ফের আদালতে হাজিরা এড়িয়ে গেলেন ‘কালীঘাটের কাকু’ ওরফে সুজয়কৃষ্ণ

ফাইল চিত্র

ফের হাজিরা এড়ালেন নিয়োগ মামলায় অন্যতম অভিযুক্ত ‘কালীঘাটের কাকু’ ওরফে সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র। বৃহস্পতিবারও তাঁকে আদালতে হাজির করানো গেল না। এই নিয়ে চতুর্থবার হাজিরা এড়িয়ে গেলেন তিনি। নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ইডি-র পর গত ২৮ নভেম্বর, সিবিআই তাঁকে হেফাজতে চেয়ে বিচার ভবনে আবেদন জানায়। মূলত তাঁর কণ্ঠস্বরের নমুনা সংগ্রহ করতে চায় কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা। এজন্য তাঁকে হেফাজতে নেওয়া প্রয়োজন। কিন্তু আদালত সেদিন স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেয়, সশরীরে আদালতে হাজিরা না দেওয়া পর্যন্ত তাঁকে হেফাজতে নেওয়া যাবে না। যার ফলে ‘শোন অ্যারেস্ট’ না দেখানো পর্যন্ত হেফাজতে নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।

যদিও ২৮ নভেম্বর তিনি শারীরিক অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে হাজিরা এড়িয়ে যান। ওইদিন আদালত প্রশ্ন তোলে, কেন তাঁকে হাজির করানো যাচ্ছে না! এ বিষয়ে বিচারক প্রশ্ন তোলেন, সিবিআই কেন তাঁকে হেফাজতে নিতে এত মরিয়া হয়ে উঠেছে? কেন তাঁকে হাজির করাতে চাইছে, আদালতের সামনে সেটা স্পষ্ট করতে হবে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাকে। এদিন বিচারক সাফ জানিয়ে দেন, সশরীরে হাজিরা না দেওয়া পর্যন্ত কাউকে হেফাজতে নেওয়া যাবে না। সিবিআই হেফাজতে নিতে চাইলে আগে সুজয়কৃষ্ণকে আদালতে হাজির করাতে হবে।

এরপরই কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা জানায়, ‘কালীঘাটের কাকু’র কণ্ঠস্বরের নমুনা সংগ্রহ করা তাঁদের কাছে খুবই জরুরি। এরপর বিচারক পাল্টা প্রশ্ন করেন,’আপনারা আজই কেন গ্রেপ্তার করতে চাইছেন? আর উনিই বা দু’দিন ধরে সশরীরে আসতে পারছেন না কেন? ওঁকে যে হাজির করানো যাচ্ছে না, তার কারণ সত্য কি না, তা-ও তো যাচাই করে দেখা উচিত! এর জন্য রিপোর্ট দিতে হবে যে, কেন ওঁকে দু’দিন ধরে হাজির করানো গেল না।’


এরপর ৫ ডিসেম্বর ফের আদালতে হাজিরার নির্দেশ দেন বিচারপতি। সেই নির্দেশেও স্থগিতাদেশ চেয়েছেন ‘কালীঘাটের কাকু” ওরফে সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রের আইনজীবী সেলিম রহমান। সূত্রের দাবি, সিবিআই-এর হাতে গ্রেপ্তার হতে পারেন এই আশঙ্কায় হাজিরা এড়িয়ে যাচ্ছেন ‘কালীঘাটের কাকু’। পাশাপাশি, তিনি আগাম জামিনের আবেদনও জানিয়েছেন। এজন্য কলকাতা হাইকোর্টে আবেদন জানিয়েছেন, সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র ওরফে ‘কাকু’। যা এখনও আদালতে বিচারাধীন।

কিন্তু এই হাজিরা এড়িয়ে যাওয়া প্রসঙ্গে কী বলছেন তিনি? কেনই বা হাজিরা এড়িয়ে যাচ্ছেন? এবিষয়ে তাঁর যুক্তি কী? বৃহস্পতিবার তাঁর আইনজীবী সেলিম রহমান আদালতে জানান, তাঁর মক্কেলের একটি মামলা চলছে হাইকোর্টে। যদিও সেই মামলার শুনানিতে হাইকোর্টের বিচারপতি মৌখিকভাবে জানান, সিবিআই এখনই কোনও পদক্ষেপ করবে না। অথচ সিবিআই নিম্ন আদালতে ‘কালীঘাটের কাকু’র হাজিরার জন্য আবেদন করতেই নতুন করে সংশয় তৈরি হয়েছে। তবে এবিষয়ে সিবিআই-এর আইনজীবী অন্য ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলেন, হাইকোর্টের আবেদনে কোথাও বলা হয়নি যে, নিম্ন আদালতে মামলার শুনানি চলবে না। সেই কারণে তাঁরা ‘কাকু’র হাজিরার জন্য আবেদন করলে আদালত তাতে সম্মতি দেয়।

এদিকে ‘কাকু’র আইনজীবী দাবি করেন, উচ্চ আদালত নির্দেশে না বললেও মৌখিকভাবে জানিয়েছিল, সিবিআই আর কোনও পদক্ষেপ করবে না। পাল্টা সিবিআই-এর আইনজীবী বলেন, ‘যা মনে হচ্ছে, ওঁরা এই দুর্নীতির তদন্ত করতেই মানা করছেন।’ কাকুর আইনজীবী সেই অভিযোগ অস্বীকার করেন। বলেন, ‘একদমই না।’ এ প্রসঙ্গে বলা প্রয়োজন, শুক্রবার বিচারপতি জয়মাল্য বাগচী এবং বিচারপতি গৌরাঙ্গ কান্তের ডিভিশন বেঞ্চ মৌখিকভাবে এখনই তাঁর ওপর কঠোর পদক্ষেপে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে।

উল্লেখ্য, এর আগে ২৮ নভেম্বর তৃতীয়বার হাজিরা এড়িয়ে যান সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র ওরফে ‘কাকু’। এরপর তাঁর মেডিক্যাল রিপোর্ট আদালতে জমা দেয় জেল কর্তৃপক্ষ। সেই রিপোর্টে বলা হয়, ‘কাকু’র পেটে ব্যথা এবং তিনি দুর্বল রয়েছেন। তাই আদালতে সশরীরে হাজিরা দিতে পারছেন না। ফের ৫ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবারও আদালতে সেই একই কথা বলা হল।