তিক্ততা ভুলে সাক্ষাৎ বোস-মমতার, নবনির্বাচিত বিধায়কদের শপথবাক্য পাঠ করালেন রাজ্যপাল

বিধানসভায় নবনির্বাচিত ৬ বিধায়ককে শপথবাক্য পাঠ করাচ্ছেন রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস। ছবি: সংগৃহীত।

অবশেষে সোমবার বিধানসভায় মুখোমুখি হলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। সকালবেলা থেকেই এরকম সম্ভাবনার কথা শোনা যাচ্ছিল। সদ্যনির্বাচিত ৬ জন তৃণমূল বিধায়ককে শপথগ্রহণ করাতে বিধানসভায় এলেন রাজ্যপাল। তাঁকে অভ্যর্থনা জানালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

বিধানসভায় রাজ্যপালকে স্বাগত জানাতে আগে থেকেই উপস্থিত ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস আসতেই তাঁকে উত্তরীয় পরিয়ে দেন তিনি। রাজ্যপালের হাতে পুষ্পস্তবক তুলে দিয়ে স্বাগত জানান স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়।

পূর্বনির্ধারিত সময়েই শপথগ্রহণ শুরু হয়। রাজ্যপাল একে একে সবাইকে শপথবাক্য পাঠ করান। প্রথমে সিতাই কেন্দ্রের বিধায়ক সঙ্গীতা রায় শপথবাক্য পাঠ করেন। শপথের পরে তাঁকে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান তুলতে দেখা যায়। তাঁর পরে শপথ নেন মাদারিহাটের তৃণমূল বিধায়ক জয়প্রকাশ টোপ্পো। তিনি ‘জয় গোর্খা, জয় আদিবাসী, জয় বাংলা’ বলে স্লোগান দেন। নৈহাটির নবনির্বাচিত বিধায়ক সনৎ দে-র মুখে আবার শোনা যায় অন্য সুর। তিনি উলটে বলেন ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জিন্দাবাদ’। মেদিনীপুরের বিধায়ক সুজয় হাজরা মমতাকে মায়ের স্থান দিয়ে বলেন, ‘দুই মায়ের কথা বলব। এক আমার জন্মদাত্রী মা । তাঁকে আমি প্রণাম করে এসেছি । আর প্রণাম জানাচ্ছি আরেক মা-কে, যিনি আমায় এখানে আসার সুযোগ করে দিয়েছেন।’


বিধানসভার প্রধান বিরোধী দল বিজেপি এই শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান বয়কট করে। বিধায়ক শঙ্কর ঘোষকে মমতার সমালোচনা করতেও শোনা যায়।

রাজ্যপালের সঙ্গে রাজ্য সরকারের দ্বন্দ্ব-সংঘাত নতুন কিছু নয়। ইতিপূর্বে প্রাক্তন রাজ্যপাল এবং বর্তমানে উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখড়ের সঙ্গে রাজ্য সরকারের বিবাদ সুবিদিত। বর্তমান রাজ্যপালের সঙ্গে প্রাথমিকভাবে সুসম্পর্ক থাকলেও পরবর্তীতে তা তিক্ত হয়ে যায়। রাজ্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নিয়োগ, রাজভবনে শ্লীলতাহানির ঘটনাসহ একাধিক বিষয়ে মতানৈক্য দেখা দেয় দুই পক্ষের মধ্যে। বাড়তে থাকে দূরত্ব।

রাজ্যপালের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর শেষ দেখা হয়েছিল গত ১৫ আগস্ট। প্রথামাফিক রাজভবনের চা চক্রে গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। কিন্তু তাঁদের মধ্যে কোনও বাক্যবিনিময় হয়নি। তারপরে দুজনের আবার দেখা হল আজ, অর্থাৎ সোমবার।
এর আগে বরানগর বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে জয়ী তৃণমূল প্রার্থী সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং ভগবানগোলা বিধানসভা কেন্দ্রের তৃণমূল বিধায়ক রেয়াত হোসেনকে শপথগ্রহণের জন্য রাজভবনে ডেকে পাঠিয়েছিলেন রাজ্যপাল বোস। ওই দুই বিধায়ক রাজি হননি। তাঁরা দাবি জানিয়েছিলেন, তাঁরা বিধানসভাতে গিয়েই শপথবাক্য পাঠ করবেন। এর জন্য ধরনাতেও বসেন তাঁরা। শেষমেশ তাতে মত দেন রাজ্যপাল। তবে, স্পিকারের পরিবর্তে রাজ্যপালের নির্দেশে তাঁদের শপথবাক্য পাঠ করান বিধানসভার ডেপুটি স্পিকার। এই নিয়েও অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছিল সরকার পক্ষের অন্দরে।

সম্প্রতি নৈহাটি, সিতাই, মাদারিহাট, হাড়োয়া, মেদিনীপুর এবং তালড্যাংরা বিধানসভা কেন্দ্রে উপনির্বাচন হয়েছে। এই ৬টি আসনেই তৃণমূল কংগ্রেস জয়লাভ করে। ভোটের ফলাফল প্রকাশের পর নিয়মমাফিক বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যপালের কাছে চিঠি পাঠান। রাজভবনে চিঠি যায় পরিষদীয় দলের থেকেও। রাজভবন থেকেই প্রত্যুত্তরে জানানো হয়েছিল, রাজ্যপাল সোমবার বিধানসভায় সশরীরে উপস্থিত থেকে নবনির্বাচিত ৬ বিধায়ককে শপথগ্রহণ করাবেন।