মালদহে তৃণমূলকর্মীকে গুলি করে খুন। দুলাল সরকার খুনের ১২ দিনের মাথায় কালিয়াচকে দুষ্কৃতীদের গুলিতে মৃত্যু হল এক তৃণমূল কর্মীর। আহত তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতি। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। কী কারণে গুলি চালানো হয়েছে, তা এখনও ধোঁয়াশা তৈরি হল। কে বা কারা হামলা তৃণমূল নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা চালালো, তা-ও জানা যায়নি। ইতিমধ্যেই ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। এলাকার একাংশের মতে, তৃণমূলের গোষ্ঠাদ্বন্দ্বের জেরেই কালিয়াচকে গুলি চালানোর ঘটনা ঘটেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার সকালে কালিয়াচকের নয়া বস্তি এলাকায় নিকাশি এবং রাস্তা উদ্বোধনের অনুষ্ঠান ছিল। কালিয়াচক এক নম্বর ব্লকের নওদা যদুপুর এলাকার তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতি বকুল শেখ সহ তৃণমূলের অন্যান্য নেতা-কর্মীরা অনুষ্ঠানে যোগ দেন। আচমকা কয়েক জন দুষ্কৃতী হামলা চালায়। গুলির আঘাতে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে বকুল। তৃণমূল কর্মী এসারুদ্দিন শেখকে গুরুতর আহত হন। মালদহ মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করানো হয়েছে তাঁদের। এদিকে এই ঘটনায় হাসান শেখ নামে এক তৃণমূল কর্মীর মৃত্যু হয়েছে। হাসপাতাল সূত্রে খবর, আহতদের অবস্থাও আশঙ্কাজনক। প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছে।
এদিকে এই খুনের তদন্তে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। পুলিশ কর্মীদের স্থানীয় খাবারের দোকান থেকে সাধারণ পলিথিন ব্যাগ ও চামচ নিয়ে তাতে করে ঘটনাস্থল থেকে নিহতের রক্তের নমুনা সংগ্রহ করতে দেখা যায়। অথচ খুনের ঘটনায় নমুনা সংগ্রহ করতে হলে জীবাণুমুক্ত টেস্ট টিউব বা বিজ্ঞানসম্মত পাত্রর প্রয়োজন পড়ে। এই বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছেন ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের প্রশ্ন, পুলিশ কি জানত না যে মার্ডার কেসের তদন্তে যাচ্ছে? তাহলে সঙ্গে নমুনা সংগ্রহের জন্য জীবানুমুক্ত পলিথিন নিয়ে গেল না কেন? এতে কি তদন্তের স্বচ্ছতা বজায় থাকবে?
তৃণমূল কর্মী খুনের বিষয়ে মুখ খুলেছেন তৃণমূল বিধায়ক আব্দুল গনি। তাঁর সাফ কথা, এটা তো তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের ফল! জাকিরের গ্রুপ বকুল ও তাঁর ভাইকে গুলি করেছে। অস্ত্র দিয়ে কুপিয়েছে। ঘটনার দলের ব্লক সভাপতির হাত রয়েছে বলে দাবি করে আব্দুল বলেন, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি মারা গিয়েছে। ব্লক সভাপতি চাইছে নিজের লোককে ওই পদে বসাতে। সেজন্য ভয় দেখানোর জন্য এসব করছে। মালদহ আগে শান্ত ছিল। হঠাৎ করে অপরাধ বেড়ে গিয়েছে। এসপি কোনও পদক্ষেপ করছে না। বাবলা সরকার খুনের পর অনেকেই ভেবেছিলেন, এসপিকে বদল করা হবে। কিন্তু তা হয়নি।
ইংরেজবাজার পুরসভার চেয়ারম্যান কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরীর দাবি, গোষ্ঠীকোন্দল নয়, এই হামলার কারণ অন্যকিছু। বাংলাদেশিরা হামলা চালিয়েছে বলেও অভিযোগ করেছেন তিনি। মালদহের তৃণমূল নেতা আশিস কুন্ডু জানান, কে বা কারা এই ঘটনার নেপথ্যে জড়িত, তা পুলিশ খুঁজে বার করবেই।
উল্লেখ্য, ১২ দিন আগে খুন হন মালদহের তৃণমূল কাউন্সিলর দুলাল সরকার। ইংরেজবাজার শহরের ঝলঝলিয়ার কাছে নিজের কারখানার সামনেই খুন হন দুলাল। তিন দুষ্কৃতী তাঁকে লক্ষ্য করে এলোপাথাড়ি গুলি চালায়। এই খুনের নেপথ্যে উঠে আসে তোলাবাজির ভাগ বাটোয়ারা সংক্রান্ত বিবাদ। সেই ঘটনার তদন্তে নেমে বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ধৃতদের মধ্যে রয়েছে দলের মালদহ শহর সভাপতি নরেন্দ্রনাথ তিওয়ারিকে। পরে অবশ্য তৃণমূল নরেন্দ্রনাথকে দল থেকে বহিষ্কার করে।