্রায় শেষ। এর মধ্যে কিছু টাকা মাত্র রাখা হয়েছে যাতে সেলফ হেল্প গোষ্ঠীকে দিয়ে মাস্ক বানানোর খরচ হিসেবে। আগামীদিনে রাজ্যের স্কুলগুলি খুলে গেলে, পড়ুয়াদের, আশা আইসিডিএস কর্মীদের যাতে বিনামূল্যে মাস্ক দেওয়ার খরচ বহন করবে রাজ্যই।

মুখ্যমন্ত্রীর কথায় গত তিনমাস ধরে রাজ্যের কোনও আর্নিং নেই, সবটাই বার্নিং। তাও রাজ্য সরকার নিজেদের কোষাগার থেকে স্নেহের পরশ প্রকল্পে প্রায় ৫৭ লক্ষ পরিযায়ী শ্রমিকের অ্যাকাউন্টে এক হাজার টাকা করে দিয়েছে। প্রচেষ্টা প্রকল্পে ১ লক্ষ ৬২ হাজার লোককে ছয় কোটি টাকার মতো সাহায্য করা হয়েছে।

মুখ্যমন্ত্রী এদিন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, যা করার আমরাই করেছি। কেন্দ্র কত দিয়েছে? পরিবর্তে শ্রমিকদের উসকানি দেওয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন মুখ্যমন্ত্রী। করোনার জন্য তাঁর প্রশাসনিক ভবনের কর্মচারী অফিসাররা প্রাণপণ কাজ করছে বলে দাবি করেন মমতা।

নবান্নের দু’জন ড্রাইভার করোনা আক্রান্ত বলে জানা গিয়েছে। এজন্য আজ বৃহস্পতিবার এবং আগামীকাল নবান্ন স্যানিটাইজ করা হবে বলে জানিয়ে দেন মুখ্যমন্ত্রী।