মন্দারমণির বিলাস বহুল হোটেলে তৃণমূল নেতার রহস্য মৃত্যুর ঘটনায় উঠে আসছে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য। মৃত আবুল আমডাঙা ব্লকের আধাটা গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূলের উপপ্রধান সুরাইয়া পারভিনের স্বামী। মৃত্যুর পিছনে এক প্রতিবেশী যুবক আতাউর ও আবুলের এক বান্ধবী তনুশ্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে। ইতিমধ্যে তাঁদের গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। রবিবার তাঁদের কাঁথি আদালতে তোলা হয়। এরপর দুপুর সাড়ে তিনটে নাগাদ ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে কাঁথির মর্গে আবুলের মৃত দেহের ময়নাতদন্ত করা হয়। স্ত্রীর অভিযোগ, আবুলকে খুনের জন্য বান্ধবী তনুশ্রীকে টোপ হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছিল। যা নিয়ে যথেষ্ট চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে রাজনৈতিক মহলে।
এ প্রসঙ্গে জানা গিয়েছে, আবুলের খুবই ঘনিষ্ঠ বান্ধবী তনুশ্রী মুখোপাধ্যায়। তাঁর বাড়ি ব্যারাকপুরে। তিনি যেখানে যান অবিবাহিতা তনুশ্রীকে সঙ্গে নিয়ে যান। তাঁর সঙ্গে প্রায় ছয় বছর ধরে সম্পর্ক রয়েছে আবুলের। এদিনও তাঁকে সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলেন আবুল। এমনকি মন্দারমণি হোটেলে ওঠার সময় রেজিস্ট্রার বুকে তাঁকে স্ত্রী হিসেবে পরিচয় দেন। তাঁদের সঙ্গে ছিলেন আবুলের প্রতিবেশী ও ব্যবসায়িক পার্টনার আতাউর মণ্ডল এবং আরও এক তরুণী। এই দুই তরুণীর মধ্যে একজন অসুস্থ হয়ে পড়েন। তখন তাঁকে বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়। ফলে তনুশ্রী, আবুল ও আতাউর ছিলেন মন্দারমণির হোটেলে। শনিবার ভোররাতে আবুলের মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। তাঁর বান্ধবী এদিন ভোরবেলা বাথরুমে যান। সেখান থেকে ঘরে ফিরেই দেখেন আবুলের দেহ ফ্যানের সঙ্গে ঝুলছে। তখন ওই তরুণীই পুলিশকে খবর দেন। পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে দেহ উদ্ধার করে এবং ময়নাতদন্তে পাঠায়।
এদিকে আবুলের খুনের অভিযোগ পাওয়ার পর, শনিবার আবুলের বান্ধবী এবং আতাউরকে আটক করে পুলিশ। শুরু হয় জেরা। জেরা করা হয় হোটেলের কর্মীদেরও। হোটেলের রেজিস্ট্রার বুকও খতিয়ে দেখা হয়। কিন্তু আতাউর ও তনুশ্রীর বয়ানে মেলে একাধিক অসঙ্গতি। এরপর রবিবার সকালে পুলিশ তাঁদের গ্রেপ্তার করে আদালতে পেশ করে। মৃত তৃণমূল নেতার স্ত্রী ও পঞ্চায়েতের উপপ্রধান সুরাইয়া পারভিন অভিযোগ করেন, প্রতিবেশী আতাউরই আবুলকে খুন করেছে। কারণ হিসেবে তিনি দাবি করেন, আবুলের সঙ্গে আতাউরের ব্যবসায়িক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। সম্প্রতি দুজনের মধ্যে একটি দামি জমি কেনারও চুক্তি হয়েছিল। আবুলকে খুনের জন্য আতাউর বান্ধবী তনুশ্রীকে টোপ হিসেবে ব্যবহার করেছে।
যদিও এই মৃত্যুর পিছনে কোনও রাজনৈতিক রং দেখছেন না আমডাঙা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি আনিসুর রহমান। তিনি বলেন, সক্রিয় কর্মীর মৃত্যুতে দলের বড় ক্ষতি হয়ে গিয়েছে। তবে তাঁর মৃত্যুর জন্য কোনও রাজনৈতিক বিষয় দায়ী নয়, এমনটাই মনে করছে আমডাঙার তৃণমূল নেতৃত্ব। অন্যদিকে সূত্রের দাবি, তৃণমূল নেতার মৃত্যুর নেপথ্যে সম্পর্কের জটিলতা ছিল। তৃণমূল নেতার বান্ধবী বেড়াতে এসে অন্য এক পুরুষের সঙ্গে ঘুরতে গিয়েছিলেন। এই বিষয়টি নিয়ে দুজনের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি ঘটে। তারপরেই হোটেলের ঘর থেকে যুবকের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়।
ফলে আবুল খুনের পিছনে বান্ধবীর সঙ্গে সম্পর্কের জটিলতা, নাকি আতাউরের সঙ্গে ব্যবসায়িক ঝামেলা, রহস্য ক্রমশ ঘনীভূত হচ্ছে।