কুণাল-নারায়ণের বৈঠকে ‘হতাশ’ জুনিয়র ডাক্তাররা

বরাবরের বামপন্থী চিকিৎসক নারায়ণ বন্দ্যোপাধ্যায় সামাজিক মাধ্যমে সবসময়ই সরব তৃণমূলের সমালোচনায়, মুখ্যমন্ত্রীর নিন্দায়। সর্বদা জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনের পাশে থাকা সেই সিপিএমপন্থী চিকিৎসকই আচমকা দেখা করলেন কুণাল ঘোষের সঙ্গে। যা নিয়ে রাজনৈতিকমহলে তুঙ্গে চর্চা। কুণাল ঘোষের সঙ্গে নারায়ণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাক্ষাতের বিষয়টি মোটেও ভালো চোখে দেখছেন না জুনিয়র চিকিৎসকেরা। তাঁরা ক্ষুণ্ণ, পাশাপাশি দুঃখিতও।

জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনের অন্যতম পরিচিত মুখ আসফাকুল্লা নাইয়া। কুণাল-নারায়ণের সাক্ষাৎ প্রসঙ্গে তাঁর প্রতিক্রিয়া, ‘তিনি কেন কুণাল ঘোষের সঙ্গে দেখা করলেন তা আমরা জানি না। আমরা ক্ষুণ্ণ। এর প্রতিবাদ না করলেও আমরা দুঃখ পেয়েছি।’ তাঁর আরও সংযোজন, ‘মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বা মুখ্যসচিব মনোজ পন্থের সঙ্গে দেখা করে কথা বললে আমাদের সমস্যার সমাধান হলেও হতে পারে। কিন্তু কুণাল ঘোষের সঙ্গে কথা বলে এর কোনও সমাধান হবে বলে আমাদের মনে হয় না।’

অন্যদিকে নারায়ণ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং কুণাল ঘোষের বৈঠক নিয়ে কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে জয়েন্ট প্ল্যাটফর্ম অফ ডক্টরস। প্রকাশ্যে এসেছে বিবৃতিও। বিবৃতিতে উল্লেখ, ‘ডা: নারায়ণ ব্যানার্জি কোনও চিকিৎসক সংগঠনের কোনও প্রতিনিধি কিনা আমরা জানি না। তিনি ব্যক্তির এক্তিয়ারে কারও সঙ্গে দেখা করতেই পারেন, কিন্তু জুনিয়র-সিনিয়র চিকিৎসক ও জনগণের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের দৌত্যের অধিকার তাঁকে কেউ দেয়নি। তিনি এমন একজনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন যিনি প্রতিনিয়ত এই আন্দোলনকে ও তার সঙ্গে যুক্ত চিকিৎসক ও বৃহত্তর জনমণ্ডলীকে অতি কদর্য ভাষায় আক্রমণ করছেন। আমরা মনে করি নারায়ণবাবু আন্দোলনের পরিপন্থী ভূমিকা পালন করেছেন। তাঁর এই আচরণকে আমরা সমর্থন করছি না।’


ঠিক কী কারণে বৈঠক? যে ব্যক্তিকে সবসময় জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনের পাশে থেকে সরকারের কড়া সমালোচনা করতে দেখা গিয়েছে সেই ব্যক্তির আচমকা কুণাল ঘোষের সঙ্গে সাক্ষাতের কী প্রয়োজন পড়ল? বৃহস্পতিবার এই সাক্ষাৎ প্রসঙ্গে তৃণমূল দাবি করে, জুনিয়র ডাক্তাররা যাতে অনশন প্রত্যাহার করতে পারে সেই উপায় খুঁজতেই দু’পক্ষের বৈঠক হয়। যদিও জুনিয়র ডাক্তাররা জানিয়ে দিয়েছেন, এই বৈঠকের বিষয়ে তাঁরা কিছুই জানতেন না। ডাক্তারদের তরফে তিনি কুণাল ঘোষের সঙ্গে দেখা করেননি বলেই জানান জুনিয়র ডাক্তার ফ্রন্টের অন্যতম নেতা আসফাকউল্লা নাইয়া।

বৈঠকে কী আলোচনা হয়েছে সে বিষয়ে মুখ খুলতে চাননি কেউই। তবে বৈঠকের পর সামাজিক মাধ্যমে একটি ভিডিও বার্তা দিয়েছেন নারায়ণ বন্দ্যোপাধ্যায়। বর্তমান পরিস্থিতিকে ‘ডেডলক সিচুয়েশন’ বলে উল্লেখ করে ভিডিও বার্তায় তিনি বলেন, এই পরিস্থিতি নিয়ে শাসকের অবস্থান জানার জন্যই তিনি কুণাল ঘোষের সঙ্গে দেখা করতে যান। তাঁর কথায়, কোর্টের মাধ্যমে সব কিছু সমাধান হয় না। তা সময়সাপেক্ষ। আলোচনার টেবল সবথেকে ভালো জায়গা। আলোচনার টেবলে বসার রাস্তা রয়েছে কি না, তা স্বাস্থ্য দপ্তরের কানে পৌঁছে দেওয়ার জন্যই তিনি কুণাল ঘোষের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যান। এখানেই শেষ নয়, সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করে তিনি লেখেন, ‘জুনিয়রদের ভালোর জন্য যা করার করেছি। আমি প্রথমে মানুষ, তারপর ডাক্তার, তারপর আমার রাজনৈতির সত্ত্বা।’

জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনটা শুরু হয়েছিল আগস্ট মাস থেকে। সেই প্রথম দিন থেকেই আন্দোলনের একেবারে মধ্যমণি হিসেবে দেখা গিয়েছিল নারায়ণ বন্দ্যোপাধ্যায়কে। রাত দখল থেকে মানববন্ধন, বরাবরই জুনিয়র চিকিৎসকদের পক্ষে এবং সরকারের বিপক্ষে সুর চড়িয়েছেন তিনি। একাধারে তিনি যেমন ডাক্তার, তেমনই বামপন্থীও বটে। তাই স্বাভাবিকভাবেই তৃণমূলের কুণাল ঘোষের সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ একাধিক প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। এই নিয়ে জোর চর্চা শুরু হয়েছে বাম শিবিরের অন্দরেও। সব কিছুর মাঝেও নারায়ণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্পষ্ট বার্তা, ‘আন্দোলনের জন্য আন্দোলন নয়। ১০ দফা দাবি ছিনিয়ে আনার জন্যই আন্দোলন।’