দিল্লির সাম্প্রতিক সন্ত্রাসের ঘটনায় সবচেয়ে অভিযােগের আঙুল উঠেছিল দিল্লি পুলিশের বিরুদ্ধে। আর সেই দিল্লি পুলিশের মাথা তথা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ কলকাতায় আসলে তুমুল বিক্ষোভের পরিকল্পনা আগে থেকেই করে রেখেছিল বাম ও কংগ্রেসের ছাত্র-যুব সংগঠনগুলি। তাদের সঙ্গে অমিত শাহকে কালাে পতাকা দেখিয়ে যথাযােগ্য অভ্যর্থনা জানানাের পরিকল্পনা ছিল আরাে কয়েকটি সংস্কৃতিক ও গণ সংগঠনের। সেই মতােই আজ অমিত শাহ কলতার বিমানবন্দরে পা রাখা মাত্রই আছড়ে পড়ে উত্তাল প্রতিবাদের ঢেউ।
সিএএ নিয়ে গােটা দেশ জুড়েই বিক্ষোভ-প্রতিবাদ অব্যাহত। এক নয়া নাগরিকত্ব আইনের বিরােধিতা করতে গিয়ে খাস রাজধানীতে বালি হয়েছে আম আদমী থেকে পুলিশকর্মী। দেশের শাসক গােষ্ঠী তথা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ শহরে হাজির হবেন এদিকে তাঁকে ঘিরে বিরােধবিক্ষোভ হবেনা তাও কি কখনও হয় নাকি। স্বভাবসিদ্ধ ভাবেই কেন্দ্রীয় শাসক গােষ্ঠীর বিরুদ্ধে সকাল থেকেই পথে নেমে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন বাম-কংগ্রেস কর্মী সমর্থকরা। এই আন্দোলনে হাজির ছিল বিভিন্ন ঘূত্র সংগঠনের প্রতিনিধিরা।
বিমানবন্দর থেকে শুরু হয় অমিত-বিরােধী স্লোগান। বেলা যত বাড়ে সেই প্রতিবাদের পারদ চড়তে চড়তে কার্যত বিক্ষোভের চেহারা নেয়। এমনটা যে হতে পারে সেই আন্দাজ আগে থেকেই ছিল গেরুয়া বাহিনীর এক রাজ্য প্রশাসনের। সেই মতাে অমিত শাহের নিরাপত্তার ব্যবস্থাও রাখা হয়েছিল। সর্বত্রই প্রতিবাদকারী এবং বিক্ষোভকারীদের আশেপাশে ঘেঁষতেই দেওয়া হয়নি। দিল্লি পরবর্তী পরিস্থিতিতে কলকাতার মতাে শহরে অমিত শহের নিরাপত্তা যে একটু বেশিই থাকবে সেটাও জানা ছিল বিক্ষোভকারীদের। সেই মতােই বিমানবন্দর থেকে প্রথমে রাজারহাটে এনএসজি’র দফতর উদ্বোধন, শহিদ মিনারে জনসভা এবং কালিঘাট মন্দির সর্বত্রই কালাে পতাকা নিয়ে হাজির ছিল আন্দোলনকারীরা। কার্যত নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তা বেষ্টনিতেই শহর সফর করলেন অমিত শাহ।
লােকসভার বিরােধী দলনেতা এবং রাজ্য কংগ্রেসের অন্যতম শীর্ষ নেতৃত্ব অধীর রঞ্জন চৌধুরী। প্রশ্ন তােলেন, ‘গােলি মারাে শালােকো’ কি কখনও কোনও পার্টির স্লোগান হতে পারে। বাংলার সংস্কৃতি এইরকম পরিবেশ আগে কখনও দেখেনি। দিল্লিতে দাঙ্গা বাধানাের পর কলকাতাতেও এমন পরিবেশ সৃষ্টি করার চেষ্টায় রয়েছে বিজেপি-আরএসএস। বাংলার মানুষ এসব বরদাস্ত করবে না। এই নিয়ে আজ কলকাতা সহ সমস্ত জায়গায় বিক্ষোভ কর্মসূচিতে যােগ দিয়েছে কংগ্রেসের ছাত্র সংগঠন বলে জানান অধীর রঞ্জন চৌধুরী।
অন্যদিকে এসএফআই’র কলকাতা জোনাল কমিটির সভাপতি অর্জুন রায় এদিন বলেন, যে ঘটনা আমরা দেখেছি দিল্লিতে তার মাথা ছিলেন অমিত শাহ। তিনিই আবার গুজরাট দাঙ্গারও অন্যতম হােতা। পশ্চিমবঙ্গেও সেই একই পরিবেশ সৃষ্টির চেষ্টা করা হচ্ছে। তা মেনে নেওয়া যায়না। সিএএ নিয়ে দিল্লিতে আগুন জ্বলেছে। বহু সংখ্যক মানুষ আহত ও নিহত হয়েছেন। গৃহহীন হয়েছেন অনেকে। সেই একই অবস্থা যাতে এই রাজো না হতে পারে তার জন্যই আমরা সম্মিলিতভাবে প্রতিবাদে পথে নেমেছি।
