সরকারি কাজের অগ্রগতি যাচাই করতে নয়া অ্যাপ আনছেন মমতা

ফাইল চিত্র।

প্রশাসনিক ব্যবস্থায় সংস্কার আনতে এবার পদক্ষেপ করতে চলেছে নবান্ন। সরকারি অফিসারদের কাজকর্ম খতিয়ে দেখার জন্য একটি মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন তৈরি করা হয়েছে। এই অ্যাপের মাধ্যমে কর্মচারীদের একটা বড় অংশকে সহজেই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে। অর্থ দপ্তরের অডিট ব্রাঞ্চ থেকে এ বিষয়ে একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে। এবার থেকে শুধু এসি ঘরে বসে থাকলেই চলবে না। কাজ করতে সশরীরে যেতে হবে বিভিন্ন স্থানে। সেই বিজ্ঞপ্তির ভিত্তিতে নবান্ন ইতিমধ্যেই একটি হেল্প ডেস্ক তৈরি করেছে। ব্লক এবং মহকুমা স্তর থেকে রাজ্য সরকারের কাছে যে তথ্য আসবে, তা তদারকি করবে এই ডেস্ক।

অ্যাপটির নাম হল ফিল্ড ইনস্পেকশন- মনিটরিং অ্যান্ড সুপারভিশন মোবাইল অ্যাপ। ভার্সন ১.০.০। এই অ্যাপে জিও-ট্যাগিং এবং ওটিপি ভিত্তিক সুরক্ষার ব্যবস্থা রয়েছে। প্রতিটি তথ্য জিও-ট্যাগিংয়ের মাধ্যমে সঠিক স্থানের তথ্য সরবরাহ করবে। তাই এবার থেকে আর অফিসে বসে রিপোর্ট জমা দিলে হবে না। মূলত সরকারি সম্পত্তির রক্ষণাবেক্ষণ, স্বচ্ছতার সঙ্গে পরিষেবা দেওয়া এবং হিসাব রাখার ক্ষেত্রে এবার ডিজিটাল মাধ্যমের উপর ভরসা রাখতে চলছেন মমতা।

সরকারি অর্থের যথাযথ ব্যবহার ও অপচয় বন্ধ করতেই এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর ফলে চুরি বা প্রতারণা অনেকটাই আটকানো যাবে বলে মনে করা হচ্ছে। এছাড়াও রয়েছে আরও একটি কারণ। সরকারি আধিকারিকরা খুব ধীরে কাজ পরিচালনা করেন বলে অনেক সময়ই অভিযোগ আসে। এর ফলে মানুষ সঠিক সময়ে পরিষেবা পান না। রাজনৈতিকভাবে যার নেতিবাচক প্রভাব পড়ে তৃণমূলের উপরই। এই বিষয়টি বিবেচনা করেও অ্যাপ চালুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।


সম্পত্তির মেরামতি ও রক্ষণাবেক্ষণের নামে দুর্নীতির অভিযোগ কম হয়নি। কেউ কেউ পুকুর চুরি করেন বলে অভিযোগ। অর্থাৎ যেখানে কাজের দরকার নেই, সেখানে খাতায়কলমে কাজ দেখিয়ে টাকা বরাদ্দ করা এবং সেই টাকার তছরুপ করা হয়। এবার যে অ্যাপ আনা হয়েছে, তাতে জিপিএস ট্যাগ করে দেখাতে হবে কোন সম্পত্তির মেরামতি বা রক্ষণাবেক্ষণের কথা বলা হচ্ছে। সেই সম্পত্তির ছবি বাধ্যতামূলকভাবে তুলে পাঠাতে হবে। সামাজিক প্রকল্পে সরকারি সমীক্ষার নামেও ফাঁকিবাজি করা যাবে না। ব্লক ডেভেলপমেন্ট অফিসার কোনও প্রকল্পের জন্য তাঁর এলাকায় ঠিকমতো পরিদর্শনে যাচ্ছেন কি না তারও জিপিএস ম্যাপিং হবে।

একেবারে নিচুতলার অফিসার থেকে জেলাশাসক স্তরের আধিকারিকরা অ্যাপের মাধ্যমে যুক্ত থাকবেন। অ্যাপেই তথ্য আপলোড করতে হবে। সেই তথ্য মহকুমাশাসকও দেখতে পাবেন। আবার মহকুমাশাসক তাঁর সমীক্ষা রিপোর্ট ও পর্যবেক্ষণ অ্যাপের মাধ্যমেই জেলাশাসককে পাঠাবেন। অর্থাৎ কেউ নিজের দায়িত্ব এড়াতে পারবেন না।

নবান্নের তরফে জারি করা নির্দেশিকায় আধিকারিকদের বলা হয়েছে, কোনও কাজ শুরুর আগে যেমন সমীক্ষা রিপোর্ট পাঠাতে হবে, তেমনই কাজ শুরু হলে নির্দিষ্ট সময় অন্তর তা পরিদর্শন করে রিপোর্ট দিতে হবে। যে কাজ হচ্ছে, তার ছবি তুলে আপলোড করতে হবে আধিকারিকদের। অর্থাৎ সরকার আর আধিকারিকদের কাছে কাজের অগ্রগতি সংক্রান্ত রিপোর্ট চাইবে না। আধিকারিকদেরই সক্রিয়তা দেখিয়ে নিজে থেকে রিপোর্ট জমা করতে হবে। পুরো প্রক্রিয়াটাই হবে ডিজিটাল পদ্ধতিতে।