সিএবি ইস্যুতে বিজেপির বিরুদ্ধে রণকৌশল ঠিক করতে বৈঠক ডাকলেন মমতা

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (File Photo: IANS)

রাজ্যসভায় নাগরিকত্ব বিল পাশ হতে না হতেই তৎপর হয়ে উঠল তৃণমূল। কারণ রাজ্যসভায় নাগরিকত্ব বিল নিয়ে বিতর্কে বলতে গিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ সাফ জানিয়ে দিয়েছেন বাংলাতেও এই বিল কার্যকর করা হবে। সেইসঙ্গে হবে জাতীয় নাগরিক পঞ্জিকরণ (এনআরসি)।

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সংসদের উচ্চকক্ষে দৃঢ়তার সঙ্গে একথা ঘােষণা করার ২৪ ঘন্টা কাটতে না কাটতেই এর বিরুদ্ধে রণকৌশল ঠিক করতে আগামী ২০ ডিসেম্বর তৃণমূল ভবনে দলীয় শীর্ষ নেতাদের বৈঠক ডাকলেন তৃণমূল সুপ্রিমাে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই বৈঠকে দলের সমস্ত বিধায়ক, সাংসদ এবং জেলা সভাপতিদের উপস্থিত থাকার জন্য বলা হয়েছে।

উল্লেখ্য, গত ৯ তারিখ খড়গপুরের সভা থেকে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, এনআরসি আর ক্যাব (নাগরিকত্ব বিল) মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ। সেইসঙ্গে তৃণমুল সুপ্রিমাের হুশিয়ারি ছিল ‘একটা লােককেও দেশছাড়া হতে দেব না। নাে এনআরসি, নাে ক্যাব’। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মােদি, অন্যদিকে অমিত শাহরাও বলছেন, কোনও চিন্তা করবেন না। কাউকে দেশ ছাড়তে হবে না। একজন অবৈধ অনুপ্রবেশকারীকেও ছাড়া হবে না।


তৃণমূল যেমন মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে আশ্বাস দেওয়ার চেষ্টা করছে, অন্যদিকে মানুষ যেন আতঙ্কিত না হয়ে পড়েন তার জন্য বিজেপিও মানুষকে আশ্বস্ত করতে চাইছে। যদিও বিজেপি নেতাদের কথায়, তৃণমুল এই ইস্যুকে কেন্দ্র করে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে দিতে চাইছে। যদিও তৃণমূল এই অভিযােগ সরাসরি অস্বীকার করেছে। অসমের অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতির জন্য বিজেপিকেই কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছে তৃণমূল। এনআরসি ইস্যু এ রাজ্যের ক্ষেত্রে বিজেপি প্রচারে ব্যর্থ হওয়ায় অমিত শাহ নিজেই ছুটে এসেছিলেন নেতাজি ইন্ডােরে। ঠিক করে দিয়েছিলেন প্রচারের অভিমূখ। কিন্তু বিজেপি নেতারা এই ইস্যুকে সামনে রেখে নিজেদের ভােটব্যাংকে বসন্ত আনতে ব্যর্থ।

লােকসভা নির্বাচনের সময় বিজেপি এ রাজ্যে ভালাে ফল করলেও এ রাজ্যে তিনটি বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে বিজেপি ব্যাকফুটে চলে গিয়েছে। এনআরসি ইস্যুর প্রধান কারণ বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহলের একাংশ। এনআরসি হতে পারে এ রাজ্যেও এ আশঙ্কা মানুষের মধ্যে ছিল। কিন্তু রাজ্যসভায় নাগরিকত্ব সংশােধনী বিল পাশ হওয়ায় মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ক্রমশ চেপে বসেছে।

এমনই এক আবহের মধ্যে দাঁড়িয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সাফ জানিয়ে দিয়েছেন যে, এ রাজ্যে এনআরসি, ক্যাব কোনটাই কার্যকর করা হবে না। কেন্দ্র বিরােধিতায় সুর চড়াতে তবে কি এবার ফের মানুষকে নিয়ে রাস্তায় নামবে তৃণমূল? আন্দোলনকে নিয়ে যাবেন উচ্চগ্রামে? যাতে করে বিজেপিকে কোণঠাসা করা যায়। বিজেপি মানেই যে বিপদ এমনটাই মানুষ তার অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে বুঝেছে। সে কারণে এক ইঞ্চিও জমি যাতে মানুষ বিজেপিকে না দেয় এ রাজ্যে। সেকারণেই গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক ডেকেছে তৃণমূল, এনটাই মনে করা হচ্ছে। শহর-গ্রাম সর্বত্র এই ইস্যুকে কেন্দ্র করে এরাজ্যের মানুষকে একসূত্রে বাঁধতে চাইছে তৃণমূল। মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের মাধ্যমে এই ইস্যুতেই এরাজ্যে বিজেপির বাড়বাড়ন্তকে রুখে দিয়ে ২০২১-এর রাজ্যের ক্ষমতার মসনদে তৃণমূলের ফেরাটা সুনিশ্চিত করাতে তৃণমুলের লড়াই শুরু হল বলে।