সিভিক ভলান্টিয়ারদের সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য চাই, থানাগুলিকে নির্দেশ লালবাজারের

আর জি কর কাণ্ডে এক সিভিক ভলান্টিয়ারকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তাঁর বিরুদ্ধে এক মহিলা চিকিৎসকের ধর্ষণ করে খুনের অভিযোগ উঠেছে। আর তার পর থেকেই প্রশ্ন উঠেছে সিভিকদের নিয়ে? সিভিক ভলান্টিয়ারদের দাদাগিরি নিয়েও সুর চড়িয়েছে সাধারণ মানুষ। পরিস্থিতি আঁচ করে এবার সিভিক ভলান্টিয়ারদের নিয়ে বড় সিদ্ধান্ত নিল নবান্ন।

নবান্নের তরফে লালবাজারকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, কলকাতা পুলিশে কর্মরত সমস্ত সিভিক ভলান্টিয়ারদের সম্পর্কে কিছু তথ্য সংগ্রহ করতে হবে। মূলত দুটি তথ্য চাওয়া হয়েছে। প্রথমত, অতীতে তাঁদের কোনও অপরাধের নজির আছে কি না। আর দ্বিতীয়ত, তাঁদের চারিত্রিক কোনও দোষ রয়েছে কি না। পুরুষ-মহিলা নির্বিশেষে সমস্ত সিভিক ভলান্টিয়ারদের সম্পর্কে এই তথ্য সংগ্রহ করতে হবে।

অবশ্য এই নির্দেশ শুধুমাত্র সিভিকদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, কলকাতা পুলিশে কর্মরত হোমগার্ড সম্পর্কেও খোঁজ খবর করে তথ্য জানাতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সিভিক ভলান্টিয়ারদের শিক্ষাগত যোগ্যতা থেকে শুরু করে তাদের কাজের মূল্যায়নও সম্পর্কেও জানতে চেয়েছে নবান্ন। এদিকে নবান্ন থেকে নির্দেশ পাওয়ার পরেই এ বিষয়ে নড়েচড়ে বসেছে লালবাজার। আপাতত থানাগুলিকে জানানো হচ্ছে এই নির্দেশের কথা।


লালবাজারের শীর্ষ আধিকারিকরা বলছেন, আর জি কর হাসপাতালে মহিলা চিকিৎসকের মৃত্যুর ঘটনায় এমনিতেই রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। আর তার মধ্যে সিভিক ভলান্টিয়ার গ্রেফতার হওয়ায় এখন খুবই চাপে লালবাজার। সেই কারণেই নবান্নর নির্দেশ আসা মাত্রই তৎপরতা শুরু হয়েছে লালবাজারে। তবে এখনই এই তথ্য তলবের বিষয়ে প্রকাশ্যে মুখ খুলতে নারাজ কলকাতা পুলিশ।

অবশ্য এখানেই শেষ নয়। আরও কিছু সুনির্দিষ্ট তথ্য চেয়ে পাঠিয়েছে লালবাজার। প্রত্যেক সিভিক ভলান্টিয়ারের নাম ঠিকানা-সহ যাবতীয় পরিচয়পত্রের প্রতিলিপি যাচাই করার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। ধৃত সিভিক ভলান্টিয়ারের বিরুদ্ধে নেশা করার অভিযোগ উঠেছে। তাই নবান্ন এটাও জানতে চেয়েছে যে বর্তমানে কর্মরত সিভিক ভলান্টিয়াররা কোনও ধরনের নেশার সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন কি না।

দিন কয়েক আগেই আর জি কর হাসপাতালে এক ডাক্তারকে ধর্ষণ করে খুনের অভিযোগ ওঠে।গত শুক্রবার রাতে হাসপাতালের সেমিনার কক্ষ থেকে ওই ট্রেনি চিকিৎসককে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। হত্যার আগে তাঁকে পাশবিক নির্যাতন ও ধর্ষণ করা হয় বলে অভিযোগ।

সেই ঘটনায় জড়িত সন্দেহে এক সিভিক ভলান্টিয়ারকে গ্রেফতার করে পুলিশ। জেরার সে দোষ কবুলও করে। প্রাথমিক ভাবে কলকাতা পুলিশ ঘটনার তদন্ত চালালেও দিন কয়েক আগে ধর্ষণ-খুব কাণ্ডের তদন্তভার সিবিআইকে দেয় কলকাতা হাইকোর্ট।

সিবিআই তদন্ত চলাকালীনই আবার আর জি করে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। ‘রাত দখল’ কর্মসূচি চলাকালীন আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে হামলা চালায় একদল দুষ্কৃতী। বুধবার রাত সাড়ে ১২টা নাগাদ আর জি করের লাগোয়া এলাকায় ‘রাত দখল’ কর্মসূচির একটি মিছিল চলছিল।

অভিযোগ, সেই সময় আর জি করের জরুরি বিভাগের বাইরে তাণ্ডব চালায় একদল দুষ্কৃতী। গেট ভেঙে ভেতরে ঢুকে ভাঙচুর চালানো হয়। ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিট), সিসিইউ (ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিট), ওষুধের স্টোররুমে ভাঙচুর চলানো হয়।

আর জি করের পুলিশ ফাঁড়ি এবং আন্দোলনকারী পড়ুয়াদের মঞ্চেও ভাঙচুর চালানো হয় বলে অভিযোগ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের। ঘটনাস্থলে কিছু পুলিশকর্মী উপস্থিত থাকলেও প্রাথমিকভাবে তারা কিছু করে উঠতে পারেননি। পরে বিশাল পুলিশ বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছয়। নামানো হয় র‌্যাফও।

ভিড়কে ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটায় পুলিশ। ভাঙচুর করা হয়েছে পুলিশের একাধিক গাড়ি। দুষ্কৃতীদের ছোঁড়া ইটে জখম হন বেশ কয়েকজন পুলিশকর্মী।