শনিবারই প্রকাশিত হয়েছে অসমের চূড়ান্ত নাগরিকপঞ্জী। এই নাগরিকপঞ্জীতে ১৯ লাখের বেশি মানুষের নাম বাদ পড়েছে। বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বাদ পড়া মানুষগুলির ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস। আর এর প্রেক্ষিতে অসমের ঘটনবলী নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন রাজ্যের পুর ও নগরােন্নয়নমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম।
ফিরহাদের কথায়, এনআরসির নাম করে বিজেপি অসম থেকে বাঙালিদের তাড়ানাের প্রচেষ্টা শুরু করেছে। তৃণমূল কংগ্রেসের দাবি নাগরিকপঞ্জী থেকে বাদ পড়া মানুষের দায়িত্ব কেন্দ্রকেই নিতে হবে। ত্রদের প্রশ্ন, যাদের নাম বাদ পড়েছে। তারা এখন কি করবে? আগামী দিনে এদের ভবিষ্যৎই বা কি হবে আর কোথায় এরা থাকবে? এরা কি এবার থেকে আকাশে থাকবে বলেও পাল্টা প্রশ্ন তুলেছেন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম।
অসমের নাগরিকপঞ্জী নিয়ে অনেক আগেই প্রতিবাদে সােচ্চার হয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। দীর্ঘদিন ধরে অসমে বসবাসকারীদের নাগরিকপঞ্জী থেকে বাদ দেওয়া নিয়ে রীতিমতাে ক্ষুব্ধ তিনি। শনিবার পুরমন্ত্রী এনআরসির বিরােধিতা করে বলেন, কেন্দ্র যেভাবে অসমের নাগরিকপঞ্জীকে কাজে লাগানাের চেষ্টা করছে, তাতে আমরা সকলেই উদ্বিগ্ন। ব্যাপক সংখ্যক মানুষের নাম বাদ পড়েছে। আমরা এদের পাশে থাকব।
এমতাবস্থায় কেন্দ্রকেই বাদ পড়া নাগরিকদের দায়িত্ব নিতে হবে বলেও জানিয়েছেন পুরমন্ত্রী। তাঁর কথায়, যাদের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে, তারা দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে অসমে বসবাস করছেন। এখন নাগরিকপঞ্জীর অজুহাতে এদেরকে তাড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। প্রসঙ্গত উল্লেখ করা যেতে পারে, নাগরিকপঞ্জীতে নাম নথিভুক্ত করতে প্রায় ৩,৩০,২৭,৬৬১জন মানুষ আবেদন জানিয়েছিলেন। এদের মধ্যে ৩,১১,২১,০০৪ জনের নাম নথিভুক্ত হয়েছে। বাদ পড়েছেন ১৯,০৬,৬৫৭ জন।
শুধু তৃণমূল কংগ্রেসই নয়, অসমের নাগরিকপঞ্জী থেকে ব্যাপক সংখ্যক মানুষের নাম বাদ পড়ার ঘটনার প্রতিবাদে সােচ্চার হয়েছে সিপিএমও। উল্লেখ্য, বিজেপি অসমের মতাে পশ্চিমবঙ্গেও এনআরসি চালুর পক্ষে সওয়াল করেছে। বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘােষও চান রাজ্যে নাগরিকল্পঞ্জী কার্যকরী হােক। এসবের বিরুদ্ধে লােকসভার বিরােধী দলনেতা অধীর চৌধুরীও কড়া প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। তাঁর দাবি, আগে সংসদে এনআরসি চালু করা হােক। তিনি জানান, তাঁর বাবা ছিলেন বাংলাদেশের নাগরিক। সেক্ষেত্রে তিনিও একজন বহিরাগত।
অন্যদিকে নাগরিকপঞ্জী নিয়ে নিজেদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছে সিপিএমও। তারা এ ব্যাপারে সর্বদলীয় বৈঠক ডাকার দাবি করেছে। নাগরিকপঞ্জী থেকে বাদ পড়া মানুষের পাশে থাকার আশ্বাসও দিয়েছে তাঁরা। সিপিএমের সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য মহম্মদ সেলিমের কথায়, বাদ পড়া নাগরিকদের ১২০ দিনের মধ্যে ফরেন ট্রাইব্যুনালে যাওয়ার কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু আমরা মনে করি, এর ফলে সমস্যার কোনও সমাধান হবে না। এব্যাপারে সর্বদল বৈঠক ডেকে প্রয়ােজনীয় উদ্যোগ নিতে কেন্দ্রকে পরামর্শ দিয়েছেন সিপিএম নেতা মহম্মদ সেলিম।
অসমের জাতীয় পঞ্জিকরণে ১৯ লক্ষ মানুষের নাম বাদ পড়া নিয়ে প্রতিবাদ জানালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শনিবার সন্ধ্যায় দুটি ট্যুইট করেন তিনি। সেখানে তিনি বলেন, অসৎ উদ্দেশে এনআরসি করে সমাজের এবং দেশের বৃহত্তর স্বার্থকে জলাঞ্জলি দিয়েছে কেন্দ্র। যে সমস্ত বাঙালিদের নাম বাদ গিয়েছে এনআরসি তালিকা থেকে বিশেষ করে তাদের জন্য তাঁর মন কাঁদছে বলে টুইটে লিখেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি লিখেছেন, রাজনৈতিক লাভ তােলার চেষ্টা করা হচ্ছিল, তাদের মুখােশ খুলে দিয়েছে। এনআরসি বিপর্যয় দেশ ও সমাজের স্বার্থ পরিহার করে অসৎ উদ্দেশে কাজ করলে এমনটাই ঘটে। বাংলাভাষী ভাই-বােনদের জন্য খারাপ লাগছে। জাঁতাকলে পড়ে ভুগতে হয়েছে তাদের।