প্রতিবেশী রাষ্ট্র বাংলাদেশ সমস্যার মাঝেই ভারতে অনুপ্রবেশকারী নিয়ে উদ্বেগে রয়েছে কেন্দ্র-রাজ্য। এর মধ্যেই ওড়িশায় কাজ করতে গিয়ে সমস্যার মুখে পড়লেন বাংলার পরিযায়ী শ্রমিকেরা৷ অভিযোগ, বাংলার পরিযায়ী শ্রমিকদের ‘বাংলাদেশী’ তকমা দেওয়া হয়েছিল পড়শি রাজ্যে। ফলে বিভিন্ন জায়গায় আক্রমণের মুখে পড়ছেন তাঁরা৷ এবার এ বিষয়েই হস্তক্ষেপ করে বাংলার পরিযায়ী শ্রমিকদের পাশে দাঁড়ালেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিলম্ব না করে ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী মোহনচরণ মাঝিকে ফোন করলেন মমতা। নবান্ন সূত্রে জানা গিয়েছে, ফোনে ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী আশ্বাস দিয়ে জানিয়েছেন যে, ভবিষ্যতে এই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটবে না। আরও জানা গিয়েছে, ওড়িশা সরকারের মাধ্যমে ওই পরিযায়ী শ্রমিকদের পশ্চিমবঙ্গে ফিরে এসে এই রাজ্যেই কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন মমতা।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ওড়িশার ঘটনায় একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। ভাইরাল হওয়া সেই ভিডিওতে দেখা গিয়েছে, সাইকেলে মনোহারি সামগ্রী বিক্রি করা এক বিক্রেতাকে মারধর করছেন এক ব্যক্তি। বিক্রেতার আধার কার্ড দেখানোর নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে। আধার কার্ড দেখাতে না পারায় চলছে মারধর। এই ভিডিও নেট দুনিয়ায় ভাইরাল হতেই নিন্দার ঝড় উঠেছে। এছাড়াও বিক্ষিপ্ত ভাবে ওড়িশায় বাঙালি শ্রমিক হেনস্থার অভিযোগ এসেছে। এরপরই নড়েচড়ে বসেছেন মমতা। নবান্ন সূত্রে জানা গিয়েছে, বাংলাদেশের টালমাটাল পরিস্থিতির কথা প্রকাশ্যে আসার পরেই সেই রাজ্যে বসবাসকারী কয়েক জন বাঙালি পরিযায়ী শ্রমিককে হেনস্থার মুখে পড়তে হচ্ছে। বাংলাদেশি সন্দেহে তাঁদের মারধর করারও অভিযোগ উঠেছে। এই পরিস্থিতির কথা খবর পেয়েই ওড়িশার বিজেপি সরকারের মুখ্যমন্ত্রী মাঝিকে ফোন করেন মমতা। এই বিষয়ে পদক্ষেপ করার আর্জি জানান পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী।
জানা যায়, এটি একবার নয়। বেশ কয়েকদিন ধরে বারংবার ওড়িশায় থাকা বাঙালি পরিযায়ী শ্রমিকদের হেনস্থার মুখে পড়তে হচ্ছে। শনিবার ওড়িশার খাদগিরি থানার ডুমুডুমা রহমদ-এ বাঙালি পরিযায়ী শ্রমিকদের হেনস্থার ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছে। একই রকম ঘটনা ঘটেছে আলুগাদি, পানপাদার কাছে এইমস, ইনফোসিটি থানার শিখর চণ্ডিতেও। ভুবনেশ্বরের ডেপুটি কমিশনার অফ পুলিশ এই বিষয়টি নিয়ে পূর্বেই সতর্ক করেছেন। তাঁর কথায়, “পুলিশ সব থানার উপর নজর রাখছে। কোথাও এই ধরনের ঘটনা নজরে এলে তৎক্ষণাৎ ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তিনি আরও জানিয়েছেন, কোনভাবে আইন হাতে তুলে নিলে, তা মেনে নেওয়া হবে না। সাধারণ মানুষকেও আইন মেনে চলার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। সূত্রের খবর, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ওড়িশায় থাকা বাঙালি পরিযায়ী শ্রমিকদের দ্রুত এ রাজ্যে ফিরে আসার পরামর্শ দিয়েছেন। সে ক্ষেত্রে ফিরে আসার জন্য তাঁরা যাতে ওড়িশা সরকারের সাহায্য পেতে পারেন, সে বিষয়েই ওড়িশা সরকারের সঙ্গে কথা বলেছেন মমতা। বাঙালি পরিযায়ী শ্রমিকদের উদ্দেশ্যে বলা হয়েছে, এই অবস্থায় তাঁদের পাশেই রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। তাঁরা বাংলায় ফিরে আসার ক্ষেত্রে সব ধরনের সাহায্য পাবেন সরকারের পক্ষ থেকে।
উল্লেখ্য, চলতি বছরের মার্চ মাসে সিএএ আবহে ঠিক একইভাবে ওড়িশায় গিয়ে আক্রান্ত হতে হয়েছিল মুর্শিদাবাদের প্রায় 20 জন পরিযায়ী শ্রমিককে। তখন মুর্শিদাবাদের সুতি ও শামসেরগঞ্জ থেকে কাজ করতে যাওয়া পরিযায়ী শ্রমিকরা ওড়িশার ভদ্রকে আক্রমণের মুখে পড়েছিলেন। সেসময়েও তাঁদের ‘বাংলাদেশী’ আখ্যা দিয়ে তাড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল। নিপীড়িত শ্রমিকরা জানিয়েছিলেন, বাংলাদেশি সন্দেহে তাঁদের মারধর করা হয়েছিল। প্রতিবেশী রাজ্যে বারংবার বাঙালি শ্রমিকদের সঙ্গে এ ধরণের আচরণ করার ঘটনা অত্যন্ত উদ্বেগের বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। এই পরিস্থিতিকে আরও চরমে পৌঁছে দিয়েছে বাংলাদেশ ইস্যু।
সূত্রের খবর, ওড়িশা থেকে বাঙালি শ্রমিককের বাংলায় ফিরিয়ে আনতে মরিয়া মমতা বন্দোপাধ্যায়। তিনি পূর্বেও বারবার বলেছেন, “বাংলার শ্রমিকদের ভিন রাজ্যে যাওয়ার প্রয়োজন নেই, তাঁরা রাজ্যেই কাজ করবেন।” ওড়িশার ঘটনার পর মমতার আহ্বান, পরিযায়ী শ্রমিকরা যেন দ্রুত পশ্চিমবঙ্গে ফিরে এসে এই রাজ্যেই কাজ করেন। যদিও এ ঘটনায় ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছেন, এ ধরণের ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে না হয় তাই সুনিশ্চিত করবেন তিনি। তবে, এভাবে বাংলাদেশ ইস্যুকে টেনে বাঙালি শ্রমিকদের প্রতিবেশী রাজ্যে ‘বাংলাদেশী’ তকমা দেওয়া হলে দুই রাজ্যের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ক্ষুন্ন হতে পারে বলে মত রাজনৈতিক মহলের।