• facebook
  • twitter
Wednesday, 22 January, 2025

নাবালিকা ধর্ষণ-খুনে ফাঁসির সাজা ঘোষণা

পুলিশকে অভিনন্দন মমতার

প্রতীকী চিত্র

জয়নগরে নাবালিকাকে ধর্ষণ–খুনের ঘটনায় অভিযুক্ত যুবক মুস্তাকিন সর্দারকে ফাঁসির সাজা শোনালেন বারুইপুরের ফার্স্ট অ্যাডিশনাল ডিস্ট্রিক্ট জাজেস কোর্টের বিচারক সুব্রত চট্টোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবারই তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল। এই নৃশংস ধর্ষণ–খুনের ঘটনার ৬২ দিনের মধ্যে দোষীকে মৃত্যুদণ্ডের সাজা দেওয়ায় এক্স হ্যান্ডলে পোস্ট করে রাজ্য পুলিশকে শুভেচ্ছা জানান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

আগস্ট মাসে আরজি কর কাণ্ডের পর অক্টোবর মাসে জয়নগরের ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছিল। আরজি কর ইস্যুতে রাজ্য তোলপাড় হওয়ার পাশাপাশি জয়নগর কাণ্ডেও সরব হয়েছিল নাগরিক সমাজ। নাবালিকাকে ধর্ষণ–খুনের ঘটনায় অভিযুক্ত যুবকের ৩ মাসের মধ্যে ফাঁসি চেয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই সময়সীমা শেষ হওয়ার আগেই দোষীকে মৃত্যুদণ্ডের নির্দেশ দিল আদালত। এদিন এক্স হ্যান্ডলে মমতা লেখেন, ‘চলতি বছর ৪ অক্টোবর জয়নগরে একটি নাবালিকা মেয়েকে নৃশংসভাবে ধর্ষণ ও হত্যা করা হয়েছিল। ঘটনার মাত্র ৬২ দিনের মধ্যে আজ অভিযুক্তকে বারুইপুরের পকসো আদালত মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে। মাত্র দু’মাসের মধ্যে এমন একটি মামলায় বিচার প্রক্রিয়া শেষ করে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া রাজ্যের ইতিহাসে নজিরবিহীন। এই অসামান্য কৃতিত্বের জন্য আমি রাজ্য পুলিশ এবং তদন্ত প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত সকলকে অভিনন্দন জানাই। মহিলাদের বিরুদ্ধে অপরাধের প্রতি সরকারের জিরো টলারেন্স রয়েছে। ন্যায়বিচার যাতে বিলম্বিত বা অস্বীকৃত না হয় তা নিশ্চিত করতে হবে।’

অপরদিকে সাজা ঘোষণার পর এক্স হ্যান্ডলে রাজ্য পুলিশের তরফে একটি পোস্ট করা হয়। তাতে লেখা হয়, ‘জাস্টিস ফর জয়নগর! এই রায় নজিরবিহীন। নাবালিকাকে ধর্ষণ-খুনের মামলায় ঘটনার মাত্র ৬২ দিনের মধ্যে অভিযুক্তের ফাঁসির আদেশ এর আগে পশ্চিমবঙ্গে কখনও ঘটেনি। এই মামলার তদন্তে আমাদের একটাই উদ্দেশ্য ছিল, যত দ্রুত সম্ভব নির্যাতিতা এবং তার পরিবারকে ন্যায়বিচার দেওয়া। মেয়েটি আর ফিরবে না। কিন্তু যে অভূতপূর্ব দ্রুততায় তাকে এবং তার পরিবারকে আমরা ‘জাস্টিস’ দিতে পেরেছি, দীর্ঘদিন বিচারহীন থাকতে হয়নি, এটুকুই আমাদের সান্ত্বনা, আমাদের প্রাপ্তি।’

উল্লেখ্য, গত ৪ অক্টোবর টিউশন থেকে বাড়ি ফেরার পথে নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিল এক নাবালিকা। পরিবারের সদস্যরা খোঁজাখুজি শুরু করলে বাড়ির কাছের জলাভূমি থেকে তার মৃতদেহ পাওয়া যায়। ওই রাতেই মোস্তাকিন নামে এক যুবককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। প্রাথমিকভাবে খুনের মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু হলেও পরে আদালতের নির্দেশে পকসো ধারা যুক্ত করা হয়। ঘটনার তদন্তে গঠিত হয় সিট। ২৬ দিন পর ৩০ অক্টোবর চার্জশিট পেশ করে সিট। ৫ নভেম্বর থেকে শুরু হয় সাক্ষ্যগ্রহণ। তার ঠিক ১ মাস পর ৬ ডিসেম্বর দোষীকে সাজা শোনাল আদালত।

শুক্রবার সকালে শুনানি শুরুর পর দোষী সাব্যস্ত হওয়া মুস্তাকিনের বক্তব্য শুনতে চান বিচারক। জবাবে সে বলে, ‘আমি এ কাজ করিনি। আমার বাবা অসুস্থ। আমি ছাড়া ওঁদের দেখার কেউ নেই। যদি পারেন, আমাকে মাফ করবেন। অভাবের কারণে আমি কাজ করতাম। বাবা, মাকে দেখার কেউ নেই।’ মুস্তাকিনের আইনজীবী আদালতে বলেন, ‘বাবা অসুস্থ হওয়ার পর নাবালক হওয়া সত্ত্বেও পড়াশোনা ছেড়ে কাজ শুরু করেছিল মুস্তাকিন। ওর বিরুদ্ধে আগে কোনও মামলা নেই। ও জড়িতও নয়। পরিবারের কথা বিবেচনা করবেন। ওর বয়স বিবেচনা করে ওকে শুধরে নেওয়ার সুযোগ দিন।’

অপরদিকে পাল্টা ফাঁসির দাবি জানান সরকারি আইনজীবী। তাঁর কথায়, ‘মেয়েটি বিশ্বাস করে অপরাধীর সাইকেলে উঠেছিল। এরপর মেয়েটিকে নির্জন জায়গায় নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করে খুন করেছে! এটা পূর্বপরিকল্পিত। মুখ টিপে, শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়েছে। মৃত্যু নিশ্চিত করতে শক্ত জমির উপর বার বার মাথা ঠুকে দেওয়া হয়েছে। মেয়েটির শরীরে ৩৮টি আঘাতের চিহ্ন মিলেছে। নৃশংস ঘটনা! একে ক্ষমা করা হলে ভবিষ্যতে আবার ঘটবে এই ধরনের ঘটনা।’ দুই পক্ষের আইনজীবী ও দোষীর বক্তব্য শোনার শুক্রবার ফাঁসির সাজা শোনান বিচারক।