করোনা আবহে গঙ্গাসাগর মেলা হওয়া উচিত কিনা এই বিতর্ক ছিলই। শুক্রবার মকরস্নানকে কেন্দ্র করে সেই বিতর্ক উঠল চরমে। গত ক’য়েকদিন ধরেই সাধারণ নাগরিক সমাজ থেকে শুরু করে আইন-আদালত, স্বাস্থ্যবিভাগ, সমাজকর্মী সকলের বাদানুবাদে গঙ্গাসাগর মেলা নিয়ে নানান মতান্তর জমে উঠেছিল।
বর্তমান কোভিড পরিস্থিতিতে বিধিনিষেধ মেনে শর্তসাপেক্ষে মেলা করার নির্দেশ দিয়েছিল কলকাতা হাইকোর্ট। কিন্তু শুক্রবার মকরস্নানের পুণ্যলগ্নের আগে দেখা গেল করোনাবিধি শিকেয় উঠেছে। ওমিক্রনের চিন্তা দূরে ঠেলে উন্মাদনায় মেতে উঠল গঙ্গাসাগর মেলা।
মেঘলা আকাশ ঝিরঝিরে বৃষ্টিকে উপেক্ষা করে লাখো লাখো পুণ্যার্থী এবারও জমায়েত হয়েছিলেন গঙ্গাসাগরে। এবার সাগরস্নানের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি ছিল।
কিন্তু শুক্রবার মকরের পুণ্যলগ্নে দেখা গেল ব্যারিকেড উপেক্ষা করেই ভিনরাজ্য থেকে আসা বহু মানুষ স্নান, হাঁটুজলে দাঁড়িয়ে পুণ্যস্নান সেরে নিচ্ছেন। ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে পোজ দিচ্ছেন নাগা সাধুরা। জটাধারী সন্ন্যাসী মাথা ডুবিয়ে স্নান সারছেন। তাঁদের জটা থেকে জলবিন্দু ছড়িয়ে পড়ছে। আশেপাশে ঢেউ তুলছেন সাধুরা।
জলে নেমে তর্পণ করে কেই মনোস্কামনা পূরণের প্রার্থনা করছেন। মকর সংক্রান্তির মাহেন্দ্রক্ষণের আগেই সাগরে পুণ্যস্নান করতে ভিড় করেছেন হাজার হাজার মানুষ। বিহার, উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ ইত্যাদি ভিনরাজ্য থেকে আসা মানুষজন সাগরমেলায় এসে মহামানরে সাগরতীরে এসে মিলে গেলেন।
মেলায় প্রবেশ করার আগে করোনাবিধির যে কড়াকড়ি লক্ষ করা যাচ্ছিল, মকরস্নানের সময় তা বেমালুম উধাও। মানা হয়নি করোনার দূরত্ববিধিও। করোনা বিধির তোয়াক্কা না করেই একসঙ্গে বহু মানুষের ভিড়ে সংক্রমণ কতটা ঠেকানো যাবে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
শুক্রবার সকাল থেকে ঝিরঝির বৃষ্টি শুরু হলেও মকরস্নানে উৎসাহের ভাটা পড়েনি। কপিল মুনির মন্দির চত্বরেও পুণ্যার্থীদের ভিড় ছিল। এদিকে করোনা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে মেলায় ঘুরে ঘুরে নজরদারি চালাচ্ছেন হাইকোর্টের নির্দেশে। সমুদ্রতট, মন্দির প্রাঙ্গনও ঘুরে দেখেন তারা।
নারী, শিশু ও সামজকল্যাণ দফতরের মন্ত্রী শশী পাঁজা, দক্ষিণ চব্বিশ পরগণার জেলাশাসক উলগানাথনও ঘুরে ঘুরে পরিস্থিতির তদারকি করেছেন। মাঝেমধ্যে পুণ্যার্থীদের উদ্দেশে স্যানিটাইজার ছিটিয়ে দেওয়া হচ্ছে। মাইকে অনবরত প্রচার চলছে মাস্ক পরার জন্য।
এদিকে দেশ তথা রাজ্য জুড়ে হু হু করে বাড়ছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। গঙ্গাসাগর ফেরত মানুষজন যখন কলকাতা হয়ে ফিরবেন, তখন করোনার সংক্রমণ আরও কয়েকগুণ ছাড়িয়ে যাবে, এমনটাই হুঁশিয়ারি দিচ্ছে চিকিৎসক মহল তবে এইসব সতর্কবাণীকে উপেক্ষা বাইশের এই সাগরমেলা হয়ে উঠেছিল বিধি ভাঙার খেলা।
তবে এর মধ্যেও মকর সংক্রান্তির শুভেচ্ছা জানিয়ে টুইট করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সকলের জন্য সুখ, শান্তি, সমৃদ্ধি, আনন্দ কামনা করেছেন তিনি।