রাজ্যে ‘দুয়ারে সরকার’ ফের জানুয়ারিতে, ঘোষণা মমতার

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (File Photo: SNS)

প্রকল্প ‘ দুয়ারে সরকার। আগামী বছরের শুরুতেই ফের চালু হবে। বৃহস্পতিবার হাওড়ার প্রশাসনিক বৈঠক থেকে ঘোষণা করলেন মুখ্যমন্ত্রী বন্দ্যোপাধ্যায়। দিনক্ষণও স্থির হয়ে গিয়েছে। ২ থেকে ১০ জানুয়ারি এবং ২০ থেকে ৩১ জানুয়ারি ২০২১ সালের প্রথম মাসে এই দু’দফায় রাজ্যের ক্যাম্প করে চলবে ‘দুয়ারে সরকার’।

করোনা কালে সকলের কাছে নাগরিক পরিষেবা পৌঁছে দিতে ‘দুয়ারে সরকার’ প্রকল্প চালু করেছিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই প্রকল্প ব্যাপক সাফল্যের মুখ দেখেছে। কোনওরকম জটিলতা ছাড়া, অত্যন্ত কম সময়ের মধ্যে বিভিন্ন ক্যাম্প থেকে প্রয়োজনীয় সরকারি পরিষেবা পেয়েছেন সাধারণ নাগরিকরা।

এমনকী বহুদিন ধরে আটকে থাকা সার্টিফিকেটও পেয়ে গিয়েছেন তারা। এই ‘দুয়ারে সরকার’ প্রকল্পের মাধ্যমে প্রায় ৮০ শতাংশ কাজই শেষ হয়ে গিয়েছে। বাকিটুকুও করে দিতে বদ্ধ পরিকর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। আর সেই লক্ষ্যপুরণেই নতুন বছরের শুরুতে এই প্রকল্পের কাজ নিয়ে আসছে রাজ্য সরকার।


দু’দফায় হবে শিবির। ২ থেকে ১০ জানুয়ারি এবং ২০ থেকে ৩১ জানুয়ারি হবে ‘দুয়ারে সরকার’-এর ক্যাম্প। বৃহস্পতিবার হাওড়ায় প্রশাসনিক বৈঠক থেকে সমস্ত সরকারি আধিকারিকদের সামনেই এই ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী। সবাইকে প্রস্তুতি নেওয়ার বার্তা দিয়েছেন পাশাপাশি তাঁর পরামর্শ রাজ্য সরকারের ছোটখাটো প্রকল্পগুলিকে জনপ্রিয় প্রকল্পের সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া হোক।

তার কথায়, বিভিন্ন ছোটখাটো সরকারি প্রকল্পের জন্য টাকা বরাদ্দ হলেও খরচ করা যাচ্ছে না তাই তুলনায় কম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পগুলি বড় প্রকল্পগুলির সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া হোক। তাতে টাকাও খরচ হবে, কাজও হবে। স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ড নিয়েও নতুন ভাবনা রয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর।

আগামী ২০ নভেম্বর ‘স্টুডেন্টস মেলা’ হবে। ওইদিন প্রায় হাজার পড়ুয়াকে ঋণদান করা হবে সরকারের তরফে। হিসেব বলছে, ঋণ বাবদ ওইদিন থেকে ২০০ কোটি টাকা দেওয়া হবে তাদের। প্রতি ২০ দিন অন্তর এ ধরনের মেলা করা যায় কি না, আধিকারিকদের তাও ভাবতে বলেন মুখ্যমন্ত্রী। শিল্প বিনিয়োগের জন্য জমি প্রয়োজন।

কিন্তু সেই সংক্রান্ত কাজ থমকে রয়েছে। তা নিয়ে বৃহস্পতিবারের প্রশাসনিক বৈঠকে উষ্মা প্রকাশ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আগামী ১৪ তারিখের মধ্যে জমি জট মিটিয়ে ফেলার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। পুরভোটের আগে এদিন হাওড়ায় প্রশাসনিক বৈঠক ছিল সেখান থেকে জেলার একাধিক সমস্যা সমাধান করেন মুখ্যমন্ত্রী।

‘কার নির্দেশে কাজ বন্ধ?’ ভূমিদফতরের কর্তাকে ধমক
পুরসভার বিরুদ্ধে ধরনায় বসা বিধায়ককে ধমক

