বাংলায় আসছে না ‘জাওয়াদ’

বাংলার উপকূলে ঘূর্ণিঝড় ‘জাওয়াদ’-এর আছড়ে পড়ার কোনও সম্ভাবনা নেই। সুতরাং আতঙ্কেরও কোনও কারণ নেই। শনিবার বিকেলে এমনটাই জানাল আলিপুর আবহাওয়া দফতর। হাওয়া অফিস জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড় ‘জাওয়াদ’ বর্তমানে পশ্চিম মধ্য বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে। আগামী ছ’ঘণ্টায় সেটি উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হবে।

শুক্রবারের পূর্বাভাসে আবহাওয়া দফতর জানিয়েছিল, এর পর উত্তর ও উত্তর-পূর্ব দিকে বাঁক নিয়ে ওড়িশা উপকূল বরাবর সরে আগামী ৫ ডিসেম্বর অর্থাৎ রবিবার, দুপুর-বিকেল নাগাদ পুরী উপকূলের কাছে পৌঁছবে ‘জাওয়াদ’।

শনিবার সন্ধ্যায় দেখা গেল, ওই পথেই এগোচ্ছে সে। হাওয়া অফিস জানায়, রবিবার দুপুরে পুরী পৌঁছে ‘জাওয়াদ’ ধীরে ধীরে শক্তি হারিয়ে অতি গভীর নিম্নচাপে পরিণত হবে। তার পর ধীরে ধীরে বাংলার উপকূলে ঢুকবে।


কিন্তু বাংলায় যখন আসবে, তখন তার শক্তি কতটা থাকবে, তা নিয়ে এখনও অনিশ্চয়তা রয়েছে। এখনও অবধি মৌসম ভবন যা জানিয়েছে, তাতে গভীর নিম্নচাপ হয়েই ‘জাওয়াদ’-এর বঙ্গে ঢোকার সম্ভাবনা প্রবল।

তবে উপকূলবর্তী এলাকায় বাতাসের বেগ থাকবে ঘণ্টায় ৩৫-৪৫ কিলোমিটার। দমকা হাওয়ার সর্বোচ্চ বেগ হতে পারে ৫৫ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা। এমনটাই জানাল আলিপুর আবহাওয়া দফতর।

বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড় ঘণীভূত হওয়ার জেরে কলকাতা সহ দক্ষিণবঙ্গের আকাশ শনিবার সকাল থেকেই মেঘলা। আলিপুর আবহাওয়া দফতরের তরফে জানানো হয়েছে, বিক্ষিপ্ত থেকে হালকা বৃষ্টিও হতে পারে কলকাতায়। শনিবার হাল্কা বৃষ্টি হয়েছে।

উপকূলের জেলাগুলিতে ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। একে তো ‘জাওয়াদ’ আতঙ্কে কাঁটা রাজ্যবাসী। তারপর ভরা কোটালের আশঙ্ক। অমাবস্যার এই ভরা কোটালের প্রভাবে একদিকে যেমন গতি বাড়বে হাওয়ার তেমনই আবার ফুলেফেঁপে উঠবে নদীগুলিও।

ফলে জাওয়াদ আসার আগে আরও একবার প্লাবিত হতে পারে নদী সংলগ্ন গ্রামগুলি। ঘূর্ণিঝড় যশ বা ইয়াসের সময় ভরা কোটালের প্রভাবে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়েছিল বাংলা ও ওড়িশার বিস্তীর্ণ উপকূল অঞ্চল। সেই ক্ষত এখনও তাজা।

এখনও পর্যন্ত একাধিক নদীবাঁধ মেরামত করা যায়নি। আতঙ্ক এখনও কাটিয়ে উঠতে পারেনি উপকুলের বাসিন্দারা। এর মধ্যেই ধেয়ে আসছে ‘জাওয়াদ’। ফের সঙ্গী হয়েছ সেই ভরা কোটাল। তিথি বলছে, শুক্র ও শনিবার অমাবস্যা।

ফলে দু’দিনই চলবে ভরা কোটাল। যার জেরে নদীতে ফের জলোচ্ছ্বাসও হতে পারে। হাওয়ার গতিবেগ বেড়ে হতে পারে ঘণ্টায় ৮০ কিলোমিটার। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, হাওয়া পুবালি বা দখিলা-পুবালি হলে বিপদ আরও বাড়তে পারে। সবমিলিয়ে জোড়া বিপদের মোকাবিলা করতে প্রস্তুত হচ্ছে প্রশাসন।

উপকূলবর্তী এলাকায় মাইকিং করে সতর্ক করা হয়েছে বাসিন্দাদের চেষ্টা করা হচ্ছে দ্রুত প্রাথমিকভাবে নদীবাঁধ মেরামতের। প্রসঙ্গত, ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদে’র প্রভাবে বাংলায় ঝড়বৃষ্টির সম্ভাবনা। ইতিমধ্যে কলকাতা-সহ রাজ্যের আকাশ মেঘলা। বিভিন্ন জেলায় বৃষ্টিও শুরু হয়ে গিয়েছে।

শনিবার পূর্ব এবং পশ্চিম মেদিনীপুরে কমলা সতর্কতা জারি হয়েছে। হলুদ সতর্কতা জারি হয়েছে হাওড়া, হুগলি, উত্তর এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনা এবং ঝাড়গ্রামে। এছাড়াও কলকাতায় চলবে বৃষ্টি।

ঘণ্টায় ৩০ থেকে ৪০ কিলোমিটার বেগে বইতে পারে হাওয়া রবিবার কলকাতা-সহ হাওড়া, হুগলি, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পূর্ব এবং পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রামে ভারী থেকে অতি বৃষ্টির কমলা সতর্কতা জারি হয়েছে। পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, নদিয়া, মুর্শিদাবাদ, পূর্ব এবং পশ্চিম বর্ধমান, বীরভূমে হলুদ সতর্কতা জারি।

এদিন ৪০ থেকে ৫০ কিলোমিটার বেগে হাওয়া বইতে পারে। সোমবার ৩০ থেকে ৪০ কিলোমিটার বেগে বইতে পারে হাওয়া। এছাড়াও উত্তর এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনা, মুর্শিদাবাদে ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস। জারি হলুদ সতর্কতা।