হিন্দুশাস্ত্র মতে দশ মহাবিদ্যার দ্বিতীয় মহাবিদ্যার কৌশিকী তারই একটি রূপ। আর তাই বীরভূমের তারাপীঠে কৌশিকী অমাবস্যা তিথিতে দ্বারকা নদ তীরবর্তী তারাপীঠ মন্দিরে মা তারাকে পুজো দিতে পুণ্যার্থীদের ভীড় আছড়ে পড়ে প্রতি বছর। এবার সোমবার ১ সেপ্টেম্বর শেষ রাতে ৫ টা ৫ মিনিট ৫১ সেকেণ্ডে কৌশিকী অমাবস্যা তিথি শুরু হয়ে শেষ হবে পরদিন মঙ্গলবার ২ সেপ্টেম্বর সকাল ৬ টা ২৯ মিনিটে। এবার সোমবার শেষ রাতে কৌশিকী অমাবস্যার তিথি শুরু হওয়ায় একে সোমবতী অমাবস্যা তথা কৌশিকী অমবস্যা তিথি বলা হচ্ছে। এজন্য বিশেষ পুজো ও তন্ত্র সাধনার আয়োজন করা হয়েছে। এই রাতকে বলা হয় ‘তারা রাত’। এই রাতেই স্বর্গ ও নরক–উভয়েরই দরজা খুলে যায়। এই রাতেই মা তারা শুম্ভ ও নিশুম্ভ নামে দুই অসুরকে দমন করেছিলেন।
মা তারার ভক্ত সাধক বামাচরণ ১২৭৪ বঙ্গাব্দে তারাপীঠের শ্বেত শিমুলতলায় তপস্যায় বসে এই রাতেই মা তারার দর্শন পেয়ে সাধক বামাক্ষ্যাপা হিসেবে খ্যাত হয়েছিলেন। তাই তারাপীঠের মা তারার সঙ্গে ভক্তজনেদের কাছে সমানভাবে উচ্চারিত হয় সাধক বামাক্ষ্যাপার নাম। এবার কৌশিকী অমাবস্যার আগে শনিবার ও রবিবার ছুটির দিন পড়ায়, কৌশিকী অমাবস্যায় ভীড় আছড়ে পড়বে বলে মনে করছে তারাপীট মন্দির কমিটি। মন্দির কমিটি মনে করছে, এবার কৌশিকী অমাবস্যা উপলক্ষ্যে সাত লক্ষেরও বেশি পুণ্যার্থীর সমাগম ঘটবে তারাপীঠে। সে জন্য তারাপীঠ মন্দির কমিটি ও পুলিশ প্রশাসনের দিক থেকে সমস্ত ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
কৌশিকী অমাবস্যার সময় তারাপীঠের নিরাপত্তা ব্যবস্থার দিকে বিশেষভাবে নজর দিতে জেলা পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে তারাপীঠ মন্দির কমিটি, তারাপীঠ–রামপুরহাট উন্নয়ন পর্ষদ, হোটেল ও লজ মালিকদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে যে, হোটেল ও লজ মালিকদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে যে সব হোটেল ও লজের নিজস্ব কারপার্কিংয়ের ব্যবস্থা রয়েছে তাদের সেখানে যে সব গাড়ি আসবে তাদের গাড়িগুলি রবিবার ১ সেপ্টেম্বর বিকাল ৪ টের পর থেকে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। পুণ্যার্থীদের ব্যক্তিগত গাড়িগুলি জাতীয় সড়কের মনসুবা মোড়ে আটকে দেওয়া হব। এজন্য সেখানে একাধিক পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেখান থেকে আটো ও ট্রেকারে চেপে যাতায়াত করতে পারবেন পুণ্যার্থীরা। গত বছরের চেয়ে এবার বেশি সংখ্যায় ২ হাজার ৭০০ জন পুলিশ কর্মী মোতায়েন করা হয়েছে।
এখানে নজরদারি চালাতে যে ৫০ টি সিসিটিভি ক্যামেরা রয়েছে, সেই সংখ্যা বাড়িয়ে ২০০ টি করা হয়েছে। ওয়াচ টাওয়ার বসানো হয়েছে ৯ টি, রাখা হয়েছে প্রয়োজনভিত্তিক ড্রোন ক্যামেরা, পুণ্যার্থীদের সুবিধার্থে পুলিশি সহায়তা কেন্দ্র খোলা হয়েছে ১৫ টি। রয়েছে ক্যুইক রেসপন্স টিম ও মহিলাদের নিরাপত্তা দিতে এবং ইভটিজিং রুখতে উইমেন্স টিম। কৌশিকী অমাবস্যা তিথিতে রবিবার ১ সেপ্টেম্বর সকালে দেবীকে স্নান করিয়ে ও মঙ্গলারতির পর দর্শনার্থীদের জন্য খুলে দেওয়া হবে গর্ভগৃহ। সন্ধ্যায় দেবীকে স্বর্ণাঙ্কারে সাজিয়ে দেওয়া হবে কৌশিকী রূপে। এদিন সারারাত ধরে পুজো দিতে পারবেন ভক্তরা। সে জন্য ভক্তদের লাইনে দাঁড়াতে বাঁশের বেড়া দিয়ে পুরুষ ও মহিলাদের জন্য তৈরী করা হয়েছে পৃথক পথ। আর যাঁরা ভীড়ের কারণে ভিতরে প্রবেশ করতে পারবেন না, তাঁদের জন্য বিভিন্ন রাস্তার মোড়ে মন্দিরের পুজো দেখাতে জায়ান্ট স্ক্রিন লাগানো হয়েছে। মন্দিরের গর্ভগৃহের দেওয়ালে ফেলা আলোর ছটার জৌলুষ ছাড়াও গোটা মন্দির চত্বর সাজানো হয়েছে ফুল ও আলোকসজ্জায়।।