• facebook
  • twitter
Monday, 21 October, 2024

‘শর্ত’ মেনে অনশন না তুলেই মুখ্যমন্ত্রীর বৈঠকে যাবেন, মুখ্যসচিবকে ইমেল জুনিয়র ডাক্তারদের

কিছু দাবি পূরণ হয়েছে, কিছু হয়নি। কিছু দাবি পূরণের কাজ চলছে, আবার কিছু দাবি পূরণের আশ্বাস দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই আবহে সোমবারের বৈঠক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে। এই বৈঠকে কি আদৌ কোনও জট খুলবে?

দফায় দফায় বৈঠক, আশ্বাস, পাল্টা-আশ্বাসের পরেও সমাধান অধরা। সরকারের বিরুদ্ধে জুনিয়র চিকিৎসকদের ক্ষোভের পারদ ক্রমশই চড়ছে। ১০ দফা দাবিতে ধর্মতলায় চলছে জুনিয়র ডাক্তারদের আমরণ অনশন। শনিবার ফের সমস্যা সমাধানে এক ধাপ এগিয়ে এসেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নবান্নে বৈঠকের ডাক দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই ডাকে সাড়া দিয়েই সোমবার নির্ধারিত সময়ে নবান্ন যাচ্ছেন জুনিয়র চিকিৎসকেরা। তবে পূর্ব ‘শর্ত’ মেনে অনশন উঠবে না। রবিবার মুখ্যসচিবকে ইমেল করে এ কথা সাফ জানিয়ে দিলেন অনশনরত ডাক্তারেরা।

