রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য গুরুতর অসুস্থ। শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ার শুক্রবার রাত ৮.১৫ মিনিট নাগাদ দক্ষিণ কলকাতার উডল্যান্ড হাসপাতালে তাঁকে ভর্তি করা হয়। বুদ্ধবাবুর স্ত্রী মীরা ভট্টাচার্য, মেয়ে সুচেতনা ভট্টাচার্য এবং ডা. ফুয়াদ হালিম রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীকে এই বেসরকারি নার্সিংহােমে ভর্তি করেন। খবর পেয়ে দ্রুত হাসপাতালে পৌঁছান রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
রাত ৮.১৫ মিনিট নাগাদ মুখ্যমন্ত্রী হাসপাতালে যান বুদ্ধবাবুকে দেখতে। প্রবল শ্বাসকষ্ট এবং রক্তচাপ কমে যাওয়ায় বুদ্ধবাবুর শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে। তাঁর অসুস্থতার খবর পেয়ে সিপিএমের রাজ্যসম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র, সিপিএম পলিটব্যুরাের সদস্য মহ. সেলিম, কংগ্রেসের রাজ্যসভার সাংসদ প্রদীপ ভট্টাচার্য হাসপাতালে যান রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীকে দেখতে।
বুদ্ধবাবুর হাসপাতালে ভর্তির খবর চাউর হতেই তাঁর শারীরিক অবস্থার খবর জানার জন্য উডল্যান্ডে ভিড় উপচে পড়ে। রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীকে আইসিটিইউতে রাখা হয়েছে। বেড নম্বর ৫১৬। বুদ্ধবাবুর জন্য গঠন করা হয়েছে আট চিকিৎসকের একটি মেডিকেল টিম। ডা. সােমনাথ মাইতি, ডা. ফুয়াদ হালিম, ডা. এস বি রায়, ডা. কৌশিক চক্রবর্তী, ডা. সন্দীপ পান্ডা এই মেডিকেল বাের্ডে রয়েছেন। বাের্ডে ডাক্তারের সংখ্যা আরও বাড়ানাে হবে।
রাত ৮.৫০ নাগাদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হাসপাতালে থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকদের মুখােমুখি হয়ে বলেন, বুদ্ধবাবুকে যখন হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছিল তাঁর চেয়ে এখন ভালাে আছেন। তাঁর অবস্থা স্থিতিশীল। রক্ত দিতে হবে। রক্ত কমে গেছে। হিমােগ্লোবিনও কমেছে। তিনি দ্রুত সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরন এটাই চাই। শুনলাম তিনি নাকি একবার উঠে বসে কথাও বলেছেন।
এদিকে বুদ্ধবাবু দক্ষিণ কলকাতার হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালের নিরাপত্তা বহুগুন বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। উডল্যান্ডের পক্ষ থেকে একটি মেডিকেল বুলেটিনও প্রকাশ করা হয়। তাতে জানানাে হয়, বুদ্ধবাবুর অবস্থা স্থিতিশীল। পাঁচজনের মেডিকেল টিম তাঁর চিকিৎসার দায়িত্বে রয়েছেন। অক্সিজেন এবং কার্বনডাই অস্কাইডের অনুপাতের পার্থক্য রয়েছে। সিওপিডির সমস্যা রয়েছে। বুদ্ধবাবুর ব্লাড প্রেসার ৭০/৫০।
দীর্ঘ আড়াই বছর ধরে গৃহবন্দী রয়েছেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। ২০০৯ সাল থেকে সিওপিডির সমস্যার কারণে প্লেনে উঠতে নিষেধ ছিল বুদ্ধবাবুর। আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের লিফট ব্যবহার করতেন তিনি। সিঁড়িতে ওঠা বারণ ছিল। এমনও দিন গিয়েছে যে লিফট খারাপ থাকার কারণে বুদ্ধবাবুকে আলিমুদ্দিনে গুরুত্বপূর্ণ মিটিংয়ে যােগ না দিয়েই ফিরে যেতে হয়েছে পাম অ্যাভেনিউর বাড়িতে।
৩ ফেব্রুয়ারি সিপিএমের ব্রিগেডে বুদ্ধবাবুকে শারীরিক অসুস্থতা থাকা সত্ত্বেও উপস্থিত হতে দেখা গিয়েছিল। কিন্তু তিনি মঞ্চে উঠতে পারেননি। মিনিট পনেরাে সেখানে থাকার পর বাড়ি ফিরে যান। সম্প্রতি রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড় রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীকে দেখতে তাঁর পাম অ্যাভেনিউর বাড়িতে যান। সেই ছবি সংবাদ মাধ্যমে এবং সােস্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে যায়।
এদিন দুপুর থেকেই বুদ্ধবাবুর প্রবল শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। পরিবারের লােকেরা প্রথমে ভেবেছিলেন বাড়িতে রেখেই চিকিৎসা করাবেন। কিন্তু ক্রমশ পরিস্থিত্রি অবনতি হওয়ায় আর ঝুঁকি নেননি পরিবারের লােকেরা। অবশ্যই এর আগে বুদ্ধবাবুর শারীরিক অবস্থার খোঁজ নিতে মুখ্যমন্ত্রী। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর বাড়িতে গিয়েছিলেন। সেই সময় মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধবাবুকে অনুরােধ করেছিলেন হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার জন্য। কিন্তু বুদ্ধবাবু সেই আবেদনে সাড়া দেননি।