ক্ষিতি গােস্বামীর মৃত্যু বাম আন্দোলনের ক্ষেত্রে এক অপূরণীয় ক্ষতি। এ ক্ষতি কোনও ভাবেই পূরণ হওয়ার নয়। দীর্ঘ ৫০ বছর বাম আন্দোলন করতে গিয়ে অনেক কিছু শিখেছি তাঁর কাছ থেকে। সে কারণে বলতেই পারি ব্যাক্তিগতভাবে আমি একজন অভিভাবককে হারালাম। তাঁর শূন্যতা প্রতি পদে পদে আমি অনুভব করবাে।
একজন কাছের মানুষকে হারানাের যন্ত্রণা আমার হৃদয় জুড়ে। তাঁর চলে যাওয়াটা অপূরণীয় ক্ষতি বাম আদর্শের সঙ্গে যুক্ত সকলেরই কাছে। ১৯৬৯ সালে যখন ক্ষিতি গোস্বামী পিএসইউ’র রাজ্য সম্পাদক হিসাবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন তখন থেকেই তাঁর সঙ্গে আমার পরিচয়। তাঁর নেতৃত্বেই বাম আন্দোলনে ঝাপিয়ে পড়া।
১৯৯৫ সালে ক্ষিতি’দা পূর্তমন্ত্রীর দায়িত্ব নেন। ৩৪ বছরের বাম আমলে রাজ্য সরকারের খুবই গুরুত্বপূর্ণ মুখ ছিলেন ক্ষিতি গোস্বামী । দীর্ঘদিন রাজ্যের একাধিক দফতরের দায়িত্ব যেমন সামলেছেন তেমনি ছিলেন আরএসপি’র রাজ্য সম্পাদকও। বামফ্রন্টের প্রায় জন্মলগ্ন থেকেই রাজ্যের বাম আন্দোলনের প্রসারে সক্রিয় ভূমিকা নিয়েছেন তিনি। জোট সরকারে থেকেও যেমন সরকারের সমালােচনা করেছেন বিভিন্ন কাজের, তেমন বামফ্রন্টকে ঐক্যবদ্ধ রাখার জন্যও চেষ্টা করেছেন সবসময়।
আরএসপি’র হয়ে রাজ্য তথা দেশের বাম আন্দোলনে অক্লান্ত পরিশ্রম করে গিয়েছেন তিনি। ২০১৮ সালের ডিসেম্বর মাসে ক্ষিতিদা দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচিত হন। বহরমপুরের ত্রিদিব চৌধুরির পর একই সঙ্গে রাজ্য সম্পাদকের পাশাপাশি কেন্দ্রীয় সম্পাদকের দায়িত্ব পান। ক্ষিতি’দা উল্লেখযােগ্যভাবে বামফ্রন্ট সরকার থাকাকালীন সিঙ্গুর নন্দীগ্রাম নিয়ে মতাদর্শগত প্রশ্ন করায় তাঁকে কটুকথাও শুনতে হয়েছিল। যদিও তিনি যে মূল স্রোতের সঙ্গেই আছে তা আজ আর কারাে অজানা নয়।
বিভিন্ন ক্ষেত্রে মতের অমিল হলেও সেই অমিল বেশিক্ষণ স্থায়ী হতাে না। তিনি যে দলকে সঠিকভাবে পরিচালনা করছেন এই বিশ্বাস তিনি দলের সর্বস্তরের কর্মীদের মধ্যে তৈরি করতে পেরেছিলেন। কেউ কোনও সমস্যায় পড়লে ক্ষিতি’দা মুশকিল আসান হয়ে দাঁড়াতেন। একজন নেতার প্রতি কর্মীদের অগাধ বিশ্বাসই পারে ক্ষিতি’দার মতাে নেতা তৈরি করতে।
ডানপন্থীদের কাছেও ক্ষিতি’দার যথেষ্ট কদর ছিল। ক্ষিতি’দার মৃত্যু শুধু বাম রাজনীতিতে নয়, সর্বস্তরের রাজনীতির ক্ষেত্রে শুন্যতার সৃষ্টি করলো। একটা কথায় নির্দ্বিধায় বলতে পারি ক্ষিতি’দার ক্ষয় নেই। আদর্শের সরণিতে তিনি চিরকালই বেঁচে থাকবেন মানুষের মধ্যে।