সোমবার বৈঠক যোগ দেওয়া নিয়ে আগেই উৎসাহ প্রকাশ করেছিলেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। কিন্তু শনিবার রাতে মুখ্যসচিবের পাঠানো ইমেলে উল্লেখ ছিল, অনশন তুলে তবেই বৈঠকে যোগ দেওয়া যাবে। এছাড়াও চিকিৎসকদের সামনে একাধিক ‘শর্ত’ রেখেছিলেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী। তবে সেই ‘শর্ত’ আদৌ মানা হবে কি না, সেই নিয়ে শনিবার রাতেই বৈঠক করেন চিকিৎসকেরা। রবিবার সকাল থেকেও এনআরএস মেডিক্যাল কলেজে জুনিয়র ডাক্তারদের জেনারেল বডির দীর্ঘক্ষণ বৈঠক হয়। ওই বৈঠক শেষেই মুখ্যসচিবকে ইমেল করে নিজেদের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেন জুনিয়র চিকিৎসকেরা।
প্যান জিবি বৈঠকের পর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে আন্দোলনকারী জুনিয়র ডাক্তার দেবাশিস হালদার বলেন, ‘অনশনকারীদের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। তাই এখনই অনশন প্রত্যাহার নয়। আমরা চাই কোনও পূর্ব শর্ত ছাড়াই বৈঠকে যোগ দিতে। নির্দিষ্ট সময়েই আমাদের প্রতিনিধিরা বৈঠকে যোগ দেবেন। আমরা আশা করছি সদর্থক আলোচনা হবে।’ এছড়াও জুনিয়র ডাক্তারদের সংযোজন, এবারের বৈঠকও যদি ফলপ্রসূ না হয়, তাহলে মঙ্গলবার থেকে পূর্ব পরিকল্পিত কর্মসূচিই চালিয়ে যাবেন তাঁরা। এমনকি পরবর্তীকালে আন্দোলনের ঝাঁঝ আরও বৃদ্ধির হুঁশিয়ারি দেন জুনিয়র ডাক্তারেরা।
প্রসঙ্গত, শুক্রবার সিনিয়র ডাক্তারদের সঙ্গে বৈঠক শেষে জুনিয়র চিকিৎসকদের ‘ডেডলাইন’ পাওয়ার পরই নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। শনিবার দুপুরে অনশনমঞ্চে পৌঁছে যান রাজ্য প্রশাসনের শীর্ষ আধিকারিকেরা। মুখ্যসচিব মনোজ পন্থের সঙ্গে ছিলেন রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিব নন্দিনী চক্রবর্তী এবং কলকাতা পুলিশের ডিসি সেন্ট্রাল ইন্দিরা মুখোপাধ্যায়। অনশনমঞ্চ থেকেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে ডাক্তারদের কথা বলিয়ে দেন মুখ্যসচিব। চিকিৎসকদের অনশন প্রত্যাহারের অনুরোধ জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘অনশন তুলতে অনুরোধ করছি। আলোচনায় বসো। আমরা আমাদের সাধ্য মতো চেষ্টা করছি। প্রায় সব দাবিই পূরণ হয়েছে। ৩-৪ মাস সময় দাও। হাসপাতালগুলিতে নির্বাচন করাব। দয়া করে অনশন প্রত্যাহার করো। কাজে যোগ দাও।’
মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে ফের আলোচনায় বসতে আগ্রহ দেখান জুনিয়র ডাক্তারেরা। সেই মতো ফের স্থির হয় আন্দোলনের স্থান, সময়। সোমবার বিকেল ৫টায় নবান্নে বৈঠকের সময় দেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই মতোই বৈঠকে যোগ দিতে চলেছেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। তবে আন্দোলনকারীদের ১০ দফা দাবির মধ্যে একটি হল স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগমের অপসারণ। মুখ্যমন্ত্রী জুনিয়র চিকিৎসকদের দাবি পূরণের আশ্বাস দিলেও স্বাস্থ্যসচিবের অপসারণের দাবি মানা হবে না বলেই সাফ জানিয়ে দেন তিনি। তবে রবিবার জিবি বৈঠকের পর ফের একই দাবিতে অনড় জুনিয়র ডাক্তারেরা। তাঁদের কথায়, ‘শিশুসুলভ জেদ থেকে আমরা এসব করছি না। আমরা স্বাস্থ্যসচিবের পদত্যাগ চাইছি। সেটা জেদের জায়গা নয়। আমাদের কাছে তাঁর বিরুদ্ধে প্রমাণ রয়েছে। আমরা সেগুলো জোগাড় করছি। দেব।’
এছাড়াও মুখ্যসচিবকে পাঠানো ইমেলে জুনিয়র ডাক্তারেরা লেখেন, মুখ্যমন্ত্রী এখনও পর্যন্ত তাঁদের দাবিগুলির বিষয়ে অবগত নন। তাই ফের সেই দাবিগুলি তুলে ধরেন তাঁরা। পন্থকে পাঠানো ইমেলে উল্লেখ, ৯ আগস্টের ঘটনায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে যুক্তদের নাম সিবিআইয়ের চার্জশিটে উল্লেখ রয়েছে। নির্যাতিতাকে সুবিচার দিতে রাজ্য সরকার যেন কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা এবং আদালতকে সহযোগিতা করে, এই অনুরোধ জানিয়েছেন তাঁরা।
তাঁদের দাবি, হাসপাতাগুলিতে কেন্দ্রীয়ভাবে ‘রেফারেল’ ব্যবস্থা এবং ফাঁকা বেডের ডিজিটাল নজরদারি, কলেজগুলিতে টাস্ক ফোর্স গঠন, সিসি ক্যামেরা, প্যানিক বাটন বসানো, হেল্পলাইন নম্বর এবং নিরাপত্তার কাজে সিভিকের বদলে মহিলা পুলিশকর্মী নিয়োগ। এই দাবিগুলি পূরণের ক্ষেত্রে কী ভাবছে রাজ্য সরকার? এই বিষয়ে স্পষ্ট তথ্য চান জুনিয়র ডাক্তারেরা। জুনিয়র চিকিৎসকদের আরও বক্তব্য, মেডিক্যাল কলেজগুলিতে যতক্ষণ না ছাত্র সংসদ নির্বাচন হচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত অন্তর্বর্তী কমিটি গঠন করা হোক। তাঁদের দাবি, নির্দেশিকা জারির ২ সপ্তাহের মধ্যে এই কমিটি গঠন করা হোক। পাশাপাশি হাসপাতালগুলিতে শূন্যপদে নিয়োগের ব্যপারে সরকার যাতে দ্রুত পদক্ষেপ করে, সেই আবেদনও জানিয়েছেন জুনিয়র চিকিৎসকেরা।
কিছু দাবি পূরণ হয়েছে, কিছু হয়নি। কিছু দাবি পূরণের কাজ চলছে, আবার কিছু দাবি পূরণের আশ্বাস দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই আবহে সোমবারের বৈঠক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে। এই বৈঠকে কি আদৌ কোনও জট খুলবে? অনশন তুলে পুরনো উদ্যমে কাজ শুরু করবেন জুনিয়র চিকিৎসকেরা? নাকি এবারের বৈঠকও ফলপ্রসূ হবে না? নজর আপাতত সেদিকেই।