নিয়োগ দুর্নীতি কাণ্ডে সিবিআই মামলাতেও জামিন পেলেন কুন্তল

নিয়োগ দুর্নীতি কাণ্ডে এবার সিবিআই মামলাতেও জামিন পেলেন কুন্তল ঘোষ। এর আগে ইডির মামলাতেও জামিন পান কুন্তল। সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি সূর্য কান্ত এবং উজ্জ্বল ভুঁইয়ার ডিভিশন বেঞ্চ তাঁকে জামিন দিয়েছে। বেশ কিছু শর্তও অবশ্য দেওয়া হয়েছে কুন্তল ঘোষকে।

আদালতের তরফে শর্ত দেওয়া হয়েছে, কুন্তল ঘোষকে পাসপোর্ট জাম রাখতে হবে আদালতে। রাজ্যের বাইরে যেতে হলে নিম্ন আদালত ও তদন্তকারী সংস্থার অনুমতি নিতে হবে। তদন্ত প্রভাবিত করার প্রমাণ মিললেই জামিন খারিজ হয়ে যাবে। এই মামলা সংক্রান্ত কোনও বিষয়ে সংবাদমাধ্যমে মুখ খোলা যাবে না।

কুন্তল ঘোষ আপাতত কোনও সরকারি পদে থাকতে পারবেন না। অবশ্য রাজনৈতিক পদে থাকার বিষয়ে কোনও নির্দেশ দেয়নি সুপ্রিম কোর্ট। এই মামলার তদন্তের জন্য তদন্তকারী আধিকারিকরা তাঁকে তলব করলে অবশ্যই হাজিরা দিতে হবে। সুপ্রিম কোর্টের এই বেঞ্চেই আগামী সোমবার পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের জামিনের মামলা উঠবে।


সুপ্রিম কোর্টে মামলার শুনানিতে কুন্তলের আইনজীবীরা দাবি করেন, কুন্তল ঘোষ ১৯ মাস ধরে জেলে রয়েছেন। এই মামলায় ৩ জন আগেই জামিন পেয়েছেন। তাহলে কুন্তলকে কতদিন আটকে রাখা হবে? এর পাল্টা সিবিআই আইনজীবীরা বলেন, কুন্তল প্রভাবশালী। ভুয়ো ওয়েবসাইট তৈরি করে বিরাট কেলেঙ্কারি করেছে। অযোগ্যদের থেকে টাকা তুলেছে।

দুই পক্ষের সওয়াল শুনে বিচারপতি সূর্য কান্ত এবং উজ্জ্বল ভুঁইয়ার ডিভিশন বেঞ্চ বলে, এই মামলার তদন্ত প্রক্রিয়া শেষ হতে সময় লাগবে। কয়েক বছরও লাগতে পারে। এতদিন কীভাবে কাউকে আটকে রাখব? এরপরই কুন্তল ঘোষের জামিন মঞ্জুর করা হয়।

সপ্তাহখানেক আগে শর্তসাপেক্ষে ইডির মামলায় তাঁর জামিন মঞ্জুর করেছে কলকাতা হাইকোর্ট। কিন্তু সিবিআই মামলায় জামিন না মেলায় জেলেই ছিলেন কুন্তল। কুন্তলের ঘোষের আইনজীবী আদালতে বলেন, একই মামলায় মানিক ভট্টাচার্য জামিন পেয়েছেন। তিনি প্রাথমিক মামলার অন্যতম অভিযুক্ত হওয়া সত্ত্বেও জামিন পেয়েছেন। তাই কুন্তল ঘোষের জামিন মঞ্জুর করা হয়েছে।

প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের অপসারিত সভাপতি মানিক ভট্টাচার্য ‘ঘনিষ্ঠ’ তাপস মণ্ডলকে জেরা করে কুন্তলের নাম উঠে আসে। কেন্দ্রীয় এজেন্সির দাবি, ৩২৫ জন শিক্ষক পদপ্রার্থীর কাছ থেকে ৩ কোটি ২৫ লক্ষ টাকা নিয়েছেন কুন্তল। অভিযোগ, শিক্ষা দুর্নীতির ১৯ কোটি টাকারও বেশি পৌঁছেছিল কুন্তলের কাছে।

২০২৩ সালের ২১ জানুয়ারি হুগলির তৃণমূল নেতা কুন্তল ঘোষকে গ্রেপ্তার করে ইডি। এর আগে তাঁর বাড়িতে ২৪ ঘণ্টারও বেশি তল্লাশি চালায় কেন্দ্রীয় এজেন্সির আধিকারিকরা। জামিন চেয়ে প্রথমে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন কুন্তল। শীর্ষ আদালত ওই মামলা হাইকোর্টে ফেরত পাঠিয়ে দেয়।

প্রসঙ্গত, ২০১৪ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ সরকার পরিচালিত স্কুলগুলিতে শিক্ষক এবং অশিক্ষক কর্মীদের কাছ থেকে ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেসের কিছু অভিযুক্ত নেতার ১০০ কোটি টাকারও বেশি চাঁদা তোলার অভিযোগ ওঠে। সেই সময় শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় গ্রেপ্তার হন কুন্তল ঘোষ। ওএমআর শিট কেলেঙ্কারিতে জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠে তাঁর বিরুদ্ধে।

নিয়োগ দুর্নীতিতে ১০০ কোটি টাকারও বেশি দুর্নীতির যে অভিযোগ ওঠে তার সঙ্গে কুন্তল ঘোষের গভীর যোগসাজশের অভিযোগ ওঠে। সিবিআইয়ের অভিযোগ, তাঁর কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া বিপুল টাকা অথবা সম্পত্তির উৎসের ব‌্যাপারে কুন্তল কোনও স্বচ্ছ ব‌্যাখ‌্যা দিতে পারেননি। তাঁর আয়ের উৎস নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে।

সেপ্টেম্বর মাসে নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় জামিন পান প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন সভাপতি মানিক ভট্টাচার্য। বিচারপতি শুভ্রা ঘোষ তাঁকে জামিন দেন। ২০২২ সালে নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় তাঁকে গ্রেফতার করেছিল এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। সেই থেকে প্রায় ২৩ মাস জেলে ছিলেন মানিক।

হাইকোর্ট থেকে জামিন মিললেও বেশ কিছু শর্ত দেওয়া হয় মানিককে। শর্তগুলি হল – তদন্তকারী অফিসারকে মোবাইল নম্বর দিতে হবে। এই মামলার কোনও সাক্ষীর সঙ্গে যোগাযোগ করা যাবে না। তদন্তকারী অফিসারের অনুমতি ছাড়া বাইরে কোথাও যেতে পারবেন না মানিক। পাসপোর্ট নিম্ন আদালতে জমা দিতে হবে পলাশিপাড়ার তৃণমূল বিধায়ককে।