এদিন এসএফআই’র পক্ষ থেকে কোয়েস্ট মল থেকে পার্ক সার্কাস পর্যন্ত একটি বিক্ষোভ মিছিলের আয়ােজন করা হয়েছিল। এছাড়া শহরের বিভিন্ন জায়গায় নিজের এলাকায় কর্মী সমর্থকরা শাহের এই সফরের প্রতিবাদ জানিয়েছে। বিকেলে কলেজ স্কোয়ারে ছাত্র পরিষদের বিক্ষোভ কর্মসুচি আয়ােজিত হয়। সেখানেও এসএফআই’র প্রতিনিধিরা উপস্থিত রয়েছে বলে জানান অর্জুন রায়। এছাড়া শহরের বিভিন্ন অংশে এসএফআই ছাড়াও অন্য বামপন্থী সংগঠনগুলির ছাত্র যুবরাও আন্দোলনে সামিল হয়। তবে অমিত শাহের পাশাপাশি অর্জুন একই সঙ্গে রাজ্যের শাসকদলকেও এক হাত নিলেন। অমিত শাহের সফরে যে রাজ্য সরকারের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে।
সামনে নয়া নাগরিকত্ব আইন নিয়ে বিরােধিতা করলেও আদতে কেন্দ্রে ও রাজ্যের শাসক গােষ্ঠির মধ্যে অসুভ আঁতাত যে রয়েইছে তার প্রমাণ এইভাবেই বারে বারে মিলেছে বলেও মন্তব্য করেন এসএফআই’র কলকাতা জোনাল কমিটির সভাপতি অর্জুন রায়।
অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মােদির কলকাতায় সফরকালে একাধিক অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। সাধারণ মানুষও পথে বেরিয়ে সমস্যায় পড়েছিলেন। সেই অবস্থার পুনরাবৃত্তি যাতে না হয় তার জন্য আগে থাকতেই প্রস্তুত ছিল কলকাতা পুলিশ। কলকাতার উত্তর থেকে দক্ষিণ সর্বত্রই বিশাল সংখ্যায় বাহিনী মােতায়েন করা হয়। শহিদ মিনারের দায়িত্বেই ছিলেন এক যুগ্ম কমিশনার পদমর্যাদার পুলিশ আধিকারিক।
অন্যদিকে কালিঘাট মন্দিরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা পরিচালিত হয় এক ডেপুটি কমিশনার পদাধিকারিকের নেতৃত্বে। তবে এর মধ্যেও কালিঘাট মন্দির থেকে বের হওয়ার সময় কালাে পতাকা দেখানাে হয়েছে। ধর্মতলা থেকে বিজেপি’র সদর দফতরের সামনেও বিশাল সংখ্যায় বাহিনী হাজির ছিল। ধর্মতলা চত্বরে বিজেপি কর্মী সমর্থক ও বাম সংগঠনগুলি প্রায় মুখােমুখি হওয়ার জোগাড় হয়েছিল। সেই পরিস্থিতি সামাল দিতে গিয়ে রীতিমতাে হিমসিম খেয়ে ওঠে কলকাতা পুলিশ।
অমিত শাহ শহরে পা রাখার সঙ্গে সঙ্গেই বিক্ষোভকারীদের ‘গাে ব্যাক অমিত শাহ’ স্লোগান দিতে থাকে। কালাে পতাকা থেকে শুরু করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদ থেকে অচীরেই পদত্যাগের দাবি তােলা হয় বাম কংগ্রেস সংগঠনগুলির পক্ষ থেকে। এদিন দিনভর গােটা কলকাতা সহ পার্শবর্তি এলাকাগুলিতেও বিক্ষোভ কর্মসুচির আয়ােজন করা হয়েছিল। খাস কলকাতার এন্টালি, পার্ক সার্কাস, গড়িয়াহাট, কালিঘাট, ধর্মতলা, সেন্ট্রাল এভিনিউ সহ রাজারহাট, দমদম এলাকাতে বিক্ষোভে সামিল হন বাম কংগ্রেস ছাত্র সমগঠন।