• facebook
  • twitter
Saturday, 23 November, 2024

লক্ষ্মীপুজোয় দ্রব্যমূল্য আকাশছোঁ, প্রমাদ গুনছে মধ্যবিত্ত

আজ কোজাগরী লক্ষ্মীপুজো। দেবী দুর্গার কৈলাস গমনের দুঃখ ভুলে নতুন করে উৎসবে মাতবে বাঙালি।

লক্ষ্মী পুজোর আগে লক্ষ্মীর প্রতিমা নিয়ে ঘোড়ে ফিরছে এক ব্যক্তি। (Photo: IANS)

কোজাগরীর নৈবেদ্যের থালায় ‘আগুন’। বাজারে গিয়ে হাত পুড়ছে মধ্যবিত্তের। এদিকে ‘নমঃ নমঃ’ করে চড়া দামে নৈবেদ্য কিনলেও খরচ বাঁচাতে ঘট স্থাপনের পুজোর দিকেই ঝুঁকছে বেশকিছু মধ্যবিত্ত বাঙালি। মূর্তির পসরা নিয়ে বসলেও বিক্রিবাটা একেবারেই নেই, আক্ষেপের সুর মৃৎশিল্পীদের কণ্ঠে।

আজ কোজাগরী লক্ষ্মীপুজো। দেবী দুর্গার কৈলাস গমনের দুঃখ ভুলে নতুন করে উৎসবে মাতবে বাঙালি। কিন্তু লক্ষ্মীপুজোর নৈবেদ্যর থালা সাজাতে গিয়ে দামের ঠেলায় রীতিমতাে পকেট শুন্য হয়ে যাওয়ার জোগাড় মধ্যবিত্ত বাঙালির। এমনকি মাসের বাকি দিনগুলাের কথা চিন্তা করে প্রতিমার জন্য বরাদ্দ অর্থেই পড়ছে কোপ।

শিয়ালদাতে প্রত্যেক বছরের মতাে এই বছরেও মূর্তি নিয়ে বসেছিলেন সনাতন পাল। তিনি জানান, প্রত্যেক বছর লক্ষ্মীপুজোর আগের দিন দুপুরের মধ্যেই ৭০ শতাংশ মূর্তি বিক্রি হয়ে যায়। বেলা গড়ানাের সঙ্গে সঙ্গে বাকি বেঁচে থাকা মূর্তির জন্য চড়া দাম হাঁকাতেন তিনি, জানান সনাতনবাবু। কিন্তু এই বছর দৃশ্যটা সম্পূর্ণ আলাদা। এই মূর্তি বিক্রেতার কথায়, ১৬টি মূর্তির মধ্যে শনিবার দুপুর ২টো পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে মাত্র ৩টি। এক্ষেত্রেও সবথেকে কম দামি মূর্তিগুলিই বিক্রি হয়েছে বলে জানান তিনি।

বিষণ্ণতার সুর কুমােরটুলির মৃৎশিল্পীদের কণ্ঠেও। শিল্পী রতন পাল জানান জিনিসপত্রের ওপর জিএসটি বসার পর থেকে স্বাভাবিকভাবেই মূর্তির দাম বাড়াতে হয়েছে তাঁদের। মূলত মধ্যবিত্ত বাঙালি পরিবারেই বেশি লক্ষ্মীপুজো হয়। কিন্তু মূল্যবৃদ্ধির প্রভাবে প্রতিমা কিনে পুজো করতে গিয়ে পকেটে টান পড়ছে তাদের। ফলে লক্ষ্মী প্রতিমা মুর্তি খুবই কম সংখ্যায় গড়া হয়েছে চলতি বছর, জানাচ্ছেন কুমােরটুলির শিল্পীরা।

বাজারে গিয়ে দাম শুনে চক্ষু চড়কগাছ সাধারণ মানুষের। শনিবার সকালে মেয়ের হাত ধরে লক্ষ্মীপুজোর বাজার করতে শ্যামবাজারে গিয়েছিলেন শমিতা দাম। তিনি জানান, শুধু ফল নয়, অস্বাভাৰ্কি মূল্য বেড়েছে ফুলেরও। একটি পদ্মফুল অন্যান্য সময় ১৫ টাকায় পাওয়া গেলেও শনিবার ৩০ টাকার কমে পদ্ম পাওয়া যাচ্ছে না বলেও অভিযােগ এই মহিলার। তিনি আরও জানান, সাধারণ রজনীগন্ধা ফুলের মালা যা অন্যান্য সময় ৫ টাকা করে বিক্রি হয়, সুযােগ বুঝে তার দাম ১০ টাকা হাঁকাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।

এদিকে ফলমূল এবং সবজির দামও আকাশছোঁয়া। পেঁয়াজের মূল্য কেজি পিছু ৭০ টাকা থেকে কমে ৬০ টাকা হলেও আলুর দাম ১৪ টাকা থেকে বেড়ে ১৬ টাকা কিলাে হয়েছে পুজোর বাজারে। এছাড়াও শনিবার অন্যান্য জিনিসপত্রের বাজারমূল্য ছিল আপেল ১১০ থেকে ১২০ টাকা কিলাে, একশ আঙুরের দাম ২০ টাকা, একটি নারকেলের দাম ৪০ টাকা, ১টি আনারস ৭০ টাকা, তরমুজ ৪০ টাকা কিলাে, একটি বাতাবি লেবু ৩০ টাকা, এক কিলাে শশা ৬০ টাকা।

পুজোর সময় মূল্যবৃদ্ধির ঘটনায় কি পদক্ষেপ নিচ্ছে প্রশাসন? এই প্রশ্ন করা হলে টাস্কফোর্সের দায়িত্বে থাকা রবীন্দ্রনাথ কোলে পুরাে বিষয়টির জন্য ফড়েদেরই দায়ী করেন। তিনি বলেন, এই সময় কিছু অসাধু ব্যবসায়ী জিনিসপত্র মজুত করে রাখেন, যার জন্য দাম বেড়ে যায়। শহরের বাজারগুলিতে সঠিক মূল্যে জিনিসপত্র বিক্রি হচ্ছে কিনা সেই বিষয়ে নজরদারির জন্য এনফোর্সমেন্ট ব্রাঞ্চ (ইবি)র সঙ্গে বৈঠক করবেন বলেও জানান তিনি।