এইচএমপি ভাইরাস আশ্বস্ত করলেন মমতা

ফাইল চিত্র

এইচএমপি ভাইরাস নিয়ে উদ্বেগের কোনও কারণ নেই বলে রাজ্যবাসীকে আশ্বস্ত করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার গঙ্গাসাগর থেকে ফেরেন মুখ্যমন্ত্রী। ডুমুরজলা হেলিপ্যাডে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘এই ভাইরাস নিয়ে চিন্তার কারণ নেই। কোনও উদ্বেগের বিষয় থাকলে আমরা জানিয়ে দেব।’ আশ্বাস দেওয়ার পাশাপাশি ‘প্রাইভেট চক্র’ নিয়ে রাজ্যবাসীকে সতর্ক করলেন তিনি। ভাইরাস আতঙ্কের সুযোগ নিয়ে বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালগুলি সাধারণ অসুস্থতার ক্ষেত্রেও প্রচুর পরিমাণে বিল করতে পারে বলে রাজ্যবাসীকে সতর্ক করেছেন তিনি। তিনি এদিন বলেন, ‘কিছু বেসরকারি অসাধু চক্র সাধারণ মানুষকে ভয় দেখানোর চেষ্টা করছে। মোটা টাকা বিল করছে। এটা ঠিক নয়। আমরা স্বাস্থ্যসাথী কার্ড তৈরি করেছি সাধারণ মানুষের সুচিকিৎসার জন্য। কিন্তু সাধারণ জ্বরেও মোটা টাকা বিল করছে।’ ইতিমধ্যেই এই ভাইরাস এবং তার সংক্রমণ নিয়ে প্রশাসন পদক্ষেপ করেছে বলেও জানান মমতা।

উল্লেখ্য, কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী জেপি নাড্ডাও এই নয়া ভাইরাস নিয়ে সোমবার দেশবাসীকে আশ্বস্ত করেন। তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় সরকার পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছে। আতঙ্কের কোনও কারণ নেই।

করোনা আতঙ্কের পর চিনের এই নয়া ভাইরাস নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে ভারত-সহ অন্যান্য দেশে। ভারতেও এইচএমপি ভাইরাসের সংক্রমণের খবর মেলে বেঙ্গালুরু ও আহমেদাবাদে। এছাড়া মুম্বই থেকে কলকাতায় আসা এক শিশুর শরীরেও। এই ভাইরাস সংক্রমণের খবর পাওয়া গিয়েছে তামিলনাড়ুতেও। মঙ্গলবার মহারাষ্ট্রে আরও ২ শিশুর শরীরে এইচএমপি ভাইরাস সংক্রমণের খবর মেলে। পরপর এতগুলি শিশু আক্রান্ত হওয়ার খবরে স্বাভাবিকভাবেই ভীত মানুষ। তবে সত্যিই কি এই ভাইরাস নিয়ে ভয় পাওয়ার কিছু আছে?


এইচএমপিভি সংক্রমণের বিষয়টি নিয়ে চিকিৎসক সুদীপ্ত মিত্র জানান, ‘প্রতি বছরই শীতকালে দু-চারজন পেশেন্ট আসেন এই ভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ে।’ তিনি জানান, ‘এটি অত্যন্ত সাধারণ ভাইরাস। শুধু শিশুদের নয়, বয়স্কদেরও হয়।’ একই সঙ্গে তিনি জানান, ‘এই ভাইরাসের সংক্রমণ যদি একবার হয়, তবে ইমিউনিটি থাকে ১০ থেকে ১৫ বছর। এই ভাইরাসে আক্রান্ত হলে মৃত্যুর আশঙ্কাও থাকে না।’ ফলে এই ভাইরাস নিয়ে যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে তা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক বলে দাবি করেছেন চিকিৎসক সুদীপ্ত মিত্র।

মণিপাল হাসপাতালের সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ অঙ্কিতা বৈদ্য জানিয়েছেন, ‘এইচএমপিভি নতুন কোনও ভাইরাস নয়। এটি প্রাণঘাতীও নয়। তবে শিশু ও প্রবীণদের প্রতি বিশেষ নজর দেওয়া উচিত।’

নয়া ভাইরাস নিয়ে আশ্বস্ত করেছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রাক্তন প্রধান বিজ্ঞানী সৌম্যা স্বামীনাথন। তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় এই ভাইরাস নিয়ে পোস্ট করে লেখেন, ‘সকলের উচিত সাধারণ নিয়ম মেনে চলা। এই ভাইরাস নিয়ে ভয় পাওয়ার কিছুই নেই। এটা একটা সাধারণ ভাইরাস যা প্রতি বছর সংক্রামিত হয়। ঠান্ডা লাগলে যেটুকু সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত, এক্ষেত্রেও তাই করতে হবে।’ তিনি জানান, সাধারণত বছরের এই সময়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে অর্থাৎ মাস্ক পরা, নিয়মিত হাত ধোয়ার মতো অভ্যাস বজায় রাখলে রোগ থেকে দূরে থাকা যায়। তিনি এও জানান, এখনও পর্যন্ত এই ভাইরাস সংক্রমণে মৃত্যুর খবর ভারতে নেই।

বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, এটি নতুন কোনও ভাইরাস নয়। ২০০১-এর পর থেকে গোটা বিশ্ব জুড়েই রয়েছে এই ভাইরাস।