‘তিলোত্তমার বিচার’ চেয়ে শারদোৎসবে ফের আন্দোলনে জুনিয়র ডাক্তাররা 

আরজি কর হাসপাতালে তরুণী চিকিৎসকের নৃশংস হত্যার কারণে যে প্রতিবাদ আন্দোলন বুকের মধ্যে ‘আগুন’ জ্বালিয়ে দিয়েছিল, সেই আগুনকেই পুজোর ‘আলো’ করে তুলতে চান জুনিয়র ডাক্তাররা। আন্দোলনকে আরও বৃহৎ রূপ দিতে এটি তাঁদের আন্দোলনের দ্বিতীয় ধাপ। তাঁদের মূল দাবি— ‘নির্যাতিতার বিচার’ – সহ আরও কিছু স্বাস্থ্যব্যবস্থা সংক্রান্ত দাবিতে ২৭ সেপ্টেম্বর থেকে পথে নামছেন তাঁরা । এই দাবিগুলির মধ্যে অন্যতম বাংলার স্বাস্থ্যব্যবস্থা  থেকে ‘থ্রেট কালচার’ এর অবসান ঘটানো।
আন্দোলনের নতুন ভাষা শিখিয়েছেন জুনিয়র ডাক্তাররা। দেখিয়েছেন কিভাবে শান্তিপূর্ণ পথে মাথা না নুইয়ে নিজের আন্দোলনকে সফল করে তোলা যায়। এবার শারদ উৎসবের সন্ধিক্ষণে ফের ‘নির্যাতিতার বিচার’ চেয়ে আন্দোলনের পথে জুনিয়র ডাক্তাররা। সূত্রের খবর, মঙ্গলবার জুনিয়র ডাক্তারদের  জিবি মিটিংয়ে  দুই থেকে তিন দফা কর্মসূচির খসড়াও প্রস্তুত করে ফেলা হয়েছে। জিবি মিটিংয়ে সব পক্ষের মতামত নিয়ে পরবর্তী আন্দোলনের রূপরেখাও স্থির করা হয়েছে। প্রথম দফার আন্দোলনের লক্ষ্য ছিল রাজ্য সরকার। শারদ আন্দোলনে জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনের লক্ষ্যে থাকবে কেন্দ্র তথা সিবিআই।
দ্বিতীয় দফার এই আন্দোলনে জুনিয়র ডাক্তারদের মূল ১ নম্বর দাবি নির্যাতিতার বিচার।  সেই সঙ্গে ৪ এবং ৫ নম্বর দাবিকেও জুড়তে চান তাঁরা । দাবি সনদের ৪ নম্বরে ছিল রাজ্যের স্বাস্থ্যব্যবস্থার পরিকাঠামোয় বদল। এই বিষয়ে ইতিমধ্যেই মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ ১০ দফা নির্দেশিকা পাঠিয়েছেন রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরের প্রধান সচিব নারায়ণস্বরূপ নিগমকে। জুনিয়র ডাক্তারেরা তার দ্রুত প্রয়োগ চান। জুনিয়র ডাক্তাররা চান  ‘থ্রেট কালচার’ কেটে অবসান ঘটাতে। কারণ, তাঁরা মনে করেন, সরকারি হাসপাতালের মধ্যে চিকিৎসককে ধর্ষণ করে খুনের ঘটনা এই ‘থ্রেট কালচার’ এরই প্রতিফলন।
গত শুক্রবার নাগরিক সমাজের ডাকে ‘মশাল মিছিল’- এ  অংশ নিয়েছিলেন অসংখ্য মানুষ।  নাগরিক সমাজের ডাকে ‘রিলে মশাল মিছিল’ শুরু হয়েছিল হাইল্যান্ড পার্ক থেকে , যে অনির্বান মশাল মিছিল মধ্যরাত পেরিয়ে শেষ হয় শ্যামবাজারে। সেখানে এক শিশুকন্যার ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় সবার নজর কেড়ে নিয়েছিল। তার পরনে ছিল একটি চোখ আঁকা জামা, যে চোখ থেকে রক্ত ঝরছে। নীচে লেখা, ‘এ বারের সব প্রতিমা, তিলোত্তমা তিলোত্তমা’। কার্যত সেই বার্তা নিয়েই পুজোর মুখে নতুন আন্দোলনের রূপরেখা সৃষ্টি করতে চলেছেন জুনিয়র ডাক্তারেরা।
শুক্রবার দক্ষিণ কলকাতার ধনধান্য প্রেক্ষাগৃহে একটি নাগরিক কনভেনশন আয়োজন করতে উদ্যোগী হয়েছেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। অক্টোবরের শুরু থেকে আন্দোলনের ধারা কেমন হবে , তা নিয়ে প্রকাশ্যে কিছু না বললেও জুনিয়র ডাক্তারদের একান্ত আলোচনায় উঠে এসেছে নির্যাতিতার বিচার চেয়ে আন্দোলনকে কেমনভাবে শারোদোৎসবের মূল সুরের সঙ্গে মিলিয়ে দেওয়া যায়। পৌঁছে দেওয়া যায় শহর থেকে গ্রামবাংলায়। সেসব নিয়েও কনভেনশনে মতের আদ্যাপ্রদান করতে চান জুনিয়র ডাক্তাররা।  
 
অন্য একটি বিষয়েও বার্তা দিতে চান জুনিয়র ডাক্তাররা। আন্দোলনের ‘মুখ’ হওয়ায় তীব্র আপত্তি জানিয়েছেন তাঁরা। জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনের সময় সামনের সারিতে যাঁরা ছিলেন বা সাংবাদিক সম্মেলনে যাঁরা কথা বলেছেন, অনেকে তাঁদেরকেই এই আন্দোলনের ‘মুখ’ হিসাবে তুলে ড্রতে চাইছেন অনেকেই। কিঞ্জল নন্দ, দেবাশিস হালদার, রুমেলিকা কুমারদের  নাম উঠে আসছে আন্দোলনের ‘মুখ’ হিসেবে। জুনিয়র ডাক্তারদের বক্তব্য, এই আন্দোলনের মুখ ‘মানুষ’ । তাই ফেসবুকে কিঞ্জলের আবেদন, ‘এই আন্দোলন সবার। প্রত্যেকের। তাই ব্যক্তিবিশেষকে প্রাধান্য দিয়ে আন্দোলনের ‘স্পিরিট’কে আটকে দেবেন না। প্রতিটি মানুষই এই আন্দোলনের মুখ।’