বৈঠকে জেলায় শিল্পের বিনিয়োগ নিয়ে আলোচনা চলছিল। সেই সময় ভূমি ও ভূমি সংস্কার দপ্তরের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেন মমতা। সংশ্লিষ্ট দপ্তরের পদস্থ আধিকারিককে বলেন , হাওড়া জেলায় জমি নিয়ে সমস্যা হচ্ছে। জেলা ভূমিদপ্তরের কর্তারা দেরিতে কাজ করছেন।

এরপরই তিনি জানতে চান, কার নির্দেশে কাজ বন্ধ? কারা এত বড় বড় দেখি মুখ্যমন্ত্রীর প্রশ্নের জবাবে পদস্থ আধিকারিক জানান, ভূমিদপ্তরের অবসরপ্রাপ্ত কর্মীদের কমিটি তৈরি করা হয়েছে। যারা এই কাজ করছিল। কোভিড পরিস্থিতির জন্য জমির কাজ থমকে ছিল আবার চালু হবে।

এর পরই মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ, ১৪ ডিসেম্বর সিনার্জি রয়েছে। আগে জমি সংক্রান্ত সমস্যা মিটিয়ে ফেলতে হবে। শিল্প যে রাজ্য সরকারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ টার্গেট তা আরও একবার মনে করিয়ে দেন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, মনে রাখবেন আমার টার্গেট কিন্তু ইন্ডাস্ট্রি। এদিনের বৈঠক থেকে দলীয় বিধায়ককেও ভর্ৎসনা করেন মুখ্যমন্ত্রী।

উত্তর হাওড়ার বিধায়ক গৌতম চৌধুরী। জলযন্ত্রণার প্রতিবাদে কেন পুরসভার সঙ্গে হাত মিলিয়ে পরিস্থিতি সমাধানের চেষ্টা না করে বিক্ষোভ দেখালেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন মমতা মমতার বন্দ্যোপাধ্যায়। টানা বৃষ্টিতে অক্টোবরের শুরুতে জলমগ্ন হয়ে পড়েছিল হাওড়া। প্রতিবাদে হাঁটু জলের মাঝেই ধরনায় বসেছিলেন তৃণমূল বিধায়ক। সেই ঘটনার জেরে প্রশাসনিক বৈঠক থেকে উত্তর হাওড়ার বিধায়ক গৌতম চৌধুরীকে ধমক দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

বৃহস্পতিবার হাওড়ার শরৎ সদনে প্রশাসনিক বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন জেলাশাসক, বিধায়ক সহ অন্যান্যরা। সেখানে নতুন বিধায়কদের শুভেচ্ছা জানান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানেই ছিলেন উত্তর হাওড়ার বিধায়ক গৌতম চৌধুরী। জলযন্ত্রণার প্রতিবাদে কেন পুরসভার সঙ্গে হাত মিলিয়ে পরিস্থিতি সমাধানের চেষ্টা না করে বিক্ষোভ দেখালেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

গৌতমবাবুকে তীব্র ভৎর্সনা করেন তিনি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরাসরি গৌতম চৌধুরীকে প্রশ্ন করেন, কেন রাস্তায় বসেছিলে? এরপরই তিনি বলেন, তৃণমূলের একটা সংস্কৃতি রয়েছে। একদম এসব কাজ করতে যাবে না। প্রয়োজনে নিজে জল সরানোর ব্যবস্থা করবে। হাওড়ায় জলের সমস্যাটা দীর্ঘদিনের। ৭০ বছর কেউ কাজ করেনি।

আমরা তিনটে দফায় কাজ করছি। ইতিমধ্যেই অনেক কাজ হয়েছে। শুধু চাই চাই চাই করলে চলবে না তুমি কী দিতে পার সেটা দেখো। তোমাকে জনগন অনেক দিয়েছে, এবার জনগনের কি চাই, কি সমস্যা সেটা দেখো। জনগনের জন্য কাজ করো।

উল্লেখ্য, টানা বৃষ্টির জেরে সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময় থেকে প্রায় ৫০ দিন হাওড়ার সাত নম্বর ওয়ার্ড প্রায় জলমগ্ন ছিল। বৃষ্টির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এলাকার জমা জল কিছুটা কমে। তবে আবার সামান্য বৃষ্টি হলেই এলাকার অবস্থা যেই কী সেই।

আবারও কোথাও হাঁটুজল তো কোথাও গোড়ালি ডোবা জল জমে যাচ্ছিল। তার ফলে স্থানীয়রা সমস্যায় পড়ছিলেন। প্রতিবাদে সরব উত্তর হাওড়ার তৃণমূল বিধায়ক গৌতম চৌধুরী। চেয়ার নিয়ে জমা জলে ধরনায় বসেছিলেন তিনি।