জুনিয়র পিসি সরকারের কান্ডকারখানা মনে করিয়ে দিচ্ছে, প্রাচীন যুগের রাজাদের কাহিনীর কথা। নিজের রাজকন্যার পছন্দ মতো পাত্র বাছতে ডাকা হতো স্বয়ম্বর সভা। সেখানে এসে ভিড় করতেন বিভিন্ন রাজ্যের রাজপুত্র এবং রাজারা। ভরা সভায় পছন্দ মতো পাত্রের গলায় মালা পরিয়ে দিতেন কন্যে। এবার অনেকটা সেই পথেই হাঁটতে চলেছেন জাদু সম্রাট জুনিয়র পিসি সরকার। তিনি তিন মেয়ের বিয়ে দেবেন একবারেই। তাঁদের একসঙ্গেই হবে স্বয়ম্বর সভা। এজন্য কাগজে বিজ্ঞাপন দিয়েছেন আদুরে কন্যাদের বাবা জুনিয়র পিসি সরকার। যা নিয়ে রীতিমতো হুলস্থূল কান্ড! তবে এক্ষেত্রে নিয়মটা একটু অন্যরকম। আগে পাত্র বাছাই হবে। তারপর ডাকা হবে স্বয়ম্বর সভা। সেখানেই মেয়েদের পাত্রস্থ করবেন জাদু সম্রাট।
সম্প্রতি একটি সংবাদপত্রের রবিবারের পাতায় প্রকাশিত বিজ্ঞাপন সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়। সেখানে উল্লেখ করা হয়, জুনিয়র পিসি সরকার তাঁর তিন মেয়েকে একসঙ্গে বিয়ে দিতে চান। এজন্য তাঁদের যোগ্য পাত্র খুঁজছেন। আর এই খবর ছড়িয়ে পড়তেই পাত্রদের লাইন পড়ে গিয়েছে জাদু সম্রাটের মেয়েদের বিয়ে করার জন্য। এক এক করে বহু পাত্রের আবেদনের পাহাড় জমেছে পিসি সরকারের বাড়িতে। ইচ্ছুক পাত্রের তালিকায় রয়েছেন আইএএস, আইপিএস, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার থেকে শুরু করে সেলিব্রিটিরাও। অনেক পাত্র আবার মেয়ের বয়সের থেকে ছোট, তা সত্ত্বেও তিনি জাদু সম্রাটের কন্যাকে বিয়ে করতে আবেদন করেছেন। কোনও কোনও পাত্রের আবার তর সইছে না। এমন ভাব করছেন, যেন তাঁর মেয়েকে এখনই দিলে বিয়ে করে ঘরে নিয়ে যাবেন।
কিন্তু পিসি সরকার এই পাত্র বাছাইয়ের ক্ষেত্রে কতকগুলি পদ্ধতি অবলম্বন করতে চলেছেন। আবেদন জমা নেওয়া হবে আগামী ২৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত। প্রথম পর্যায়ে সেই গুরু দায়িত্ব অর্পণ করেছেন স্ত্রী জয়শ্রী দেবীর ওপর। তিনি সেরা পাত্রদের বাছাই করবেন। পিসি সরকার তাঁর সঙ্গে সহযোগিতা করবেন। জানুয়ারি মাসের প্রথমে স্বামী-স্ত্রী দুজনে বসে আবেদনপত্রের পাহাড় ঘেঁটে প্রথম দফায় তালিকা তৈরি করবেন। তারপর সেই তালিকা নিয়ে বসবেন মেয়েরা। এরপর তিন মেয়েকে নিয়ে একসঙ্গে বসে বাবা-মা চূড়ান্ত তালিকা তৈরি করবেন। যোগ্য পাত্রদের পছন্দ করবেন তিন মেয়ে। এরপর একটা নির্দিষ্ট দিনে স্বয়ম্বর সভার আয়োজন করা হবে। সেখানে আমন্ত্রিত থাকবেন রাজ্য ও দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বরা।
কেমন পাত্রের ভাগ্যে শিঁকে ছিঁড়বে? এব্যাপারে পিসি সরকার সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন, ‘বউয়ের পছন্দ উচ্চপদস্থ সরকারি চাকুরে। সব মা চান মেয়েরা প্রতিষ্ঠিত ও নির্ভরযোগ্য পাত্রের ঘরণি হোক। কিন্তু আমি আবার একটু বিজনেস-কর্পোরেট পাত্র ভালোবাসি। দেখা যাক, কী আছে কপালে। তবে মেয়েরা কী চায়, সেটাও মাথায় রাখতে হবে।’
জাদু সম্রাট সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন, ইতিমধ্যে আবেদন করেছেন ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, কর্পোরেট কর্তা, অধ্যাপক-শিক্ষক, ব্যবসায়ী, উচ্চপদস্থ সরকারি চাকুরে, পরামর্শদাতা (কনসালট্যান্ট) থেকে শুরু করে শিল্পজগতের মানুষরাও আছেন। অনেক প্রবাসী পাত্রও আবেদন করেছেন। তাৎপর্যপূর্ণ হল, এরই মধ্যে ৮ জন আইএএস ও আইপিএস পাত্র আবেদনপত্র জমা দিয়েছেন। আরও অনেকে পাঠাচ্ছেন। আনন্দের বিষয় হল, পাত্ররাই নিজেই স্বতঃস্ফূর্তভাবেই যোগাযোগ করেছেন।
প্রসঙ্গত ১৯৭২ সালে জাদুসম্রাট পিসি সরকারের সুযোগ্য পুত্র জুনিয়র পিসি সরকারের সঙ্গে বিয়ে হয় জয়শ্রী সরকারের। তাঁদের তিন মেয়ে। মানেকা, মুমতাজ ও মৌবনী সরকার। বড় মেয়ে মানেকা সরকার কর্মজীবনে তাঁর বাবার পেশাকেই বেছে নিয়েছেন। বর্তমানে তিনি একজন জাদু সম্রাজ্ঞী হয়ে উঠেছেন। দেশ-বিদেশে বাবার সঙ্গে বিভিন্ন শোয়ে তাঁর ম্যাজিক শো খুবই জনপ্রিয়। এপর্যন্ত তিনি প্রায় ২৫০টি ম্যাজিক শো-তে অংশগ্রহণ করেছেন। একসময় সংবাদপত্রতেও তিনি জাদু নিয়ে ধারাবাহিকভাবে লেখালিখি করতেন। বিভিন্ন বৈদ্যুতিক সংবাদ মাধ্যমেও তাঁর আনাগোনা লক্ষ্য করা যায়। আবার মেজ মেয়ে মুমতাজ সরকার পেশায় একজন মডেল ও অভিনেত্রী। ৩৮ বছরের এই তন্বী ইতিমধ্যে বহু সিনেমা ও ওয়েব সিরিজে অভিনয় করেছেন। ছোট মেয়ে মৌবনী সরকারের বয়স ৩৭ বছর। পেশায় তিনি একজন অভিনেত্রী ও চিত্র শিল্পী। প্রসেনজিতের বিপরীতে তিনি প্রথম অভিনয় করেন। তাঁর অভিনীত বেশ কয়েকটি সিনেমা বেশ জনপ্রিয়। এই তিন কন্যাকেই এবার বিয়ের পিঁড়িতে হাজির করতে চলেছেন পিসি সরকার। যদিও বড় মেয়ে মানেকা সরকারের পূর্বে একবার বিয়ে হয়েছিল। কিন্তু সেই বিয়ে টেকেনি।